fbpx

যুগের পরিবর্তনে বিলুপ্তপ্রায় ডাকবক্স

                                           
মোসফিকা আক্তার
প্রকাশ : শনিবার, ১২ জুন, ২০২১
যুগের পরিবর্তনে বিলুপ্তপ্রায় ডাকবক্স

এক সময় তার কদর ছিল ঘরে ঘরে। দুপুর বেলা পিওনের ‘চিঠি আছে গো’ ডাক শুনে দ্রুত সদর দরজায় ছুটে আসত বাড়ির কচিকাঁচারা। যার চিঠি এল না, সেও অপেক্ষা করে থাকত পরদিন দুপুরের জন্য।

শুধু দৈনন্দিন জীবনে নয়, উৎসবের মরসুমে আপনজনকে শুভেচ্ছা জানাতেও চিঠি ছিল প্রধান মাধ্যম।

স্মার্টফোনের যুগে চিঠি এখন ‘বিলুপ্তপ্রায়’। চিঠি লেখার অভ্যাস কমতে থাকায় কাজ নেই রাস্তার ধারের ডাক বাক্সগুলিরও।

আগে দিনে দু’-তিন বার ডাক কর্মীরা রাস্তার ধারের বাক্স থেকে চিঠি নিতে আসতেন। এখন সেই সংখ্যাটা কমে দাঁড়িয়েছে একবারে।

শহরবাসীর একাংশের অভিযোগ, ডাক দফতরের উদাসীনতায় জীর্ণ অবস্থাতেই শেষের দিন গুনছে খড়্গপুর শহরের ডাক বাক্সগুলি।

ব্রিটিশ আমলেই দেশে ডাক ব্যবস্থার পথ চলা শুরু। ১৯৭২ সালে চালু হয় ‘পিনকোড’ ব্যবস্থা।

শহরবাসীর একাংশের অভিযোগ, মোবাইল-ইন্টারনেটের যুগে একদিকে যেমন চিঠি লেখার অভ্যাস কমেছে, তেমনই আরও উদাসীন হয়েছে ডাক বিভাগ।

রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে মরচে ধরছে ডাক বাক্সগুলিতে।

জীর্ণ ডাক বাক্সে চিঠি ফেলার আগেও দু’বার ভাবছেন শহরবাসী অভাব। রক্ষণাবেক্ষণের বদলে তুলে নেওয়া হচ্ছে অনেক ডাক বাক্স।

নওগাঁ জেলা শহরেএগুলোতে একসময় প্রতিদিন খামে পুড়ে চিঠি রাখতেন সাধারণ মানুষ। প্রতিদিন সেগুলো খুলে ডাকপিয়নরা বিভিন্ন ঠিকানায় পাঠাতেন। কিন্তু প্রযুক্তির উন্নতির কারণে হাতে লেখা চিঠির কদর কমে গেছে।

তাই এখন আর ডাক বক্সগুলো ব্যবহার হয়না। দু’একটি ছাড়া বেশির ভাগই ভাঙ্গা ও মরিচা পড়ে নষ্ট হওয়ার পথে।

একসময় পোস্ট বক্সে প্রচুর চিঠি পরলেও বর্তমানে বক্সে একটি চিঠিও পড়ে না বলে জানালেন নওগাঁ ডাকঘরের সংশ্লিষ্টরা।

ডাক ব্যবস্থার এই চিত্র শুধু জেলা শহরেই নয় জেলার সবগুলো পোস্ট অফিসেই। কোথাও আর পোস্ট বক্স গুলো খোলা হয়না।

নওগাঁ জেলার প্রধান ডাকঘরের সংশ্লিষ্টরা জানান, এক সময় চিটি পত্র আর মানি অর্ডারই ছিল পোস্ট অফিসের প্রধান কাজ। সময়ের পরিবর্তনে এখন যুক্ত হয়েছে ব্যক্তি সঞ্চয়, বীমা, ইলেকট্রনিক্স মানি অর্ডার।

 

ব্যবহার না হওয়ার বিলুপ্ত হতে বসেছে মূল্যবান সম্পদ

 

সংশ্লিষ্টরা জানালেন, ব্যক্তি পর্যায়ে চিঠি আদান প্রদান কমলেও বেড়েছে প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে। এখন নন জুডিসিয়াল স্টাম্প বিক্রি ও প্রাইজব-ও পোস্ট অফিসের অন্যতম আয়ের সুযোগ। তাছাড়া ডাক সংক্রান্ত প্রযুক্তিগত নানা সেবাও দিয়ে যাচ্ছেন তারা।

নওগাঁ প্রধান ডাকঘরে গত আগস্ট মাসে একাধিক দিন গিয়ে দেখা যায় সাধারণ চিঠিপত্র আদান প্রদানের জন্য মানুষের উপস্থিতি কম।

কিন্তু মানি অর্ডার, সঞ্চয়পত্র গ্রাহক ও ননজুডিশিয়াল স্টাম গ্রাহকদের কাংঙ্খিত উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।

পোস্ট অফিসের বিভিন্ন সেবার খবর নিয়ে জানা যায়, প্রধান ডাকঘর থেকে এক মাসে সাধারণ চিঠি ইস্যু হয়েছে ১০ হাজার ৮ শ ৫০টি। রেজিস্ট্রি চিঠি ইস্যু হয়েছে ৮ হাজার ৩২ টি। বিদেশি রেজিস্ট্রি চিঠি ইস্যু হয়েছে মাত্র ৩৭ টি। এই গুলোর বেশির ভাগই প্রাতিষ্ঠানিক চিঠি বলে জানালেন ডাকঘর কর্তৃপক্ষ।

গত ১ মাসে মানি অর্ডার ইস্যু হয়েছে ১৭৯ টি (৩ লক্ষ ৯১০ টাকার)। ইলেক্ট্রনিক মানি অর্ডার ইস্যু হয়েছে ১৫ টি। এতে ১ লক্ষ ১১ হাজার ৪ শ ৫০ টাকার লেনদেন হয়েছে। দ্রুত ডাক সার্ভিসে পার্সেল ইস্যু হয়েছে ৩২ টি, জিইপি ইস্যু ২৪০ টি ও বিলি হয়েছে ২৩০ টি।

এছাড়াও গত এক মাসে সঞ্চয় জমা হয়েছে ১ কোটি ২৫ লক্ষ ১০ হাজার ৮ শ ৩৩ টাকা ও উঠানো হয়েছে ১ কোটি ৯৬ লক্ষ ৮৭ হাজার ২ শ ৫২ টাকা। সঞ্চয় পত্র বিক্রি হয়েছে ৭ কোটি ১৩ লক্ষ টাকা।

১ মাসে জীবন বীমার কিস্তি আদায় হয়েছে ১ লক্ষ ১৮ হাজার ৯ শ ৭৮ টাকা, পরিশোধ হয়েছে ৩ লক্ষ ৮৪ হাজার ৪ শ ৬৭ টাকা ও নতুন বীমা হয়েছে ৮ লক্ষ টাকার। রেভিনিউ বিক্রি ৪ লক্ষ ৬৪ হাজার টাকার ও নন জুডিসিয়াল স্টাম্প বিক্রি হয়েছে ৪৫ লক্ষ ৯ শ টাকা । প্রাইজব- বিক্রি ১১ হাজার টাকার ও ভাঙ্গানো হয়েছে ৯৭ হাজার টাকার।

এই পরিসংখ্যান থেকেই বুঝা যায় চিঠি আদান প্রদানের করুণ অবস্থা। তাই এখন আর সংশ্লিষ্টরা চিঠির দিকে জোর না দিয়ে প্রযুক্তিমুখি ও সময়োপযোগী সেবার দিকে দৃষ্টি দিতে দেখা গেছে।

সেবা নিতে আসা গ্রাহক নুর ইসলাম বলেন, চিঠি আদান প্রদান ছিল পোস্ট অফিসের প্রাণ। আজ ব্যক্তিগত অনুভূতি প্রকাশের এই মাধ্যমটি বলতে গেলে উঠেই গেছে। আমরা নিজেরাই এখন কোন পোস্ট বক্স ব্যবহার করিনা। চিঠিপত্রও লিখিনা।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও মোবাইলেই প্রিয়জনের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি পোস্ট অফিসে সঞ্চয় সংক্রান্ত কাজে এসেছেন বলে জানান। জানান, বেশিরভাগ মানুষই সঞ্চয়ের জন্যই আসেন।

জেলা প্রধান ডাকঘরের পোস্ট মাস্টার বিমল চন্দ্র পুরকায়স্থ জানান সময় পাল্টেছে। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে পোস্ট অফিসেও নানা পরিবর্তন এসেছে। তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়ন ডাক বিভাগেও যুক্ত হয়েছে।

তিনি বলেন, আগের মতো ব্যক্তিগত চিঠি ডাকঘরে আসে না, এখন বেশির ভাগ চিঠিই প্রাতিষ্ঠানিক। মানুষ এখন পোস্ট বক্স গুলো ব্যবহার না করায় এগুলো আর খোলা হয়না। তাই এগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তবে নষ্ট পোস্ট বক্স তুলে নেয়ার চিন্তা চলছে বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, প্রধান ডাকঘরকে কেন্দ্র করে এখন সঞ্চয়-বীমার কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। চিঠিপত্র আদান প্রদানের হার কমলেও বেড়েছে সঞ্চয়-বীমার লেনদেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন


এই বিভাগ থেকে পড়ুন