মিজোরামের জীবন্ত ভূত
চন্দন চ্যাটার্জি
সমীর বাবুর কথা তো আপনাদের আগেই বলেছি, সমীর কুমার দেবনাথ, সম্প্রতি আমাদের পাড়ায় ফ্ল্যাট কিনে বসবাস করছেন । বয়স আনুমানিক ৬৫ বছর হবে, কর্মজীবনের ইতি এখন শুধুই অবসর ।
তিনি তার কর্মজীবনে নানা কোম্পানিতে কাজ করেছেন, তাই নানান দেশ ঘুরেছেন । তার অভিজ্ঞতার ঝুলি পরিপূর্ণ । আমার বাবার সঙ্গে তাঁর খুব বন্ধুত্ব, কারণ দুজনেই সমবয়স্ক, সমমনস্ক । সকালে মর্নিং ওয়াক আর সন্ধ্যায় সান্ধ ভ্রমণ এটাই ছিল দু’জনের রোজনামচা । ভালো কিছু রান্না হলে মা সমীর কাকুকে বাড়িতে ডেকে খাওয়াতেন ।
তখন শ্রাবণ মাস, সান্ধ্য ভ্রমণের পর সমীর কাকু আমাদের বাড়িতে এসে বসলেন চা খাবেন বলে । আজ রবিবার তাই মধ্যাহ্ন ভোজন ভালোই হয়েছিল তাতে ভাতঘুমটা একটু বেশিক্ষণ হয়েছিল, অতএব সান্ধ্য ভ্রমণ শেষ করে আমাদের বাড়ি আসতে তাদের প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেল । বাইরে বসার ঘরে দুই বৃদ্ধের আড্ডা চলছে, এমন সময় বৃষ্টি শুরু হল । শ্রাবণের জলভরা মেঘ, বৃষ্টি কি আর সহজে থামে । আমাদের এই হাওড়া মন্দিরতলা এলাকায় আরেকটা সমস্যা হল জোর বৃষ্টি বা ঝড় শুরু হলেই লোডশেডিং । কাজেই পাড়াময় এখন অন্ধকার, ঘরে ঘরে কেরোসিনের বাতি জ্বলছে । যখনকার কথা বলছি তখন এই এলাকায় জেনারেটরও বসে নেই এবং ব্যাটারি চালিত বিজলী বাতি আসেনি । হয় সরকারি বিদ্যুৎ অথবা কেরোসিনের বাতি এই দুটো ওপরই মানুষকে ভরসা করতে হতো । ইতিমধ্যে মুড়ি ও তেলে ভাজা এসে গেছে, বর্ষার এটাই টাইম পাস-এর উপযুক্ত মেনু । আমার ভাইপো হঠাৎ এসে বললো,” ছোট দাদু একটা ভূতের গল্প বলো না । তুমি তো অনেক জায়গায় গেছো তার থেকে একটা সত্যি ভূতের গল্প বলো”
বাবা বললেন, ” হ্যাঁ সমীর শুরু করো, এতো বৃষ্টিতে তো এখন আর তুমি বাড়ি যেতে পারবেনা, বৃষ্টি কমলে আমার ছোট ছেলে বাইকে করে তোমাকে বাড়ি পৌঁছে দেবে । কথাটি সমীর কাকুর মনে ধরল চায়ের কাপে শেষ চুমুক দিয়ে তিনি শুরু করলেন ।
প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে যদি কোনো অ্যাক্সিডেন্ট হয় তবে আমার মনে হয় প্রতিবছর সেই সময়, সেই স্থানে, সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয় । কেন আমি এই কথা বলছি কারন আমি নিজে এই ঘটনার সাক্ষী । তখন আমি দিল্লির একটা রোড কনস্ট্রাকশন কোম্পানিতে কাজ করি, পোস্টিং হয় মিজোরামের একটা প্রত্যন্ত গ্রামে ।
মিজোরাম সম্বন্ধে একটু ধারনা দিয়ে দি । পুরো রাজ্যটা পাহাড়ি রাজ্য, কিন্তু শক্ত পাথরের নয়, স্লেট পাথরের, আমরা ছোটবেলায় যে স্লেটে চখ দিয়ে লিখতাম সেই পাথরের । আমার ভাইপো বিল্টু কিছু বলতে যাচ্ছিল বাবা তাকে হাতের ইশারা করে থামিয়ে দিলেন এবং আস্তে আস্তে বললে স্লেট পেন্সিলের কথা তোকে পরে বুঝাবো, এখন শোন । সে শান্ত হয়ে শুনতে লাগল । এই পাথরের পাহাড় মোটেই মজবুত নয়, একবার পাহাড়ে ধস নামলেই সোজা নিচের খাদে । বাঁচার আশা প্রায় নেই । এখানে পাহাড়ে নানান গাছ আপনা থেকেই জন্মায় । বাঁশ মূলত বেশি দেখা যায়, এছাড়া কলা গাছ, কাঁঠাল গাছ, ইত্যাদি আপনা থেকে জন্মায় । ড্রাগন ফুট, আনারস, কমলালেবু, চেরি ইত্যাদি ফলের চাষ হয় । আমাদের এখানে যেমন মেঘ দেখতে হলে আমরা আকাশের দিকে তাকাই……..