fbpx

আত্নহত্যাকারীদের প্রতি সমবেদনা নয় ঘৃণার স্লোগান উঠুক | সুপ্রভাত হালদার

                                           
প্রকাশ : বৃহস্পতিবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘোষণা দিয়ে আত্মহত‍্যাকরীদের প্রতি এক বিন্দু সমবেদনা নয়, বরং এইসব অকৃতজ্ঞের প্রতি তীব্র ঘৃণার স্লোগান উঠুক। এদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশকারীদের শুভবুদ্ধির উদয় হোক।

এমন আত্মহত‍্যকারীদের প্রায় সবাই নিমকহারাম, স্ট‍্যান্টবাজ, প্রচারলোভী, স্বীকৃতিলোভী, আসল তথ‍্য গোপনকারী, সবকিছুর প্রতি অকৃতজ্ঞ ও শয়তানী পরিকল্পনায় ভরপুর। ইহজগতে তীব্র ঘৃণা আর অন‍্য জগতে কঠোর বিচার এদের একমাত্র প্রাপ‍্য।

আর এদের সমবেদনা জানানো লোকদের বেশিরভাগ হুজুগে, অন্ধ আবেগি, দ্বিচারী, চিন্তাশক্তিহীন, স্রোতে গা ভাসানো এমনকি শয়তানী কর্মের সমর্থনকারী। মরে গিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা, নিপীড়ীতের স্বীকৃতি পাওয়া, সমবেদনা আদায় করা এই সমাজে অনেক আত্মহত‍্যার অন‍্যতম জোরালো কারণ। কারণ এখানকার জনগণ, আমরা শিশুসুলভ মনের অধিকারী।

আমরা অধিকাংশ আত্মহত‍্যাকারীর জীবনের ইতিহাস, মনের গঠন, ভাব, রুচি, জীবনবোধ, জীবনচর্চা, জীবনদর্শন, ব‍্যক্তিত্ব ও আবেগিক দ্বন্দ্ব, ইত‍্যাদি বোঝার মত যথেষ্ট সাবালকত্ব অর্জন করেননি কিংবা ইচ্ছে করে বুঝতে চান না। অথচ একজন ব‍্যক্তির আত্মহত‍্যার আচরণের প্রভাবক হিসেবে এগুলোই সবচেয়ে শক্তিশালী।

সংগত কারণেই আত্মহত‍্যাকারীর ও মিডিয়ার বয়ানে এসবের উল্লেখ থাকে না। থাকে শুধু অভিযোগ বা কারণের ছদ্মবেশে অভিযোগ। আমরা নাবালক জনতা সেই অভিযোগ শুনেই সমবেদায় ও হা-হুতাশে হুমড়ি খাই আর হামলে পড়ি তথাকথিত দায়ী ব‍্যক্তিদের বা প্রতিষ্ঠানের উপর। কোন কোন আত্মহত‍্যা নিয়ে রাজনীতির রসদেরও যোগান দেয়। ফলে দেখা যায় কোনো কোনো আত্মহত‍্যা জনসমাজে প্রত‍্যক্ষ আড্ডা, আলোচনা ও হুজুগের রসদ হয়ে পড়ে।

এইভাবে আত্মহত‍্যাকারীরা অনেক সময় মরে গিয়ে অনেক মানুষের হুজুগের সুযোগ করে দেন, তাদের নিস্তরঙ্গ জীবনে তরঙ্গ আনেন, কারো জন‍্য নিজের একটা মত দেবার সুযোগ এনে দেন, আবেগ ও উদ্বেগ দেখানোর সুযোগ আনেন, অনেককেই সর্বদা অন‍্যকে আর সিস্টেমকে দোষারোপের বাসনা চরিতার্থ করার মোক্ষম সুযোগ এনে দেন, এমনকি অনেকের জন‍্য প্রত‍্যক্ষ ব‍্যবসা ও পরোক্ষ বিনোদনের ব‍্যবস্থাও করে দেন।

এজন‍্যই কোন ব‍্যক্তি যে কারণেই আত্মহত‍্যা করে থাকেন না কেন, কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা হাজারো ‘পাবলিক পারপাস’ সার্ভ করে।

ঢাবির সাবেক ছাত্র অপুর ‘এন্টিসিপেটরি ফেইলিওর সুইসাইড’ ও বগুড়ার ফার্স্ট ক্লাস মাস্টার্স আলমগীরের ‘দুইবেলা ভাতের বিনিময়ে পড়ানোর’ বিজ্ঞাপনটিও এমন পাবলিক পারপাস সার্ভ করেছে। আত্মহত‍্যা তাই পাবলিকের জন‍্য এক মওকা বিশেষ। আর মরার পরে তাকে নিয়ে পুরো জাতি হা-হুতাশ করবে বাস্তব কারণেই এমনটা ভেবে অনেক আত্মহত‍্যাকারী আত্মহত‍্যার আগে এক অনির্বচনীয় রোমান্স, এডভেঞ্চার ও বন‍্য বা অর্গাজমিক সুখ অনুভব করতে পারেন।

সম্প্রতি, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সুপ্রভাত হালদার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসব তুলে ধরেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন


এই বিভাগ থেকে পড়ুন