ছাত্রীকে মধ্য রাতে চা পানের নিমন্ত্রণ, অঙ্ক বুঝািয়ে নিতে ব্যক্তিগত চেম্বারে ডাকা, শাড়ি পরে দেখা করতে চাওয়া, ইনবক্সে ছাত্রীর ছবি চাওয়া, ম্যাসেঞ্জারে অন্তরঙ্গ ভিডিও লিংক শেয়ার করার মতো নানা কুরুচিপূর্ণ ব্যাপার নিয়ে অভিযোগ উঠেছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাজন সাহার বিরুদ্ধে।
জানা যায়, জুনিয়র সহকর্মীর এমন অনৈতিক কাজে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে উক্ত বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক রেজুয়ান আহমেদ শুভ্র।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বিভাগীয় প্রধানকে মৌখিকভেবে এ বিষয়ে জানালে, সংকট উত্তরণের জন্য ভুক্তভোগীকে বেধে দেন একাধিক শর্ত। যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, বিভাগের অন্য দুই সহকর্মী সহকারী অধ্যাপক রিমন সরকার ও সহকারী অধ্যাপক ফাহামিদা সুলনার বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক তথ্য প্রমাণ সংগ্রহ করে দেওয়া।
রবিবার (৩ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গ্রুপে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সৈয়দা সানজানা আহসান ছোঁয়া অভিযোগ করেন,”২০১৯ সালে প্রথম যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই তখন থেকেই মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের সাজন সাহা স্যার আমাকে নানান ধরনের মেসেজ দিতেন। প্রথম দিকে ভালো মেসেজই দিতেন তাই আমি বিষয়টাকে এড়িয়ে চলেছি। নানান সময়ে নানান কথায় একটু খটকা লাগলেও আমি এড়িয়ে গিয়েছি, ভেবেছি স্যার মনে হয় আমাকে স্নেহ করেন এই কারণে মেসেজ দেন। এভাবে চলে আসে ২০২১ সাল। ২০২১ সালের নভেম্বরের ২৬ তারিখে রাত ১টা বেজে ৩৩ মিনিটে উনি আমাকে মেসেজ দেন,”আসেন চা খাই”, আমি উত্তরে বললাম স্যার অবশ্যই এনিটাইম, (ফরমালি), উনি রিপ্লাইয়ে বললেন “আমি যদি বলি এখনই?” আমি উত্তরে বললাম এখন তো পসিবল না স্যার অনেক রাত হয়ে গিয়েছে। পরে উনি কথা ঘুরি
য়ে বললেন” না এখন না”।
শিক্ষকের এমন সব অনৈতিক প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে ঐ ছাত্রীর শিক্ষাজীবনের প্রতিটি ধাপে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেন। অনুপস্থিত দেখিয়ে পরীক্ষায় বসতে গুনতে হয় জরিমানা, পরীক্ষার খাতায় নম্বর কমে যাওয়া, থিসিস পেপার আটকে যাওয়াসহ এমন আরো অনেক রকমের ভোগান্তির শিকার হতে হয় ভুক্তভোগীকে। সময়ের সাথে ঘনীভূত হতে থাকে সংকট।
সর্বশেষ উপায় না পেয়ে মুখ খোলেন ঐ বিভাগের ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সৈয়দা সানজনা আহসান ছোয়া। এবং সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন দীর্ঘ পাঁচ বছরের বিভিন্ন সময়ের ভোগান্তির ঘটনা প্রবাহ। যেখানে উঠে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা জীবনের প্রত্যেক ধাপেই তিনি হয়েছেন শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শিকারের চিত্র।
এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে দীর্ঘ সময় ধরে নিরবে নির্যাতনের শিকার হওয়া অনেক শিক্ষার্থী মুখ খুলতে শুরু করে। সোস্যাল মিডিয়া ছড়িয়ে পড়তে থাকে একাধিক ছাত্রীর সাথে করা অনৈতিক কনভারসেশন। এক পর্যায়ে প্রশাসনিক ভবনে তালা দিয়ে আন্দোলন শুরু করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
উক্ত আন্দোলনে ছয় দফা দাবি জানিয়ে আটচল্লিশ ঘন্টার আল্টিমেটাম ঘোষণা করেন তারা। এবং উক্ত ছয় দফা দাবিসহ একটি লিখিত অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর পেশ করেন। যেখানে তারা অভিযুক্ত শিক্ষকদের চাকরি থেকে স্থায়ী বহিষ্কার দাবি করেন।
উল্লেখিত দাবি গুলো হলো ১. অভিযুক্ত শিক্ষকে চাকুরীচুত্য, ২. অপরাধের সাথে জড়িত সকলকে শাস্তির আওতায় আনা ৩. শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ৪. অনতিবিলম্বে পরীক্ষার ফল প্রকাশ, ৫. ভবিষ্যতে এ ঘনার কোন বিরুপ প্রভাব না পড়ার নিশ্চয়তা নিশ্চিত এবং ৬. আটচল্লিশ ঘন্টার মধ্যে দাবি বাস্তবায়ন।
এবিষয় অভিযুক্ত শিক্ষক সাজন শাহার সাথে যোগাযোগ জন্য তার অফিসে গেলেও পাওয়া যায়নি। একাধিকবার ফোন করলেও বন্ধ পাওয়া যায় তার মুঠোফোন।
বিভাগীয় প্রধান রেজুয়ান শুভ্রকে জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান, ‘তাদের যে অভিযোগ তারা এটি বিভাগ বরাবর জানালে আমরা ব্যবস্থা নিতাম। তবে সেটা তারা করেননি। তারপরও আমরা শিক্ষার্থীদের মঙ্গল চাই। আর আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ নিয়ে আসা হয়েছে এবিষয়ে কোন তথ্য প্রমাণ থাকলে আমিও জানতে চাই। অভিযোগ করলে হবে না এর সত্যতা প্রমান করতে হবে