fbpx
সংবাদ শিরোনাম
সৌদি আরবের জেদ্দায় ফ্লাইট শুরু করতে যাচ্ছে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স তীব্র তাপদাহেও গ্রীষ্মের সৌন্দর্য অমলিন ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের উপ-কর্মসূচি ও পরিকল্পনা সম্পাদক হলেন প্রিয়ন ফুলছড়িতে প্রার্থীর প্রচার-প্রচারণায় জমে উঠেছে নির্বাচনী আমেজ বৈষম্যের প্রতিবাদে সারাদেশের ন্যায় কর্মবিরতিতে মাগুরা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ডুমুরিয়ায় নিসচা’র নতুন কমিটির পরিচিতি সভা অনুষ্ঠিত নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ১০ প্রার্থীর মনোনয়ন দাখিল হযরত আয়েশা সিদ্দিকা রা. কওমী মাদ্রাসা উদ্বোধন টাইমস হায়ার এডুকেশন র‌্যাঙ্কিংয়ে দেশে তৃতীয় স্থানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় মণিরামপুরে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদ প্রার্থী থেকে সরে দাড়ালেন মিকাইল হোসেন

নওগাঁয় “সন্দেশ দাদুর হার না মানা জীবনের গল্প”

                                           
মোসফিকা আক্তার
প্রকাশ : শনিবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২২

নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার কোল ঘেষে বয়ে চলা এক সময়ের খোরস্রোতা ছোট যমুনা নদী। নদীর উপরে বহু আগে নির্মিত রয়েছে একটি বেইলি ব্রীজ। পুরাতন এই বেইলি ব্রীজে মোড়ে প্রায় ৩যুগ ধরে বসে থাকা বৃদ্ধ আজিমুদ্দীনকে কমবেশি সকলেই চেনেন।

পুরাতন ব্রীজের পূর্ব পাশে মোড়ে উপরে টিনের ছাউনি চারপাশে খোলা আর ছাউনির নিচে চৌকিতে বসে আছে ৮৫ বছর বয়সী এক বৃদ্ধ তার সামনে রাখা আছে দুই-তিনটি সন্দেশ ভর্তি ডেস্কি। দোকানে নেই বাড়তি কোনো চাকচিক্য । সাদামাটা ভাবে ডেস্কিতে সাজিয়ে রাখা হয়েছে সন্দেশ। তবে বেচাকেনা চলছে দেদারচে।

এটি নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার ছোট যমুনা নদীর পুরাতন বেইলী ব্রীজের পূর্বপাশে অবস্থিত সন্দেশ দাদুর দোকান । সন্দেশ দাদুর দোকানের ছানার তৈরী সন্দেশের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে রাজধানী সহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। এলাকার বেশিরভাগ লোক তাঁকে সন্দেশ দাদু বলেই ডাকেন।

জানাযায়, উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নের কদমগাছী গ্রামের বাসিন্দা আয়েজ উদ্দীনের ছেলে আজিমুদ্দীন। প্রায় ৩৮ বছর আগে পিতার অভাব অনটনের সংসারের হাল ধরতে ছেলে আজিমুদ্দীন নিজেই সন্দেশ তৈরি করে বিক্রি শুরু করেন। আস্তে আস্তে আশপাশের গ্রামে সেই সন্দেশ দাদুর ছানার সন্দেশের সুনাম ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। এখন সেই সন্দেশ দাদুর সুস্বাদু ছানার তৈরি সন্দেশ এলাকার গন্ডী পেরিয়ে দাদুর সন্দেশ এর খ্যাতি দেশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে।

বয়স বেড়ে যাওয়ায় এখন আর নিজে সন্দেশ তৈরি করতে পারেনা তবে তার সুনাম ধরে রাখতে তার ছেলে এবারত এখন সন্দেশ তৈরি কাজ করেন। কাকডাকা ভোরে মুঘ থেকে উঠে শুরু হয় সন্দেশ তৈরীর কাজ। দাদুর ছেলে আর ছেলের বউ দুজনেই সন্দেশ বানানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করেন প্রতিদিন।

সন্দেশ তৈরির জন্য প্রথমে দুধ থেকে ছানা তৈরি করা হয়। এর মধ্যে এলাচ, চিনি অথবা গুড় দিয়ে মিশ্রণ তৈরি করার পর তৈরি সন্দেশ হয় সন্দেশ। সেই সন্দেশ দাদু নিয়ে গিয়ে ব্রীজের মোড়ে বিক্রি করেন। দোকানের সামনে ক্রেতাদের চিরচেনা ভিড় লেগে যায়।

প্রতি কেজি ছানার সন্দেশ ৪শত টাকা দরে বিক্রি হয়। প্রতিদিন প্রায় ৮ থেকে ১০ হাজার টাকার সন্দেশ বিক্রি হয়। লাভ হয় প্রায় ৩ হাজার টাকা । প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে দুপুর পর্যন্ত সন্দেশ বিক্রি করেন দাদু। পথে ধারে ব্রীজের মোড়ে ৩৬বছর ধরে সন্দেশ বিক্রি করেই চলে সন্দেশ দাদুর সংসার।

ব্রীজের মোড়ে সন্দেশ খেতে খেতে গল্প হয় প্রতিবেদকের সাথে সন্দেশ দাদু আজিমুদ্দীনের। গল্পে গল্পে সন্দেশ দাদু জানান, পিতার অভাবের সংসারে লেখাপড়ার তেমন বেশি সুযোগ হয়নি।জীবন জীবিকার টানে এক সময় পেটের দায়ে পায়ে হেটে বদলগাছী থেকে সাপাহার, মদইল, সহ বিভিন্ন বাজারে গিয়ে মরিচ বিক্রি করতাম। বাজারে পিপাসা পেলে ভাম্যমান সন্দেশ এর দোকানে এক পিচ সন্দেশ ক্রয় করে তা খেয়ে পেট ভরে পানি খেতাম।

এক সময় তিনি চিন্তা করলেন তিনিও সন্দেশ বিক্রি করবেন। আর সেই থেকে শুরু হয় সন্দেশের ব্যবসা। প্রায় ৩৮বছর যাবত দাদু সন্দেশ বিক্রি করছেন। সন্দেশ বিক্রি করে দাদুর অভাবের সংসারে ভাগ্যরচাকা বদলগেছে। তার সংসার ফিরেছে স্বচ্ছলতা। সংসারে তার বউ ও ছেলেমেয়েদের ভরণপোষণ থেকে শুরু করে পরিবারের সকল চাহিদা মিটিয়ে সন্দেশ বিক্রি টাকায় কিনেছেন তিন বিঘা জমি।

মাথা গোজার জন্য নির্মাণ করেছেন একটি ইটের পাঁকা বাড়ি। এখন সুখে ভারা দাদুর সংসার। কিন্তু এই সুখের সময় তার পাশে নেই সহধর্মিণী। বেশ কয়েক বছর আগে দাদুর সহধর্মিণী মারা গেছে। ছেলে এবারত ও ছেলের বউ সহ নাতি নাতনীদের নিয়ে বেশ ভালোই চলছে দাদুর সংসার।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই দাদুর দোকানের সামনে দেখা যায় মানুষের খানিকটা আনাগোনা । বর্ষ বরণে বাঙালির প্রাণের উৎসবে মেতে উঠেছে আর সেই উৎসবকে ঘিরে মিষ্টির চাহিদা বেড়ে গেছে। উৎসবের রঙে রাঙিয়ে অনেকেই দাদুর দোকানের সুস্বাদু সন্দেশ নিতে এসেছেন।

বদলগাছীতে বোনের বাসায় বেড়াতে এসেছেন রতন। আসার পর এখানে সন্দেশ খেতে আসেন। রতন বলেন, এত ভালো সন্দেশ এর আগে কখনো খাইনি। দারুণ স্বাদ। সন্দেশের মানও বেশ ভাল।

জিধিরপুর গ্রামের বাসিন্দা রাহুল বলেন, জেলার বাইরের মানুষের কাছেও দাদুর সন্দেশ বেশ পরিচিত। অনেকেই এই সন্দেশের খুব ভক্ত। এই সন্দেশের কথা মনে হলেই জিবে পানি আসে। এই সন্দেশকে স্থানীয়রা নাম দিয়েছে ব্রীজের সন্দেশ আবার সন্দেশ দাদুর সন্দেশ নামেও পরিচিত।

কোলা থেকে দাদুর দোকানে নিয়মিত সন্দেশ খেতে আসা মাহবুব, পিপলু, আবু সাইদ আঙুর, মিলন,লেবু সহ অনেকে জানান, আমরা প্রতিনিয়ত দাদুর দোকানে সন্দেশ খাওয়ার জন্য আসি।দাদুর ছানার সন্দেশ এর স্বাদই আলাদা।

কোলা ইউপির সাবেক ইউপি সদস্য শাহিন বলেন, আমি প্রায় দাদুর দোকানে সন্দেশ নিতে আসি, আমার ছেলে মেয়ে দাদুর ছানার সন্দেশ খুব পছন্দ করে। সন্দেশ এর স্বাদ অতুলনীয়।

পাহাড়পুর থেকে এক তরুন এসেছে সন্দেশ নিতে নতুন ভাবিকে দাদুর সন্দেশ খাওয়ানোর জন্য। ক্ষুদ্র সন্দেশ ব্যবসায়ী আজিমুদ্দীন। সফল উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলেছেন। সময়ের সাথে সাথে দাদুর সন্দেশ এর সুখ্যাতি এখন দেশ জুড়ে।

সংবাদটি শেয়ার করুন


এই বিভাগ থেকে পড়ুন