fbpx
সংবাদ শিরোনাম

শিক্ষক বহিষ্কারের দাবিতে উত্তাল নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ

                                           
মুতাসিম বিল্লাহ, নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
প্রকাশ : বুধবার, ১৩ মার্চ, ২০২৪
শিক্ষক বহিষ্কারের দাবিতে উত্তাল নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ

ছাত্রীকে যৌন হয়রানি ও নানাভাবে হেনস্থার অভিযোগে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক সাজন সাহা ও বিভাগীয় প্রধান রেজোয়ান আহমেদ শুভ্রের স্থায়ী বহিস্কারের দাবীতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে টায়ার পুড়িয়ে অবরোধ করেছে শিক্ষার্থীরা।

আজ (১৩ মার্চ) দুপুরের দিকে প্রশাসনিক ভবনে তালা দিয়ে অবরুদ্ধ করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন, প্রক্টর কার্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয়স্থ সোনালী ব্যাংকের শাখায় এবং বিভিন্ন একাডেমিক ভবনেও তালা দেয় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. সৌমিত্র শেখর আগামীকাল (১৪ মার্চ,২০২৪) জরুরি সিন্ডিকেট মিটিং আহ্বান করলে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন স্থগিত করেন।

জানা যায়, বুধবার (১৩ মার্চ) জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. মো. হুমায়ুন কবীর স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে শিক্ষক সাজন সাহা ও বিভাগীয় প্রধান রেজোয়ান আহমেদ শুভ্রকে ছাত্রী হেনস্থার ঘটনায় অনির্দিষ্টকালের জন্য বধ্যতামূলক ছুটি প্রদান করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এছাড়া রেজোয়ান আহমেদ শুভ্রকে বিভাগীয় প্রধান থেকেও অপসারণ করা হয়। স্থায়ী বহিষ্কার না করে শিক্ষকদ্বয়কে অনির্দিষ্টকালের ছুটি প্রদানের উক্ত অফিস আদেশের পর বিক্ষোভ শুরু করেন ভুক্তভোগীর সহপাঠী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

অফিস আদেশে বলা হয়েছে, মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০০৬ এর ১১(১০) ধারায় অধিকারপ্রাপ্ত ক্ষমতাবলে মাননীয় উপাচার্য কর্তৃক পরবর্তী সিন্ডিকেটের অনুমোদন সাপেক্ষে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মধনব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক রেজুয়ান আহমেদ শুভ্র এবং একই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাজন সাহাকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ব্যধ্যতামূলক ছুটি প্রদান করা হলো। একইসাথে জনাব রেজুয়ান আহমেদ শুভকে বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হলো এবং মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর বিভাগীয় প্রধানের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করবেন। এ আদেশ অদ্য ১৩/০৩/২০২৪ তারিখ পূর্বাহ্ন হতে কার্যকর হবে।

এ অফিস আদেশে ন্যায্য বিচার পায়নি বলে জানিয়েছেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। ভুক্তভোগীর সহপাঠী, নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ফারাবি বলেন, আমরা ন্যায্য বিচার পাইনি। প্রশাসনের প্রতি আমাদের আস্থার প্রতিদান পাই নি। রেজোয়ান শুভ্র ও সাজন সাহাকে স্থায়ী বহিষ্কার না করা হলে আমাদের আন্দোলন চলমান থাকবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. সৌমিত্র শেখর বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের বলেন, আমি তোমাদের শিক্ষক, তোমাদের উপাচার্য। আমি তোমাদের প্রতিনিধি। আগামীকাল আমরা জরুরি সিন্ডিকেট ডেকেছি। সেখানে আমি শিক্ষার্থীদের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করবো। তোমরা আমাকে জানিয়েছো, বলেছো। আমি আগামীকাল সিন্ডিকেটে এগুলো তুলে ধরবো। তোমরা যা চাচ্ছো তাই হবে। আমার উপর আস্থা রাখো।

উল্লেখ্য, গত ৪ মার্চ মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাজন সাহার বিরুদ্ধে একই বিভাগের এক ছাত্রীসহ একাধিক নারী শিক্ষার্থীকে অনৈতিক প্রস্তাব দেওয়ার স্ক্রিনশট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর থেকেই ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা।মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাজন সাহার বিরুদ্ধে মেসেজের মাধ্যমে উত্ত্যক্ত ও বিভিন্নভাবে হয়রানি করার অভিযোগ তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সৈয়দা সানজানা আহসান ছোঁয়া।

ভুক্তভোগী সৈয়দা সানজানা আহসান ছোঁয়া শিক্ষক সাজন সাহার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলেন, সাজন সাহা ২০১৯ সাল থেকেই তাকে বিভিন্ন ধরনের অশোভন মেসেজ দিতেন, মধ্যরাতে চা খেতে ডাকতেন। এছাড়াও নাম্বার টেম্পারিং এর অভিযোগ তোলেন ভুক্তভোগী। বিভাগটির বিভাগীয় প্রধান রেজওয়ান আহমেদ শুভ্রের নামেও অভিযোগ তুলে বলেন, রেজওয়ান আহমেদ শুভ্র ছোঁয়াকে ভালো রেজাল্টের লোভ দেখিয়ে বিভাগের অপর দুই শিক্ষক রিমন সরকার ও ফাহমিদা সুলতানার নামে মিথ্যা অভিযোগ দিতে বলেন। বিষয়টি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে প্রতিবাদ ও অভিযুক্ত শিক্ষকের স্থায়ী বহিস্কার দাবী জানায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এই পরিপ্রেক্ষিতে টানা ১৩ তম দিনে গড়ায় এই আন্দোলন। আজ (১৩ মার্চ) বিকেলে অভিযুক্ত শিক্ষকদ্বয়ের কুশপুত্তলিকা দাহ করে শিক্ষার্থীরা।

সংবাদটি শেয়ার করুন


এই বিভাগ থেকে পড়ুন