নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি:
নওগাঁর সুস্বাদু নাক ফজলি আম বাজারে আসছে আগামীকাল ২ জুন । নওগাঁর বরেন্দ্র অঞ্চলের স্বাদে-গুণে অনন্য আম হিসেবে পরিচিত নাক ফজলি সরকারিভাবে বেঁধে দেওয়া সময় হিসেবে আগামীকাল ২ জুন গাছ থেকে নামানো শুরু হবে । উপজেলার আমচাষিরা বর্তমানে গাছ থেকে আম নামানোর জন্য সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে বলে জানা যায়।
দেশে চলমান লকডাউনের কারণে আমের চাহিদা কম থাকায় দাম কমের আশঙ্কা করছেন নওগাঁর আম চাষিরা। জানা যায়, নাক ফজলি আমের গুণাগুণ বিচার বিশ্লেষণ করে দেশের অভ্যন্তরে এবং বিদেশে রপ্তানির জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কৃষি দপ্তর।
নওগাঁ জেলার ধামইরহাট উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ৬৭০ হেক্টর জমিতে আম বাগান রয়েছে। অধিকাংশ বাগানে নাক ফজলি আম রয়েছে। এ ছাড়া গোপালভোগ, ল্যাংড়া, আম্রপালি, হিমসাগর, বারী-৪ ও ৭, আশ্বিনা, ফজলি জাতের আম গাছ আছে। ধামইরহাট উপজেলার কৃষকরা কমবেশি প্রত্যেকের বাড়িতে ২-৩টি করে নাক ফজলি আম গাছ লাগায়। এই উপজেলার প্রায় প্রতিটি বাড়িতে নাক ফজলি আম এখন চাষ হচ্ছে। একটি নাক ফজলি আমের ওজন ৩০০-৪০০ গ্রাম পর্যন্ত। পাতলা চামড়া এবং সরু বিচি যা অন্যান্য আমের চেয়ে আলাদা। মিষ্টতার দিক দিয়ে ন্যাংড়া ও আম্রপালি আমের সমতুল্য। এ আমে কোনো আঁশ না থাকায় খেতে সুস্বাদু।
নাক ফজলি আম বাংলাদেশে শুধুমাত্র নওগাঁ জেলার ধামইরহাট ও বদলগাছী উপজেলায় চাষ হচ্ছে। তবে বর্তমানে পার্শ্ববর্তী পত্নীতলা ও জয়পুরহাট সদর উপজেলার এ আমের বিস্তার ঘটেছে।
আম চাষিদের কাছ থেকে জানা যায়, নাক ফজলি আম ১৯৬৭ সালে আফতাব হোসেন ভান্ডারির মাধ্যমে ধামইরহাট উপজেলার বিস্তার লাভ করে। বনবিভাগের সাবেক এমএলএসএস প্রয়াত আফতাব হোসেন ভান্ডারির দাদার বাড়ি একই জেলার বদলগাছী উপজেলার ভান্ডারপুর গ্রামে। ভান্ডারপুর গ্রামের তৎকালীন জমিদার খুকুমনি লাহেরীর কাছ থেকে তার দাদা এ আমের জাত সংগ্রহ করেন। জমিদার খুকুমনি লাহেরী ভারতের কলকতা থেকে এ আমের জাত সংগ্রহ করে। পরবর্তীতে আফতাব হোসেন ভান্ডারি জোড় কলমের মাধ্যমে আজ থেকে প্রায় ৫৩ বছর পূর্বে ধামইরহাট উপজেলায় এই নাক ফজলি আমের বিস্তার ঘটায়।
আম চাষীদের তথ্য মতে, আগে এ আমের চাহিদা না থাকলেও এখন আম পাকার আগে বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন আম কেনার জন্য অগ্রিম বায়না দিচ্ছেন। যারা একবার এ আমের স্বাদ গ্রহণ করেছে পরবর্তীতে আবারও সংগ্রহের জন্য কৃষকদের নিকট ধরনা দিচ্ছেন। গত বছর একপ্রকার জোর করে দেশের বিভিন্ন স্থানে এই আম দেওয়া হয় , এবছর তারাই অন্য আম নয় বরং নাক ফজলি আম চায় ।
ধামইরহাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোছা. শাপলা খাতুন বলেন, নাক ফজলি আম সব দিক থেকে অনন্য। এ আমকে ব্র্যান্ডিং আম হিসেবে পরিচিতির জন্য ইতিমধ্যে বিল বোর্ডসহ বিভিন্নভাবে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এলাকার চাহিদা মেটানোর পর ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন আম সরবরাহের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আম প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিদেশেও রপ্তানির ব্যবস্থা গ্রহণের প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত মোতাবেক আগামী ২ জুন থেকে গাছ থেকে নাক ফজলি আম নামানো শুরু হবে।