পতিসর রবীন্দ্র কাছারি বাড়িটি নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলা অবস্থিত বাংলাদেশের অন্যতম একটি সংরক্ষিত পুরাকীর্তি ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সৃতি বিজড়িত স্থান। এটি উপজেলার পতিসর নামক গ্রামে নাগর নদীর তীর অবস্থিত।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নোবাল প্রাপ্তির পর সর্বশেষ ১৯৩৭ সালে পতিসরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতামহ ও জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের অন্যতম সদস্য দ্বারকানাথ ঠাকুর কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের বাংলাদেশে শিলাইদহ, শাহাজাদপুর ও কালিগ্রাম পরগনাসহ মোট তিনটি জমিদারি ছিল।
ভাগবাটোয়ারা সূত্রে রবীন্দ্রনাথের ভাগে পড়ে কালিগ্রাম পরগনা। গোলাম মুরশিদের মতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জমিদারির দায়িত্ব নিয়ে পতিসর আসেন ১৮৯০ সালের ডিসেম্বর মাসে। আহমদ রফিকের মতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৯১ সালের ১৩ জানুয়ারী শাহাজাদপুর হতে পতিসর অভিমুখে রওনা হয়ে সম্ভবত ১৬ জানুয়ারী পতিসর পৌঁছান। পতিসর থেকে স্ত্রী মৃণালিনী দেবীকে পত্রে লেখেন-‘‘আজ আমি কালীগ্রামে এসে পৌঁছালুম, তিন দিন সময় লাগল।’’ কালিগ্রাম স্টেটের কাচারীবাড়ী ছিল পতিসরে । কাচারীবাড়ীটি নাগর নদীর তীরে অবস্থিত।
কাচারীবাড়ীটি নির্মাণের পর ১৯৯১ সালে সংস্কার করা হয়। এখানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজরিত অনেক নিদর্শন রয়েছে। কাচারী বাড়ীটির পাশেই রয়েছে দেবেন্দ্র মঞ্চ ও রবীন্দ্র সরোবর। এখানে প্রতি বছরের ২৫শে বৈশাখ রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী পালন করা হয়।
পতিসর সম্পর্কে তিনি লেখেন-বাংলাদেশের আর পাঁচটা গ্রামের মতই পতিসর ছোটোখাটো একটি গ্রাম, স্থানীয় লোকজনের ভাষায় অবশ্য গন্ডগ্রাম। পতিসর-কালীগ্রাম পরগনার জমিদারির সদর কাছারি এই গ্রামে বলেই এর গুরুত্ব ভিন্ন। এখানে এসে তিনি বৃহৎ গ্রামময় পল্লী বাংলা মানুষের দুঃভরা মুখ দেখতে পেয়েছিলেন। ‘স্বর্গ হইতে বিদায়’ নিয়ে মানুষের কাছে তাঁর অবস্থান নির্ধারণ করে কবি ধূলিধূসরিত মাটির পৃথিবীতে, তাঁর ভাষায় ‘সংসারের তীরে’ নেমে আসেন।
তিনি অনুন্নত পরগনার রাস্তাঘাট নির্মাণ, কূপ, দীঘি, পুকুর খনন, জঙ্গল পরিষ্কার, গ্রাম্য সালিসী ব্যবস্থা ও মহাজনদের সুদের হাত হতে দরিদ্র প্রজাদের রক্ষা করেন। রবীন্দ্রনাথ পরগণার উন্নয়নের পাশাপাশি শিক্ষার দিকে বেশি গুরুত্ব দেন। এ মানুষগুলোর শিক্ষার জন্য তিনি গ্রামে গ্রামে অবৈতনিক শিক্ষা চালু করেন। দাতব্য হাসপাতাল ও পুরাতন একটি কৃষি ব্যাংক যা ১৯০৫ সালে স্হাপিত হয়েছিল। এছাড়াও গড়ে তুলেছিলেন মৃৎশিল্পী।
কালীগ্রাম পরগনার প্রজাদের শিক্ষায় আলোকিত করার জন্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯১৩ সালে তিনটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি নোবেল পুরস্কারের সমুদয় অর্থ কালীগ্রাম পরগনার উন্নয়নে কাজে লাগান। পতিসরে তিনি কালীগ্রাম রথীন্দ্রনাথ ইনস্টিটিউট স্থাপন করেন। ১৯৯১ সাল থেকে ১৯৩৭ সাল পর্যন্ত অসংখ্য কবিতা, গান, গল্প, উপন্যাস ও চিঠিপত্র লিখেছেন। নোবেল প্রাপ্তির পর ১৩৩৭ সালে পতিসরে আসেন।
স্থানটির চারপাশে রবি ঠাকুরের পরিবার কতৃক স্থাপিত বেশ কিছু স্থাপনা রয়েছে। বর্তমানে এখানে রবীন্দ্রনাথের জন্মদিন ও মৃত্যু বার্ষিকীতে বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।
পতিসর কাছারি বাড়িতে থাকাকালীন সময়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গোরা ও ঘরে বাহিরে উপন্যাস এবং বিদায় অভিশাপ কাব্য রচনা করেন।তিনি প্রতিহিংসা,ঠাকুরদা এবং ভারতবাসী প্রবন্ধ ও এই সময়ে রচনা করেন পতিসরের স্থাপনাগুলো দেখতে অনেকটাই শিলাইদহ ও শাহজাদপুরের একই পরিবার কতৃক স্থাপিত স্থাপনাসমূহের মতোই
কিভাবে যাওয়া যায়: জেলা সদস্থাপিতর হতে দূরত্ব ৪৮ কিঃ মিঃ। সড়কপথে যেকোন যানবাহনে যাওয়া যায়।