দেশান্তর প্রতিবেদন ৯ জানুয়ারি ২০২১ , ২:২৪:০৭
নিজস্ব প্রতিবেদক: বৈশ্বিকভাবে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাতের ন্যূনতম মানদণ্ড ধরা হয় ১:২০। অর্থাৎ প্রতি ২০ জন শিক্ষার্থীর জন্য অন্তত একজন শিক্ষক থাকবেন। জাতীয় পর্যায়েও দেশের সব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এ মানদণ্ড অনুসরণে উৎসাহিত করে আসছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। যদিও সে লক্ষ্য থেকে অনেক দূরে অবস্থান করছে দেশের বেশ কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়।
ইউজিসির সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদন হতে দেখা যায়,দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাতের দিক থেকে সবচেয়ে পিছিয়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়(বেরোবি)। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ৮ হাজার ৩৯৩ জন। শিক্ষার্থীর পাঠদানে নিয়োজিত শিক্ষক রয়েছেন মাত্র ১৮৮ জন। সে হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক-শিক্ষার্থীর গড় অনুপাত ১:৪৪। অর্থাৎ প্রতি ৪৪ শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষক রয়েছেন একজন করে, যা বৈশ্বিক ন্যূনতম মানদণ্ড এমনকি জাতীয় পর্যায়ের গড় অনুপাত থেকেও অনেক বেশি।
বেরোবির পরের অবস্থানে রয়েছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়টির অধ্যয়নরত ৮ হাজার ২৯১ জন শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষক রয়েছেন ১৯৩ জন। সে হিসেবে এখানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত দাঁড়ায় ১:৪৩।এর পরের অবস্থানে রয়েছে গোপালগঞ্জের বশেমুরবিপ্রবি। বিশ্ববিদ্যালয়টির ১০ হাজার ৯৮৯ জন শিক্ষার্থীর শিক্ষক রয়েছেন মাত্র ২৭২ জন। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত ১:৪০।
শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাতে পিছিয়ে রয়েছে পুরনো অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ও। এমনই এক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়টির ১৫ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষক রয়েছেন ৩৯৯ জন। সে হিসেবে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর গড় অনুপাত দাঁড়ায় ১:৩৮। এর পরের তালিকায় রয়েছে দিনাজপুরের হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ও (হাবিপ্রবি)। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থী রয়েছেন ১১ হাজার ৫৪৭ জন। শিক্ষক রয়েছেন ৩১২ জন। সে হিসেবে শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত দাঁড়ায় ১:৩৭।
উচ্চশিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অপরিকল্পিতভাবে বিভাগ খোলা, শিক্ষক নিয়োগে কর্তৃপক্ষের গড়িমসি ও উচ্চধাপের পদগুলোয় জ্যেষ্ঠ শিক্ষক না পাওয়ার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাতের দিক থেকে পিছিয়ে রয়েছে। এ প্রসঙ্গে ইউজিসির সদস্য এবং খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, অনুমোদিত অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী শিক্ষার্থী অনুপাতে যে সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ দেয়া প্রয়োজন, ইউজিসির পক্ষ থেকে সে পদগুলো সৃষ্টি করে দেয়া হয়। তবে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ না নেয়ার কারণে এতে বিলম্ব দেখা যায়। এছাড়া নিয়োগ নিয়ে অনেক কর্তৃপক্ষের অভ্যন্তরীণ সমস্যার কারণে ইচ্ছাকৃতভাবে গড়িমসি করা হয়। এছাড়া বেশকিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপকের মতো জ্যেষ্ঠ মর্যাদার পদগুলোয় নিয়োগ দেয়ার জন্য পর্যাপ্ত শিক্ষক পাওয়া যায় না। শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাতে পিছিয়ে থাকার এটিও একটি বড় কারণ। শুধু শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত নয়, প্রতি ক্লাসে বা শিফটে সর্বোচ্চ কতজন শিক্ষার্থী থাকবেন, উচ্চশিক্ষার মান নিশ্চিতে সেটিও নির্ধারণ করে দেয়া প্রয়োজন।