দেশান্তর প্রতিবেদন ১৪ মে ২০২২ , ৩:০৮:৪৪
ব্যস্ত সড়কের পাশে বিশাল খেলার মাঠ মাথাল, কাচি, ব্যাগ নিয়ে বসে আছেন শতাধিক শ্রমিক । এরইমধ্যে এক-দু’জন আসছেন, দর কষাকষি করে নিয়ে যাচ্ছেন কর্মস্থলে। যারা ডাক পাচ্ছেন না তারা পার করছেন অলস সময়। নিজেরা গালগল্প করে কেউ হতাশ হয়ে ফিরছেন ঘরে।
শ্রমের হাটে শ্রমিক কেনাবেচার নিত্যদিনের এমন দৃশ্য চোখে পড়ে মাগুরা জেলার শালিখা উপজেলার আড়পাড়া বাজারে।
দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বৈশাখ মাসে বোরো ধান কাটা উপলক্ষে এই শ্রম বাজারে আসেন শ্রমিকরা। প্রতিদিন শত শত দরিদ্র মানুষ এখানে আসেন শ্রম বিক্রি করতে। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার শ্রমিকের দাম বেশি অভিযোগ ক্রেতাদের।
দিনের আলো ফোটার আগেই উপজেলার আড়পাড়া আইডিয়া হাইস্কুল মাঠে চোখে পড়ে মানুষের জটলা। ফজরের আজানের পর থেকেই মানুষগুলো জড়ো হতে শুরু করেন। আরেক শ্রেণীর মানুষ এখানে আসেন শ্রম কিনতে। এসব শ্রমিকরা ধান কাটা থেকে শুরু করে খেত-খামারের বিভিন্ন কাজ করে থাকেন।
প্রতিদিন উপজেলার আড়পাড়া, তালখড়ি, বুনাগাতি ও শতখালী ইউনিয়ন থেকে লোকজন শ্রম কিনতে আসেন এখানে। হাটে ওঠা পণ্যের মত এখানেও চলে দর-দাম। এসব শ্রমিকের শ্রমের মূল্য প্রতিদিন এক হাজার থেকে এক হাজার ৩০০ টাকা পর্যন্ত সাথে দু’বেলার খাওয়া।
এদিকে শ্রম বাজারে দেখা যায় ছোট ছোট চায়ের দোকান। অলস সময় কেউ কেউ চা বিড়ি খেয়ে কাটাচ্ছেন। আবার গাছের নিচে বসেছে সেলুন। তাছাড়াও দেখা গেছে বিভিন্ন দোকানপাট।
সাংবাদিক পরিচয় দিলে জানা যায়, শ্রম বিক্রি করতে শ্রমিকদের নিরাপত্তাহীনতাসহ নানা রকম সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়। যে শ্রমিকরা কাজে যেতে পারেনা তাদের সমস্যাই সবচেয়ে বেশি হয়। রাতের বেলায় এরা যাত্রী ছাউনি, বিভিন্ন মার্কেট ও স্কুলের বারান্দায় রাত্রি যাপন করতে হয়। আবার কেউ খোলা আকাশের নিচেই রাত কাটান।
ফরিদপুরের আবুল হোসেন, এলাকায় কাজ নেই। চার সদস্যদের সংসারে তিনি একাই উপার্জনক্ষম ব্যাক্তি। এখানে শ্রমের দাম বেশি, কাজও বেশি। তাছাড়া প্রতিদিন শ্রম বিক্রি করা যায়। তাই এখানে এসেছি।
নড়াইলের ফজর আলী জানান, ভারি বৃষ্টির কারণে জমিতে পানি থাকায় কাজ করতে অসুবিধা হয়। মহাজনেরা আমাদের মানুষ হিসাবেই গণ্য করে না। কাজে একটুও বিশ্রাম দিতে চাই না।
তবে এনিয়ে মালিক পক্ষের অভিযোগের শেষ নেই। ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাবে ক্ষেতের ধান প্রায় নষ্টের মুখে। চাপে পড়ে অতিরিক্ত দাম দিয়ে শ্রমিক নিতে হচ্ছে। ফলে লোকশান গুনতে হচ্ছে।
শ্রমিক নিতে আসা বুনাগাতি ইউনিয়নের নিরাঞ্জন বলেন, সকালে এসেছি শ্রমিক নিতে। ধানের অবস্থা ভালো না। আবহাওয়ার দোহায় দিয়ে দাম বেশি চাচ্ছে। জন প্রতি এক হাজার ২০০ টাকা। সকালে নাস্তা করে ক্ষেতে যায় আবার দুপুরের খাওয়া শেষ করতে ৩ টা বাজায়। বৃষ্টির ফোটা পড়লেই কাজ শেষ। বৃষ্টিতে তো শ্রমিকরা ধান কাটটে পারবে না।
এমআরবি/ডিডি/এসআর