fbpx

পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি

                                           
এইচ এম জহিরুল ইসলাম মারুফ
প্রকাশ : শুক্রবার, ২ জুলাই, ২০২১
পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি

আমরা অল্পতেই কোন কিছু অন্বেষণে হতাশ হয়ে যাই এবং নিজেকে ব্যর্থ ভেবে মন খারাপ করি। ভবিষ্যতকে তাকদীরের হাওয়ালা করে নিশ্চিত হয়ে যাই। ফলে ভবিষ্যৎ হয়ে যায় অন্ধকারাচ্ছন্ন।

কিন্তু কেন? তোমরা কি সেই কবিতাটি পড়োনি?

“পারিবো না পারিব না
এ কথাটি বলিও না আর,
একবার না পারিলে দেখো শতবার”

তোমরা কি আল্লাহ তাআলার অতি ক্ষুদ্র সৃষ্টি মাকড়সা নিয়ে চিন্তা করো না? সে নিজের বাড়ি নির্মাণে কতই না পরিশ্রম করে!
যখন সে অল্প অল্প করে,জাল বোনে বোনে বাড়ি নির্মাণ করতে থাকে তখন হঠাৎ ঝড় এসে তার বাড়ি ভেঙে দেয়। সে দুঃখ পায়, কিন্তু হতাশায় ভেঙে পড়ে না।
বরং নতুন উদ্যমে আবার সে বাড়ি নির্মাণ শুরু করে এবং একসময় শেষ করে।

দেখো না ! বাবুই পাখি কত চেষ্টা-মেহনত করে তাল গাছের পাতায় বাসা বানায়। কিন্তু ঝড়- তুফানে, বৃষ্টি-বাতাসে তার বাসা বারবার ভেঙে যায় এবং মাটিতে পড়ে যায়। তখন সে কি করে জানো! তখন সে মনের দুঃখে এই কবিতাটি বলে এবং নতুনভাবে বাসা নির্মানে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

اشیانہ بنانا میرا کام ہے ; بجہلی اگر گرا دے ۰ تو میں کیا کرو؟

‘বাসা বানানো আমার কাজ। ঝড়-বৃষ্টি যদি আমার বাসা ভাঙ্গে ভাঙ্গুক। আমি আমার কাজ করে যাবো’
ছোট্ট পিঁপড়ার জীবন-সংগ্রাম কতই না শিক্ষনীয়! শরত ও শীতের ভিন্নতায় গ্রীষ্ম ও বর্ষার প্রতিকূলতায় সে কিভাবে জীবিকা অর্জন করে এবং জীবন অতিবাহিত করে?!
কখনো কি আমরা ভেবে দেখেছি? দেখো! সে কিভাবে দীপ্তকণ্ঠে নিজের জীবন-সংগ্রামের কথা বলেছে?

طاب سعيي بالأمل-لست أرضى بالكسل,
غايتي نيل الطلب-لا أبالي بالتعب,
أبتني البيت الحسن-بنظام للسكن,
ولقوتي أذهب-لست يوما ألعب,
كل صيف أجمع-لي طعاما يشبع,
فإذا جاء المطر-كان لي بيتي المقر,
ذاك شأني في الصغر-ونظامي في الكبر,
إنني نعم المثل-باجتهادي في العمل,

(مبادئ القراءة الرشيدة)

স্বপ্নপূরণে চেষ্টা-সাধনা আমার ভালো লাগে, অলসতা উদাসীনতা আমার পছন্দ নয়।
কাংখিত বস্তু অর্জন করাই আমার চূড়ান্ত লক্ষ্য, উদ্দেশ্য সাধনে ক্লান্তি- শ্লান্তির পরোওয়া করিনা।
বসবাসের জন্য আমি সুন্দর ঘর নির্মাণ করি, প্রতিদিন খাদ্য অন্বেষণে আমি বের হই কোনোদিন খেল-তামাশায় লিপ্ত হই না।
প্রতি গ্রীষ্মে আমি পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্য জমা করি, বর্ষাকালে আমার ঘরই হয় আমার একমাত্র বাসস্থান।
এটা আমার শৈশবের অবস্থা, আর বার্ধক্যে নিজাম লক্ষ্য পূরণে চেষ্টা-সাধনায় আমার দৃষ্টান্ত কতইনা উত্তম।

পশ্চিম দিগন্তে সন্ধ্যার রক্তিম লালিমা যখন অস্ত যায় তখন বিশ্বচরাচর ঘোর অন্ধকারে ডুবে যায়। প্রভাতে যখন লাল টুকটুকে সূর্যটা পূর্ব দিগন্তে উঁকি দেয় তখন রাতের অন্ধকার দৌঁড়ে পালায়।
তুমি কি হতে পারো না দিবসের উজ্জ্বল সূর্যের মত?!

যার বিভায় সমাজে যত অশিক্ষা-কুশিক্ষা এবং কুসংস্কারের অন্ধকার আছে, সব বিলীন হয়ে যাবে? অত্যাচার অনাচার এবং পাপাচারের পঙ্কিলতা থেকে জাতীয় ও সমাজ পাক পবিত্র হয়ে যাবে। পারবে না কেনো অবশ্যই পারবে। যদি তোমার মনে থাকে অদম্য ইচ্ছাশক্তি মাকড়সার কর্মস্পৃহা বাবুই পাখির দিরতা আর পিঁপড়ের অবিচলতা।

সূরা বালাদের ৪নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ-
“নিশ্চয়ই আমি মানুষকে কষ্ট ও পরিশ্রমনির্ভর করে সৃষ্টি করেছি।”

সূরা সাফফাতের ৬০নং আয়াতে বলেনঃ-
“নিশ্চয়ই পরকালের সাফল্যই মহাসাফল্য। আর এ সাফল্য অর্জনের জন্যেই সৎকর্মশীলদের আল্লাহর পথে প্রাণান্ত পরিশ্রম করা উচিত।”

সূরা আল ইমরানের ১৩৩ নং আয়াতে বলেনঃ-
“প্রতিপালকের ক্ষমা ও জান্নাত লাভের জন্যে তোমরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে এগিয়ে যাও।
(একজন প্রতিযোগী বিজয়ী হওয়ার জন্যে যে প্রাণান্ত প্রয়াস চালায়, তোমরাও সেভাবে সৎকর্ম করো।) আর জান্নাতের বিস্তৃতি মহাকাশ ও পৃথিবীর সমান। আর তা প্রস্তুত রাখা হয়েছে আল্লাহ-সচেতন সৎকর্মশীলদের জন্যে।”

সূরা জুমা, আয়াত ১০:

“অতঃপর নামাজ সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ো এবং আল্লাহর অনুগ্রহ তালাশ করো।”

রাসুলের হাদীসে বর্নিত হয়েছেঃ-
“নিজ হাতের শ্রমে উপার্জিত জীবিকার চেয়ে উত্তম আহার কেউ কখনো গ্রহণ করেনি।”
(বুখারীর হাদীস নং-২০৭২)

পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি– কথাটি যেমন ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, তেমনি প্রযোজ্য দেশের জন্য। আজকে যে-সব দেশ বিশ্বের বুকে উন্নত দেশ হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে, সে-সব দেশ উন্নত হয়েছে পরিশ্রমের বদৌলতেই। স্বাধীনতা পেলে সিঙ্গাপুর জাতি হিসেবে টিকে থাকতে পারবে না বলে বিশ্বাস করতেন আধুনিক সিঙ্গাপুরের প্রতিষ্ঠাতা লি কুয়ান ইউ। কিন্তু যখন মালয়েশিয়া অনেকটা জোর করেই সিঙ্গাপুরকে স্বাধীন করে দিল (১৯৬৫ সালে), তখন ওই লি কুয়ানের নেতৃত্বেই সিঙ্গাপুর অর্থনীতির দিক দিয়ে একটি শক্তিশালী স্বাধীন দেশ হিসেবে দাঁড়িয়ে গেল শক্তভাবে। যোগ্য নেতৃত্ব আর কঠোর পরিশ্রমের গুণেই এটা সম্ভব হয়েছে। জাতি হিসেবে আমরা যতদিন না পরিশ্রমী হবো এবং পরিচালিত হবো যোগ্য নেতৃত্ব দ্বারা– ততদিন সৌভাগ্য আমাদের দরজায় এসে কড়া নাড়বে না।

আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে কঠোর পরিশ্রমী হওয়ার তাওফিক দান করুন আমিন।

লেখক-এইচ এম জহিরুল ইসলাম মারুফ, শিক্ষার্থীঃ দাওরায়ে হাদীস-(জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম দিলুরোড মাদরাসা).
মগবাজার,রমনা,ঢাকা-১০০০

সংবাদটি শেয়ার করুন


এই বিভাগ থেকে পড়ুন