ইরিনা রাহজাবিন
পত্রিকার পাতায় আর টিভির খবরের শিরোনাম এখন রাশিয়া – ইউক্রেন সংকট দিয়ে পূর্ণ।
কোন বিধি নিষেধ , পশ্চিমা হুশিয়ারি রাশিয়া কে থামাতে পারেনি ইউক্রেন এর অভ্যন্তরে সেনা প্রবেশ করিয়ে আক্রমণ করা থেকে।
সারা পৃথিবীতে যখন ৩ য় বিশ্ব যুদ্ধের আগাম সংকেত বাজছে , মানুষের মনে প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক রাশিয়া কেন এত মরিয়া হয়ে উঠছে।
অনেকেই জেনে থাকেন ,১৯১৭ সালের রুশ বিপ্লব এর কথা। যেটি বলশেভিক বিপ্লব নামেও পরিচিত।
তখনকার ক্ষমতাসীন জার তন্ত্রের বিরুদ্ধে ভ্লাদিমির ইলিচ লেলিন এর নেতৃত্বে শ্রমিক গোষ্ঠী এ বিপ্লবে অংশ নেয়।
মাত্র ১০ দিন স্থায়ী এ বিপ্লবের মাধ্যম ক্ষমতা চলে যায় সমাজতন্ত্র বাদী দের হাতে। গঠিত হয় USSR ।
বর্তমান ইউক্রেন ও রাশিয়ার কথাই যদি বলি তারা ছিল যুগ যুগ ধরে রাজতন্ত্রের অধীন, সহোদর ন্যায়। কিন্তু
ইউক্রেন নিজস্ব জাতীয়তাবাদ এ বিশ্বাসী হয়ে চেষ্টা করেছে আলাদা দেশ গঠনের।
একে অন্যের ওপর আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টায় রুশ বিপ্লবের পর পর ই শুরু হয় গৃহযুদ্ধ। । সেটি চলেছিল ১৯২২ পর্যন্ত।সোভিয়েত ইউনিয়নের অধীনে থাকলেও বারবার ইউক্রেন আলাদা হতে চেয়েছিল, দেশের জনগন আন্দোলন করেছে। রুশরা ইউক্রেন দের নিজেদের ছোট ভাই হিসেবে ভাবে এবং ইউক্রেন এ অনেক রুশপন্থী জনগোষ্ঠী ছিল।
১৯৯১ সালে যখন সোভিয়েত ইউনিয়নে ভাঙন শুরু হয় ১৫ টি আলাদা রাষ্ট্রের জন্ম হয় তার ভেতর চির বিপ্লবী ইউক্রেন ও ছিল।
কিন্তু কেন রাশিয়া ২০২২সালে এসেও স্বাধীন ইউক্রেন কে দখলে নিতে চাইছে।
এর পেছনে অনেকগুলি কারণ রয়েছে।
সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙনের আগে ১৯৯০ সালে নবগঠিত রুশ ফেডারেশন কে ন্যাটো আশ্বাস দিয়েছিল পূর্ব ইউরোপের দিকে তারা আর সম্প্রসারিত করবে না।( বলা হয়ে থাকে।)
মিখাইল গর্বাচেভ এর আমলে ইউক্রেন যখন স্বাধীন হয় তখন দেশটিতে সর্বোচ্চ সংখ্যক পারমাণবিক ওভারহেড মজুদ ছিল। যা রাশিয়ার কাছে হস্তান্তর করে ইউক্রেন।
কিন্তু ন্যাটো তার কথা রাখেনি ধীরে ধীরে তার এলাকা বৃদ্ধি পেতে থাকে, ইউরোপের একের পর এক দেশ ন্যাটো ভুক্ত হতে থাকে। যা রাশিয়ার নিকট সুখকর ছিল না।
২০১৪ সালে ক্রাইমিয়া দখল করে নেয় রাশিয়া।
সে সময় ও ইউক্রেন দখলের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল।
বর্তমানে ইউক্রেন সরকারের ন্যাটো তে যোগ দেয়ার সম্ভাবনা আগের চেয়ে অনেক বেশি তীব্র হওয়ায় রাশিয়া ও তাদের সৈনিক সংখ্যা বাড়াচ্ছিল। এমন কিছু হওয়ার সম্ভাবনা অনেক আগেই আমেরিকা করে রেখেছিল।
ভ্লাদিমির পুতিন বরাবর ই রাশিয়াকে পূর্বের মত শক্তিশালী দেখতে চান। ন্যাটোর খাপছাড়া ভাবে বেড়ে ওঠা রাশিয়ার মত দেশের পক্ষে কোনদিনই মানা সম্ভব না।যেখানে স্নায়ু যুদ্ধের সময় দুটি দেশ চেষ্টা করেছে আধিপত্য বিস্তার করতে।
মহাশক্তিশালী দুটি দেশের ভেতরে পড়ে আখেরে ইউক্রেন এর সবচে বেশি ক্ষতি হচ্ছে। নিরীহ মানুষ মারা যাচ্ছে, তৃতীয় বিশ্বে ও যুদ্ধের আচ লাগছে।
এখন শঙ্কাতে এটাই দেখার অপেক্ষা পরিস্থিতি কি আরো খারাপের দিকে যায় কিনা।