fbpx
সংবাদ শিরোনাম
সৌদি আরবের জেদ্দায় ফ্লাইট শুরু করতে যাচ্ছে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স তীব্র তাপদাহেও গ্রীষ্মের সৌন্দর্য অমলিন ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের উপ-কর্মসূচি ও পরিকল্পনা সম্পাদক হলেন প্রিয়ন ফুলছড়িতে প্রার্থীর প্রচার-প্রচারণায় জমে উঠেছে নির্বাচনী আমেজ বৈষম্যের প্রতিবাদে সারাদেশের ন্যায় কর্মবিরতিতে মাগুরা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ডুমুরিয়ায় নিসচা’র নতুন কমিটির পরিচিতি সভা অনুষ্ঠিত নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ১০ প্রার্থীর মনোনয়ন দাখিল হযরত আয়েশা সিদ্দিকা রা. কওমী মাদ্রাসা উদ্বোধন টাইমস হায়ার এডুকেশন র‌্যাঙ্কিংয়ে দেশে তৃতীয় স্থানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় মণিরামপুরে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদ প্রার্থী থেকে সরে দাড়ালেন মিকাইল হোসেন

লাভজনক হচ্ছে আন্ডারওয়্যার ব্যবসা !

                                           
মোবারক আহমেদ, ঢাকা
প্রকাশ : রবিবার, ১৫ মে, ২০২২
লাভজনক হচ্ছে আন্ডারওয়্যার ব্যবসা!

আন্ডারওয়্যার বা লন্জারি গ্লোবাল অ্যাপারেল মার্কেট বা বৈশ্বিক তৈরি পোশাক মার্কেটের এখন “টক অফ দা ইস্যু”। বিশ্বাস করতে কষ্ট হলেও কেনেথ রিসার্চের তথ্যসূত্র তাই বলছে। রিসার্চটি বলছে, গ্লোবাল লন্জারি মার্কেট ২০২০ সালে এসে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। ২০১৯ সালে যা ছিলো ৩২ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার।

২০২৪ সাল নাগাদ এই সেক্টরের মার্কেট মূল্য ৬২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে গিয়ে দাঁড়াবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।বিশ্বজুড়ে বেড়ে ওঠা আন্ডারওয়্যার মার্কেট এখন নতুন করে স্বপ্ন দেখাচ্ছে তৈরী পোশাক শিল্পকে। আর এই নতুন সম্ভাবনা জাগরণের সবচেয়ে বড় কারণ মুনাফা। এখন আন্ডারওয়্যার ইন্ডাস্ট্রি থেকে তুলনামূলক অনেক বেশি মুনাফা আয় করা সম্ভব হচ্ছে।

বাংলাদেশের অন্যতম লন্জারি/ আন্ডারওয়্যার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান কে সি লন্জারীর সিইও মাহাবুব উর রহমান রাসেল এর তথ্যমতে, টি-শার্ট সহ অন্যান্য তৈরী পোশাক থেকে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ মুনাফা অর্জন সম্ভব সেখানে লন্জারী বা আন্ডারওয়্যার-এ ২০- ২৫ শতাংশ মুনাফা অর্জন করা যায়। এই মুনাফা অর্জনের দৌড়ে যে দেশগুলো সবার চেয়ে এগিয়ে তারা চীন, ভারত, হংকং, ভিয়েতনাম, তুর্কির মতো উন্নত দেশগুলো।
বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ১৯ শতকের আগে আন্ডারওয়্যার মার্কেটের বিস্তৃতি ছিলো খুবই কম। তবে ১৯৩০ সালের পর থেকে আন্ডারওয়্যারের জনপ্রিয়তা বেড়েই চলেছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে বিশ্বজুড়ে আন্ডারওয়্যারের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির কারণ হাইজিন। মানুষ এখন অনেক স্বাস্থসচেতন। মানুষ বর্তমানে বিভিন্ন স্কীন ডিজিজ থেকে বাঁচতে নিজেদের অন্তর্বাসের যত্ন বেশি নেয়। আর তাতেই যেনো বৈশ্বিক তৈরী পোষাক শিল্পে এক নতুন বিপ্লব শুরু হয়েছে। তবে ব্যতিক্রম অবস্থা বাংলাদেশে। তৈরী পোষাক উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে থাকলেও এই বিপ্লবে অংশীদার তেমনভাবে হতে পারেনি। কারণ ৪৮ বিলয়ন ডলারের মার্কেটে বাংলাদেশের অর্জন মাত্র ৫৮৪ মিলিয়ন। গ্লোবাল আন্ডারওয়্যার মার্কেটে বাংলাদেশের বার্ষিক সর্বোচ্চ রপ্তানি ৭০০ মিলিয়ন যা সর্বমোট মার্কেটের মাত্র ৫ দশমিক ২৩ শতাংশ।

গ্লোবাল আন্ডারওয়্যার মার্কেটের বাজার বিবেচনায় বাংলাদেশের অর্জন এখনও তেমন উল্লেখযোগ্য নয়। পুরুষ আন্ডারওয়্যার মার্কেটের প্রায় ৭০ শতাংশ বাজার দখলে রেখেছে এশিয়া। কারণ শুধু চীন এবং ইন্ডিয়াতেই ৭১৩ মিলিয়ন পুরুষের বসতি। এই হিসেবে আন্ডারওয়্যার মার্কেট হতে পারে বাংলাদেশের তৈরী পোশাক শিল্পের নতুন ট্রাম্প কার্ড। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ মাঠেও নেমে পড়েছে এই ট্রাম্পকার্ডের সঠিক ব্যাবহারের জন্য।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফাকচারিং অ্যান্ড এক্সপোর্ট এসোসিয়েশন BGMEA এর সহ সভাপতি সাহিদুল্লাহ আজিম বলেন, আমরা যদি গ্লোবাল আন্ডারওয়্যার মার্কেটের একটি ক্ষুদ্র অংশও ধরতে পারি তাহলে বার্ষিক কমপক্ষে ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানি অর্থ আয় করার সম্ভবনা রয়েছে।

বর্তমানে যে কয়টি আন্ডারওয়্যার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে অবস্থিত তার মধ্যে কে সি লন্জারী, এইচকিউ গ্রুপ, প্রাণ আরএফএল গ্রুপের তৈরী পোশাক ইউনিট চরকা অন্যতম। অনন্ত অ্যাপারেল নামক আরও একটি প্রতিষ্ঠান এই ইন্ডাস্ট্রিতে ২৫০ কোটি বিনিয়োগ করেছে। এইচকিউ গ্রুপ আমেরিকান বিখ্যাত আন্ডারওয়্যার প্রস্তুতকারী ব্র্যান্ড কোয়ান্টামের সাথে যৌথ শেয়ারিংয়ে ২০১৩ সালে ৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের মূলধন নিয়ে আন্ডারওয়ার ম্যানুফাকচারিং এ যাত্রা শুরু করে। পরে প্রচুর চাহিদা এবং ব্যবসা সফল হওয়াই এইচকিউ গ্রুপ কোয়ান্টামের শেয়ারও কিনে নেয় এবং তারা আরও নতুন ৫ টি ম্যানুফাকচারিং ইউনিট তৈরীতে বাধ্য হয়। শুধুমাত্র ২০২০-২১ অর্থবছরেই এইচকিউ গ্রুপ ৯০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করে আন্ডারওয়্যার রপ্তানি করে। তবে এইচকিউ গ্রুপের জেনারেল ম্যানেজার (এইচআর) শাহারিয়াত হোসেন’র ভাষ্যমতে,” বাংলাদেশ আন্ডারওয়্যারের বিশ্ববাজারে এখনও অনেক পিছিয়ে আছে। আমাদের উচিৎ এই খাতে আরও বেশি মনোযোগী হওয়া যাতে গ্লোবাল মার্কেট থেকে আরও বেশি রেভিনিউ অর্জন করা যায়।”

বাংলাদেশের একটি অন্যতম আন্ডারওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারিং গ্রুপ চরকা বর্তমানে পর্যাপ্ত শ্রমিক অনিশ্চয়তায় ভুগছে । প্রাণ আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং সিইও আহসান খান চৌধূরীর মতে,” গ্লোবাল আন্ডারওয়্যার মার্কেট দিন দিন বৃদ্ধি পেয়েই চলেছে। আমাদের আরও অনেক কিছুই করার বাকি এই মার্কেটের আরও বেশি শেয়ার অর্জন করার জন্য।”

আন্ডারওয়্যার মার্কেটের চাহিদা, মুনাফা সবকিছুই বাংলাদেশের অনুকুলে হলেও একটা বড় সমস্যা রয়েছে। সেটা হচ্ছে দক্ষ শ্রমিক। আন্ডারওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারিং এর জন্য প্রয়োজন দক্ষ শ্রমিক। এই ইন্ডাস্ট্রিতে বাংলাদেশ নতুন হওয়াই দক্ষ শ্রমিকের পর্যাপ্ততা নেই। ম্যানুফ্যাকচারিং-এ এসে অনেক উদ্যোক্তা লোকসানের মুখ দেখেছে শ্রমিকদের ট্রেনিং দিতে গিয়ে। শুধু ব্রা এর মতো আন্ডারওয়ারে আলাদা ৩৫ টির মতো ম্যাটেরিয়ালের কাজ করতে হয়। দেশে নতুন আরও ৫০ টিরও বেশি নতুন আন্ডারওয়্যার উদ্যোক্তা আসলেও ভয়ের কারণ এখনোও ওই শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা।

আন্ডারওয়্যার শিল্প বিপ্লবে বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতা কামনা করছে নতুন উদ্যোক্তারা। দক্ষ শ্রমিক গড়ে তুলতে প্রশিক্ষণ ও প্রনোদনা পেলে নতুন দ্বার উন্মোচন হবে বলে ধারণা করা যাচ্ছে।
বাংলাদেশ শ্রমিক অদক্ষতার প্রতিকূলতাকে কাটিয়ে উঠতে পারে তবে ধারণা করা হচ্ছে অদূর ভবিষ্যতে এই সম্ভানাময় বিশাল ইন্ডাস্ট্রির পরাশক্তিতে পরিণত হবে বাংলাদেশ। অর্জন করতে সক্ষম হবে বার্ষিক কয়েক বিলিয়ন ডলার। তৈরী পোশাক নিয়ে চিন্তিত বাংলাদেশে ঘটবে নতুন কোন বিপ্লব। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যুক্ত হতে পারে নতুন মাত্রা।

সংবাদটি শেয়ার করুন


এই বিভাগ থেকে পড়ুন