fbpx
সংবাদ শিরোনাম

চারদিকে এতো অসংগতি, অবসান কি হবে?

                                           
প্রকাশ : বুধবার, ২৪ আগস্ট, ২০২২
চারদিকে এতো অসংগতি, অবসান কি হবে?

শহীদুল ইসলাম (শুভ): দিন যত যাচ্ছে দেশ ততই উন্নত হচ্ছে। উন্নত হচ্ছে মানুষের জীবন যাত্রার।সেই উন্নয়নের ছোঁয়া পৌঁছে যাচ্ছে শহর থেকে গ্রামান্তরে। মনস্তাত্ত্বিক দিকও পরিবর্তন হয়েছে। কিছু কুসংস্কার ও কুসংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছে। গৃহগণনায় জনসংখ্যার  যে চিত্র আমাদের সামনে তুলে ধরেছে,সেখানে যে হারে মানুষ বাড়ার কথা তা সেভাবে বাড়েনি। কয়েকবছর আগেই লোকমুখে  শুনেছিলাম আমাদের দেশে নাকি আঠারো কোটি মানুষ। কিন্তু গৃহগণনায় মাত্র সাড়ে ১৬ কোটি মানুষ। এর থেকে বুঝা যায়, মানুষ আগের থেকে অনেক সচেতন ও সতর্ক হয়েছে। জনগণ কমানোর যে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার তা সফল হয়েছে। উন্নত হচ্ছে চারদিকে, কিন্তু মানুষের মূল্যবোধের অবক্ষয়ও দিন দিন বাড়ছে। সরকারি বেসরকারি সব জায়গায় এখন কোন না কোনভাবে দূর্নীতি প্রবণ হয়ে উঠেছে। কালো আঁধারে ঢেকে যাচ্ছে সব। চারদিকে শুধুই অসংগতি। মানুষের জনজীবনও অতিষ্ট। শান্তিতে বেঁচে থাকার জন্য চটপট করছে। লোডশেডিং, ডলার,দ্রব্যমূল্য,অফিস-আদালত,নির্বাচন, কলেজে-  বিশ্ববিদ্যালয়, এমপি- মন্ত্রী, ইউনিয়ন চেয়ারম্যানসহ সব জায়গায় এখন দূর্নীতি ও অসংগতি।

প্রায় একযুগ পরে সিডিউল আকারে লোডশেডিং এর ঘোষণা দিয়েছেন। গ্রাম কিংবা শহর, প্রত্যন্ত অঞ্চলে লোডশেডিং এর জন্য অতিষ্ঠ হয়ে গেছে। যেখানে যে সিডিউল দিয়েছে, সেখানে সেভাবে পালন হচ্ছে না। সব জায়গায় নিয়ম ভেঙে তাদের সুবিধা মতো রুটিন দিচ্ছে। শপিংমল, দোকান, হসপিটাল,স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় মতো জায়গায় লোডশেডিং এর জন্য ভালোকরে কিছু করাও যাচ্ছে না।

সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি হচ্ছে নিত্য দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন মূল্য। সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। শখের জিনিস তো খাওয়ার কথা, প্রয়োজনীয় দ্রব্যেই ক্রয় করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এটার জন্য দায়ী কিছু সিন্ডিকেট। তাদের রাতারাতি বড়লোক হওয়ার স্বপ্নের কারণে আজ দ্রব্যমূল্য আকাশচুম্বী। তেল,চাল-ডাল,তরকারি, সবজি,পিঁয়াজ, রসুন, আদা,মসলা, ব্রয়লার মুরগ,ডিম ও আটা, সবজি ও তরকারিসহ ইত্যাদির মূল্য এখন সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাইরে। চাল (মোটা) বর্তমান ৪৯/৫০ থেকে ৫১ টাকা এবং মাঝারি ৫২/৫৪ থেকে ৫৪/৫৬ টাকা। আটা খোলা ৪১/৪২ থেকে ৪৪/৪৫ টাকা। ব্রয়লার মুরগ ১৪০/৫০ থেকে ১৭০/৮০ টাকা ডিম ১২৫/৩০ থেকে ১৩৫/৪০ টাকা। এছাড়াও অকটেন ৮৯ থেকে ১৩৫ টাকা, পেট্রোল ৮৬ থেকে ১৩০ টাকা। ডিজেল ৮০ থেকে ১১৪ টাকা। কেরোসিন ৮০ থেকে ১১৪ টাকা। এই লাগামহীন দাম বাড়ার কারণে মধ্যবিত্ত গ্রাম এবং বিশেষ করে শহরবাসীরা চরম ভোগান্তির স্বীকার হচ্ছে।

ডলার নিয়েও দেশে জল্পনা- কল্পনা, তর্ক- বিতর্ক,  আলোচনা- সমালোচনা কম হয়নি।প্রবাসীরাও ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছে। টাকার মান কমে যাওয়ায় তারা এখন টাকা পাঠাচ্ছে না। এতে করে দেশের বড় একটা বাজেট রেমিট্যান্স কমে গেছে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে রেমিট্যান্স এর ভুমিকা অনস্বীকার্য। সরকার ডলারের মান ফিরিয়ে আনতে আইএমএফ এর কাছে ঋণ চেয়েছে। মানি চেঞ্জারের যে নিয়ম আছে তা কর্মকর্তারাও নিয়ম মানছেন না।কেউ কেউ সম্পদের লোভে অবৈধ ব্যবসাও করছেন। ৩১ জুলাই খোলা বাজারে প্রতি ডলার ছিল ১০৮-১০৯ টাকা। জুন মাসের তুলনায় জুলাই মাসে আমদানি কমেছে ৩১.৩২ শতাংশ। জুনে ঋণপত্র খোলা হয়েছিল ৭৯৬ কোটি ডলার। জুলাই মাসে কমে তা দাড়িয়েছে ৫৪৭ কোটি ডলারের। ( সূত্রঃ প্রথম আলো)

পেট্রোলপাম্পের জন্য সোনালি ফসল এখন প্রায় বন্ধের পথে। সেচ দেওয়ার জন্য উত্তরাঞ্চল এখন তাদের প্রয়োজন পানি। পানির জন্য আমন ধান পুরোপুরি বন্ধের পথে। আর এর পিছনে কারণ হলো লোডশেডিং। লোডশেডিং এর জন্য ফসলের জমিতে পানি দিতে পারছে না। রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর তথ্য অনুযায়ী, এবৎসর আমন ধানের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮০ হাজার ৫০০ হেক্টর। এদিকে বৃষ্টিও নেই আবার বিদ্যুৎও নেই। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি দিতে পারছে না। বিদ্যুৎ এর জন্য প্রয়োজন ৭০ মেগাওয়াট। কিন্তু তারা পাচ্ছে মাত্র ৩৫ মেগাওয়াট। চাপাইনবয়াবগঞ্জ, দিনাজপুর, নওগাঁসহ কয়েকটি উপজেলায় পানির জন্য আমন ধানের চাষ ভালো করে করা যাচ্ছে না।

নির্বাচন নিয়ে ক্ষমতাসীন দল, বিরোধীদলগুলো ও নির্বাচন কমিশনের মধ্যে ইভিএম নিয়ে রয়েছে নানান জটিলতা। সরকার চায় ইভিএম, বিরোধীদলগুলো চায় ইভিএম ছাড়া নিরপেক্ষ নির্বাচন। সেই বিপাকে পড়েছে নির্বাচন কমিশন।

রেইল লাইন নিয়ে রয়েছে নানান অনিয়ম ও দূর্নীতি। যাত্রীদের ভোগান্তি ও হয়রানির স্বীকার। সময়মতো গেইটম্যান গেইটে না থাকায় একের পর এক দুর্ঘটনা।

ইউনিয়ন, উপজেলার চেয়ারম্যানরাও এখন প্রবল দূর্নীতিবাজ হয়ে উঠেছে। নিজের আত্মীয় স্বজনদের এবং নির্বাচনকালীন পক্ষের মানুষকে সরকারের দেওয়া গরিবের ত্রাণ এবং বিভিন্ন মালামাল দিয়ে দিচ্ছে। এতে ভোগান্তির স্বীকার অসহায় ও গরিবরা। নিজেরাই ভাগ বাটোয়ারা করে খাচ্ছে। যাও কয়েকজনকে দিচ্ছে, তাদের কাছ থেকে নিচ্ছে নানান ফায়দা। কুড়িগ্রামের নুনখাওয়া ইউনিয়নের কথা সবার জানা আছে। চেয়ারম্যান, তাদের ভাই এবং মেম্বারগণ মিলে মাটি ভরাটের টাকা আত্মসাৎ কীভাবে করলেন তা নিয়ে প্রথম আলোসহ অনেক পত্র পত্রিকায় চাপানো হয়েছিল। সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের কয়েকটা ইউনিয়নের ( নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক) চেয়ারম্যানরা বন্যার সময় সরকারের দেওয়া মালামাল আত্মসাৎ করেন।কৃষি কাজের জন্য দেওয়া নানান সুবিধা শুধু তাদের দলের লোকদের এবং পরিজনদের দিয়ে সুবিধা নিচ্ছে। তৃষ্ণার্ত কাকের মতো অসহায় ও গরিবরা চোখের পানি ফেলেই চলছে।

মানুষের চিন্তার এতো অবনতি হয় তা এদেশের মানুষের সাথে চলাচল না করলে বুঝতে পারবে না। জাপানকে বলা হয় পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ আদর্শিক দেশ। মহাদেশ হিসেবে চিন্তা চেতনায় এবং মনস্তাত্ত্বিক দিক দিয়ে ইউরোপ শ্রেষ্ঠ। আমাদের এই মহাদেশ বিশেষ করে ভারত উপমহাদেশেই মানুষের যত অবনতি এবং নিকৃষ্ট চিন্তা ভাবনা।

নিরাপদ সড়ক নিয়ে দেশে ২০১৮ সাল থেকে সাধারণ মানুষ বিশেষ করে ছাত্র সমাজ সোচ্চার হয়। নিরাপদ সড়ক সবার জন্যই কাম্য। তারপরও ছাত্র সমাজ রাজপথে তাদের আন্দোলন করে গেছে। এখনো করছে। ২০১৮ তেই তাদের দাবি তুলেছে এবং লাইসেন্সবিহীন গাড়ি যেন না চলে তারও বড় ভুমিকা রাখে। তাদের দাবি সরকার মেনে নিলেও আজ পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়নি। কিছুদিন পরপর এর জন্য ছাত্র- ছাত্রী আন্দোলন গড়ে তুলে।

রক্ত সম্পর্কহীন একটি শ্রেষ্ঠ সম্পর্ক হলো ছাত্র শিক্ষক। গ্রামের একটি প্রবাদ আছে, “মা বাবা বানায় ভূত, আর শিক্ষক বানায় ফুত।” অর্থাৎ মা বাবা সন্তানকে জন্ম দেয় কিন্তু সেই সন্তানকে সন্তানের মতো করে গড়ে তুলে একজন আদর্শবান শিক্ষক। বর্তমান সমাজে এতোই অসংগতি যে, সেই শিক্ষকের গায়ে হাত তুলতে একজন ছাত্রের বিন্দু পরিমাণ চিন্তা করে না। শুধু হাত তুলাতেই সীমাবদ্ধ নয়, শিক্ষককে গলায় জুতার মালা পরানো এবং নিহত হওয়ার ঘটনাও অবলীলায় ঘটে যাচ্ছে। তা শুধু পরিবার ও সমাজের অবনতির কারণে এবং নানান অসংগতির কারণে।

পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ হলো বিশ্ববিদ্যালয়। যেখানে সবচেয়ে বেশি নিরাপদ এবং স্বাধীন। সেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখন হয়ে উঠেছে ধর্ষণ,অবৈধ ব্যবসা,শিক্ষককে হুমকি বা গুম,টেন্ডারবাজির জায়গা। প্রত্যেক সরকারের সময় ক্ষমতাসীন ছাত্ররা বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠে। জওহরলাল নেহেরু বলেছে, ” দেশ ভালো হবে, যদি দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভালো হয়।” আজ দেশের পরিস্থিতি এতোটাই অবনতি এবং এতোই অসংগতি তার একটা কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যেই দূর্নীতির আখড়া হয়ে গেছে। মানুষ এখন একটু স্বস্তি চায়,মুক্তি চায়।

এসবের অবসান করতে হবে। সবার জায়গা থেকে মূখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে। বিশেষ করে সরকারকেই বড় পদক্ষেপ নিতে হবে। সকল কাজের জন্য সরকারি বেসরকারি কর্মকর্তাগণকে জবাবদিহি করার জায়গা রাখতে হবে। অপরাধীকে আইনের আওতায় এনে বিচার করতে হবে। নতুবা এভাবে চলতে থাকলে এক সময় দেশে নানান সমস্যায় জর্জরিত হয়ে যাবে। মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে যাবে। আন্দোলন করবে। এতে দেশের সম্পদই নষ্ট হবে। এই অসংগতিগুলোর অবসান করতে হলে সবাইকেই ভুমিকা রাখতে। বিশেষ করে সরকারকে। এবং সকল কাজের জন্য জবাবদিহি করতে হবে। তাহলেই অসংগতির অবসান কমে আসবে।

লেখকঃ কলামিস্ট ও সাহিত্যিক, শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও সদস্য, বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।

সংবাদটি শেয়ার করুন


এই বিভাগ থেকে পড়ুন