fbpx

ধর্মঘট প্রত্যাহার, আগের মজুরিতেই কাজে ফিরছেন চা শ্রমিকরা

                                           
প্রকাশ : সোমবার, ২২ আগস্ট, ২০২২
ধর্মঘট প্রত্যাহার, আগের মজুরিতেই কাজে ফিরছেন চা শ্রমিকরা

ধর্মঘট প্রত্যাহার করে আগের ১২০ টাকা মজুরিতেই কাজে ফিরছেন চা শ্রমিকরা। সোমবার থেকেই তারা কাজে যোগ দেবেন।

মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসকের (ডিসি) সঙ্গে রোববার রাতে শ্রমিক নেতাদের বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত হয়।

বৈঠকে ধর্মঘট প্রত্যাহার করে কাজে ফেরার সিদ্ধান্ত হয়েছে জানিয়ে চা শ্রমিক ইউনিয়নের অর্থ সম্পাদক পরেশ কালিন্দি বলেন, ‘আপাতত আমরা পূর্বের মজুরিতেই কাজে যোগ দেব, তবে দ্রুততম সময়ে প্রধানমন্ত্রী আমাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে আলাপ করে নতুন মজুরি নির্ধারণ করবেন। আর ধর্মঘট চলাকালীন ১০ দিনের মজুরিসহ সকল সুবিধাদি মালিকপক্ষ প্রদান করবে।’

এদিকে নেতাদের ধর্মঘট প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তে সাধারণ শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা গেছে। সোমবার বৈঠক করে করণীয় নির্ধারণের কথা রয়েছে তাদের।

মজুরি বাড়ানোর দাবি জানানো চা শ্রমিক নেতাদের নিয়ে রোববার রাতে নিজ কার্যালয়ে বসেন মৌলভীবাজারের ডিসি মীর নাহিদ আহসান। ওই সময় চা শ্রমিকদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বৈঠকে জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া, বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের উপপরিচালক নাহিদুল ইসলাম, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তা এবং বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে ডিসির প্যাডে যৌথ বিবৃতি দেয়া হয়। তাতে উল্লেখ করা হয়, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি বিশ্বাস ও আস্থা রেখে তার সম্মানে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন তাদের ধর্মঘট প্রত্যাহার করে ২২ আগস্ট থেকে কাজে যোগদান করবেন। আপাতত চলমান মজুরি অর্থাৎ ১২০ টাকা হারেই শ্রমিকগণ কাজে যোগদান করবেন।

‘প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স পরবর্তী সময়ে মজুরির বিষয়টি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সদয় বিবেচনার পর চূড়ান্তভাবে নির্ধারিত হবে।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, দুর্গাপূজার আগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে সংযুক্ত হওয়ার জন্য চা শ্রমিক নেতারা আবেদন করবেন, যা ডিসির মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে উপস্থাপন হবে। চা শ্রমিকদের অন্যান্য দাবিগুলো লিখিত আকারে ডিসির কাছে দেয়া হবে। ডিসি প্রধানমন্ত্রীর বিবেচনার জন্য তার কার্যালয়ে পাঠাবেন। এ ছাড়া বাগানমালিকরা বাগানের প্রচলিত প্রথা/দর অনুযায়ী ধর্মঘটকালীন মজুরি শ্রমিকদের পরিশোধ করবেন।

ধর্মঘট প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে চা শ্রমিক ইউনিয়ন সিলেট ভ্যালির সভাপতি রাজু গোয়ালা বলেন, ‘আমরা অনেক রাতে এই সিদ্ধান্তের কথা শুনেছি। এখন বিভিন্ন বাগান নেতাদের সঙ্গে কথা বলব, তবে আমরা ইউনিয়নের নেতাদের সিদ্ধান্তে সবসময়ই একমত। তা ছাড়া প্রধানমন্ত্রী আমাদের অভিভাবক। তার আশ্বাসেই ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়েছে।’

ইউনিয়ন নেতাদের এমন সিদ্ধান্তে সাধারণ শ্রমিকরা ক্ষুব্ধ জানিয়ে চা শ্রমিক অধিকার আন্দোলনের সভাপতি রিদেশ মোদি বলেন, ‘আগের মজুরিতেই কাজে ফিরতে হলে আমরা কেন এতদিন না খেয়ে ধর্মঘট করলাম?’

সাধারণ শ্রমিকরা আজ বসে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবে বলেও জানান তিনি।

দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা করার দাবিতে গত ১৩ আগস্ট থেকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট শুরু করেন চা শ্রমিকরা।

ধর্মঘটের ৮ দিনের মাথায় শনিবার দুপুরে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের কার্যালয়ে শ্রম অধিপ্তর ও সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন চা শ্রমিক নেতারা।

বৈঠক শেষে শ্রমিক নেতারা ধর্মঘট প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত জানান, তবে নেতাদের এই সিদ্ধান্ত জানানোর পরই ক্ষোভ প্রকাশ করেন সাধারণ চা শ্রমিকরা।

নেতাদের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জে বিক্ষোভ করেন শ্রমিকরা। তারা ২৫ টাকা মজুরি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ারও ঘোষণা দেন। ওই সময় নেতাদের বিরুদ্ধে বিষেদগারও করেন তারা।

পরে রাতে শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা নিজেদের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। এর এক দিন পরই আগের মজুরি মেনে নিয়ে ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দিলেন শ্রমিক নেতারা।

সংবাদটি শেয়ার করুন


এই বিভাগ থেকে পড়ুন