যেহেতু জবা ১০°সেলসিয়াসের নিচের তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে না, তাই নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে জবা গাছকে গ্রীনহাউসে রাখা হয়। জবা গাছের বিভিন্ন রকমের সংকর প্রজাতি আছে, যাদের ফুলের রঙ সাদা, হলুদ,কমলা, ইত্যাদি হতে পারে।বৈজ্ঞানিক ক্যারলাস লিনেয়াস জবার নাম দেন হিবিস্কাস রোসা-সিনেন্সিস।
লাতিন শব্দ ‘রোসা সিনেন্সিস’-এর অর্থ ‘চীন দেশের গোলাপ’, যদিও জবার সঙ্গে গোলাপের সম্পর্ক নেই। চীনদেশে এই গাছটি ‘zhujin নামে পরিচিত। ভারতীয় উপমহাদেশে জবা গাছ বিভিন্ন ভাষায় বিভিন্ন নামে পরিচিত, যেমন বাংলায় জবা, তামিলে (সেম্বারুথি), হিন্দিতে (জবা কুসুম), মালয়লমে (সেম্পারাত্তি), ইত্যাদি।চোখ ওঠা রোগ দূর করতে এর পাতার প্রলেপ দিলে ভাল উপকার পাওয়া যায়।
সর্দি ও কাশিতে জবা ফুল বেটে রস করে জলে মিশিয়ে খেলে রুগী সুস্থ হয়ে যাবে।
চুলের বৃদ্ধির জন্যপাতার রস তেলের সাথে মিশিয়ে চুলে লাগাতে হবে।বিভিন্ন প্রকারের জবা ফুলে নানা রকমের ফাইটো-রাসায়নিক (বায়ো-সক্রিয় যৌগগুলি, যা ওষুধে ব্যবহৃত হয়) থাকে। জবা ফুলের বিভিন্ন অংশ থেকে নিষ্কাশিত অপরিহার্য তেলের অনেক গুণ এবং ব্যবহার আছে।
চুলের উপকার: যারা দীর্ঘ, উজ্জ্বল এবং স্বাস্থ্যকর চুল কামনা করেন, তাদের জন্য জবা হল চুলের যত্নের আদর্শ সম্পূরক। এটি তেল, শ্যাম্পু, কন্ডিশনার অথবা মাস্ক হিসাবে ব্যবহার হয় এবং মাথার ত্বক শীতল হয় এবং চুলের শক্তি এবং দীপ্তি বৃদ্ধি পায়।
রক্তচাপ হ্রাস করে: জবার প্রদাহ-বিরোধী এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ধর্ম থাকায় রক্তচাপ হ্রাস করে বলে প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে কিছু পলিফেনল আছে, ক্লিনিক্যাল পরীক্ষায় যাদের রক্তচাপ হ্রাস করার গুণ দেখা গিয়েছে।
ক্ষত নিরাময়ে সাহায্য করে: জবা ফুলের নির্যাস ক্ষত নিরাময় করে এবং চামড়ার ভাঙার বল বৃদ্ধি করে। এটি ক্ষতের স্থানে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ রোধ করে।
স্থূলতা প্রতিরোধ করে: জবা বিপাক প্রক্রিয়াকে উদ্দীপিত করে, ফলে স্থূলতা এবং অতিরিক্ত ওজনের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে। এই ফুলে বিভিন্ন সক্রিয় যৌগগুলি ফ্রি র্যাডিকেল সংক্রান্ত ক্ষতির প্রতিরোধ করে এবং অক্সিডেটিভ চাপ কমায়, যা স্থূলতার একটি অন্যতম কারণ।
উপ-বিষ বিতারণ করে: জবা একটি মূত্রবর্ধক এবং এর উপ-বিষ (টক্সিন) বিতারণ ক্ষমতা আছে। ফলে প্রস্রাবের সাথে উপ-বিষ যৌগগুলি এবং অন্যান্য রাসায়নিকগুলি দেহ থেকে বেড়িয়ে যায়।
মধুমেহ বিরোধী ধর্ম: গবেষণাগুলি দেখাচ্ছে যে জবার চা ইনসুলিন-প্রস্তুতকারী কোষগুলিকে ইতিবাচক ভাবে প্রভাবিত করে।। ফলে ইনসুলিনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। মধুমেহ রোগীদের ক্ষেত্রে জবা ইনসুলিন-রেজিস্ট্যান্স এবং অক্সিডেটিভ চাপ হ্রাস করে। ফলে রক্তের চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রিত থাকে।ফুলের রং -লাল ,নীল ,হলুদ ,সাদা ,গোলাপি প্রভৃতি।
জবার বীজকোষ-এর আকৃতি গােল এবং তার মধ্যে বহু বীজ থাকে। সারা বছরই গাছে। ফুল ফোটে এবং ফল ধরে।।
বাংলায় এর নাম— জবা, সংস্কৃতে বলে—জপা/জবাপুষ্প, হিন্দীতে বলে জাসুম/বােড়হুল।
১। চুলের বৃদ্ধির জন্য :- জবা গাছের টাটকা পাতার রস এবং জলপাই-এর তেল মিশিয়ে ভালাে ভাবে ফোটাতে হবে। রস তেলের মধ্যে মিশে কেবল যখন তেলটা থাকবে তখন উনুন থেকে পাত্রটি নামিয়ে ঠাণ্ডা হলে কাচের শিশিতে রাখতে হবে। এই তেল প্রতিদিন চুলে মাখলে চুল বড় হবে এবং চুল সহজে পাকে না।।
২। পাকা চুল কালাে করতে :- গরুর দুধ ৪ লিটার, জবাফুল বেটে তার রস, যষ্টিমধুর। কল্ক ৯০ গ্রাম একটি স্টিলের পাত্রে ১ লিটার তেলের সঙ্গে মিশিয়ে নিতে হবে। তারপর আগুনে ফোটাতে হয়। দুধ ও ফুলের রস মিশে গেলে পাত্রটি উনুন থেকে নামিয়ে ঠাণ্ডা করতে হবে। তারপর কাঁচের শিশিতে ভরে রাখতে হবে। এই তেল প্রতিদিন চুলে। মাখলে পাকা চুল ধীরে ধীরে কালাে হয়ে ওঠে।
৩|অতিরিক্ত ঋতুস্রাবে :- জবাফুল ৫/৭টি সামান্য গাওয়া ঘিয়ে ভেজে খেলে— অতিরিক্ত ঋতুস্রাব বন্ধ হবে। এছাড়া পঞ্চমুখী জবার দু’টি কুঁড়ি ঢেকি ছাঁটা আতপ চাল ধােয়া জলে বেটে সেই ওষুধ খেলে ঋতুস্রাব স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে।
৪। অনিয়মিত স্রাবে :- মেয়েদের মাসিক শুরু হলেও এক থেকে দেড়দিনের মধ্যে। বন্ধ হয়ে যায়। আবার অনেক সময় মাসিক-এর দিন চলে গেলে ঠিকমতাে হয় না। এই অবস্থায় পঞ্চমুখী জবার কুঁড়ি, দারুচিনি ৫০০ মিলিগ্রাম একসঙ্গে শিলে ভালাে করে। মিহি করে বাটতে হয়। তারপর ঐ ওষুধ সরবতের মতাে দিনে একবার নিয়মিত খেলেই। মেয়েদের স্রাব স্বাভাবিকভাবে হতে থাকবে।