fbpx

অটোফেজি ও রোযার রহস্য

                                           
মোঃ মাইনুল ইসলাম
প্রকাশ : রবিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২১
অটোফেজি ও রোযার রহস্য

মুসলিমরা রোজা রাখলে তাকে বলা হয় সিয়াম(রোযা)। হিন্দু বা বৌদ্ধরা না খেয়ে থাকলে তাকে বলা হয় উপবাস। খ্রিস্টানরা না খেয়ে থাকলে তাকে বলা হয় ফাস্টিং। বিপ্লবীরা না খেয়ে থাকলে তাকে বলা হয় অনশন। আর মেডিক্যাল সাইন্সে উপবাস করলে তাকে বলা হয় অটোফেজি।

খুব বেশি দিন হয়নি, মেডিক্যাল সাইন্স অটোফেজি’র সাথে পরিচিত হয়েছে । ২০১৬ সালে নোবেল কমিটি জাপানের ডাক্তার ওশিনরি ওসুমি-কে অটোফেজি আবিষ্কারের জন্যে পুরষ্কার দেন ।

এরপর থেকে আধুনিক মানুষেরা ব্যাপকভাবে উপবাস করতে শুরু করেন। এবার জানা যাক, ‘ Autophagy ‘ কি? Autophagy শব্দটি একটি গ্রিক শব্দ যার অর্থ আত্মভক্ষণ। অর্থ্যাৎ নিজে নিজেকে খাওয়া।

কি খুব অবাক লাগছে তাই তো? না, মেডিক্যাল সাইন্স নিজের মাংস নিজে খেতে বলে না ।

শরীরের কোষগুলো বাইরে থেকে কোনো খাবার না পেয়ে নিজেই যখন নিজের অসুস্থ কোষগুলো খেতে শুরু করে , তখন মেডিক্যাল সাইন্সের ভাষায় তাকেই অটোফেজি বলা হয় ।

আসুন আরেকটু সহজভাবে বলি ?

আমাদের ঘরে যেমন ডাস্টবিন থাকে,অথবা আমাদের কম্পিউটারে যেমন রিসাইকেল বিন থাকে,তেমনি আমাদের শরীরের প্রতিটি কোষের মাঝেও একটি করে ডাস্টবিন আছে।

সারা বছর শরীরের কোষগুলো খুব ব্যস্ত থাকার কারণে,ডাস্টবিন পরিষ্কার করার সময় পায় না। ফলে,কোষগুলোতে অনেক আবর্জনা ও ময়লা জমে যায়।

শরীরের কোষগুলো যদি নিয়মিত তাদের ডাস্টবিন পরিষ্কার করতে না পারে,তাহলে কোষগুলো একসময় নিষ্ক্রিয় হয়ে শরীরে বিভিন্ন প্রকারের রোগের উৎপন্ন করে। ক্যান্সার বা ডায়াবেটিসের মতন অনেক বড় বড় রোগের

শুরু হয় এখান থেকেই। মানুষ যখন খালি পেটে থাকে, তখন শরীরের কোষগুলো অনেকটা বেকার হয়ে পড়ে। কিন্তু তারা তো আর আমাদের মত অলস হয়ে বসে থাকে না।

তাই প্রতিটি কোষ তার ভিতরের আবর্জনা ও ময়লাগুলো পরিষ্কার করতে শুরু করে দেয়। কোষগুলোর আমাদের মতন আবর্জনা ফেলার জায়গা নেই বলে তারা নিজের আবর্জনা নিজেই খেয়ে ফেলে।মেডিক্যাল সাইন্সে এই পদ্ধতিকে বলা হয় অটোফেজি।

শুধুমাত্র এই জিনিসটা আবিষ্কার করেই জাপানের ওশিনরি ওসুমি (Yoshinori Ohsumi) ২০১৬ সালে নোবেল পুরস্কারটা নিয়ে গেলেন।

রোজা রাখলে কি অটোফেজি সক্রিয় হয়?

এবার আসা যাক রোজা করলে কী হয়। দেহের জন্যে এটাকে একটা বিশেষ অবস্থা বলা যেতে পারে, কারণ একটা নির্দিষ্ট সময় ধরে বাইরে থেকে দেহে কোনো খাবার বা পানীয় আসছে না।

দেহের যেসব অবস্থায় অটোফেজি সক্রিয় হয়ে ওঠে,এটা তার একটা। অটোফেজির কারণেই সেসময় দেহ সচল থাকে।

কারণ একটু আগেই যেমনটা বলা হলো- কোষের আবর্জনা,জীবাণু ইত্যাদিকে ভেঙে ফেলে রিসাইক্লিংয়ের মধ্য দিয়ে অটোফেজি প্রক্রিয়াই তখন দেহের জন্যে প্রয়োজনীয় শক্তি উৎপাদন করে। অর্থাৎ বাইরের রসদের ওপর নির্ভর না করে দেহ তখন নিজেই নিজের রসদ গ্রহণ করে।

রোযা রাখলে মানুষের দেহে অটোফেজি চালু হয়।

চলুন এবার জেনে নেই অটোফেজির কিছু উপকারিতা :

১| দেহের সেল পরিস্কার হয়।

২| ক্যান্সার সেল ধ্বংস হয়।

৩| পাকস্থলীর প্রদাহ সেরে যায়।

৪| ব্রেইনের কার্যকরীতা বাড়ে।

৫| শরীর নিজে নিজেই সেরে যায় (Autophazy)

৬| ডায়াবেটিস ভালো হয়।

৭| বার্ধক্য রোধ করা যায়।

৮| স্থূলতা দূর হয়।

৯| দীর্ঘ জীবন লাভ করা যায়।

সংবাদটি শেয়ার করুন


এই বিভাগ থেকে পড়ুন