fbpx

ঐতিহ্যবাহী বলিহার রাজবাড়ি

                                           
প্রকাশ : বুধবার, ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১
ঐতিহ্যবাহী বলিহার রাজবাড়ি

নওগাঁ সদর উপজেলা অধীন একটি ঐতিহ্যবাহী গ্রাম বলিহার। নওগাঁ শহর হতে ১৫ কিলোমিটার পশ্চিমে ঐতিহ্যবাহী বলিহার রাজবাড়ি অবস্থান।

রাজশাহী নওগাঁ মহাসড়কের বলিহার কলেজ মোড় বা বাবলাতলি মোড় থেকে পশ্চিম – উওর দিকে এক কিলোমিটার দূরত্বে রাজবাড়িটি অবস্থিত। আবার নওগাঁ মহাদেবপুর মহাসড়কের সরস্বতীপুর বাজারে পশ্চিমে কদম তলী মোড় থেকে দক্ষিণ দিকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরত্বে এটির অবস্থান। এটির অপর নাম পাওয়া যায় কুড়মুড়ি বা কুড়মইল হিসেবে। স্হানটি পুকুর দিঘির জন্য প্রসিন্ধ। স্হানীয় জনসাধারণের মতো প্রাম ছোট বড়ো মিলে ৩৬৫ টি পুকুর বা দিঘি আছে।

বর্তমানে এই রাজবাড়িকে কেন্দ্র করে এখানে ছোট বাজার গড়ে উঠেছে। জানা যায় সপ্তদশ শতাব্দীতে মোগল আমলে এই জমিদারির উদ্ভব ঘঠেছিল। তাঁর আদি নিবাস ছিল ঢাকা জেলার বিক্রিমপুরে। তিনি বিক্রিমপুর হতে নওগাঁ জেলার বলিহারে এসে খাঁ জমিদারিতে চাকরি নেন। চাকুরিতে প্রবেশ করার পর ক্রমান্বয়ে তিনি উচ্চপদে অধিষ্টতিহন। এক পযার্য়ে তিনি খাঁ জমিদার পরিবারের এক দুহিতাকে বিয়ে করে শ্বশুরের কাজ থেকে একটি তালুক লাভ করেন। তালুক লাভ করার পর আয়তন বৃদ্ধি করে বলিহারে বসতি স্হাপন করেন। পরবর্তীতে তালুকের আয়তন বৃদ্ধি পেয়ে বিশাল জমিদারিতে পরিণত হয়।

রাজবাড়ির পূর্বমুখী দ্বিতল প্রবেশ তোরনটি এখানকার আভিজাত্য আজ ও ধারণ করে আছে। প্রবেশপথের সমমুখে দুটি বহির্গত বারান্দা ও দু’ধারে কতগুলো কক্ষের সমন্ধয়ে তোরনটি নির্মিত। স্হানীয় জনসাধারণের মতো প্রবেশ তোরনের দ্বিতলে অবস্থিত কক্ষগুলো অতিথিশালা হিসেবে ব্যবহৃত হতো।এই জমিদারির প্রতিষ্ঠতা নৃসিংহ চক্রবর্তীর পুত্রের নাম গোপাল। গোপালের পূত্র রামকান্ত ছিলেন একজন খ্যাতিমান জমিদার। তিনি নিজের কৃতকর্মের পুরষ্কার স্বরূপ রায় উপাধি লাভ করেন। রামকান্তের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র ও প্রপৌনগন জমিদারির কলেবের বৃদ্ধি করেন।

রামকান্তের ছিল চারজন পুত্র সন্তান। তাঁরা হলেন কৃষ্ণদাস বা কৃষদের রমরাম প্রানকৃষ্ণ ও বিষ্ণুরাম। বড়ো ছেলে কৃষ্ণদাস রংপুরের বাহিরবন্দ, ভিতরবন্দ ও স্বরূপপুর পরগনার জমিদার রানী সত্যবতী বোনকে বিয়ে করেন। বিবাহের কারণে যৌতুক স্বরূপ পরগনার লক্ষণ পুরেরর জমিদারিটি লাভ করেন। রাজবাড়ি সামনে রয়েছে প্রকান্ত তোরন। ভেতরের কম্পডিত্তে নাটমন্দির রাজ রাজেশ্বরী মন্দির, জোড়া শিব মন্দির আর বিশাল তিনতলা বিশিষ্ট জমিদার বাড়ি। যদি বিভিন্ন মন্দিরের দেয়ালের কারুকাজ মূল্যবান রিলিকের কাজগুলো এখন অস্পষ্ট ও ভাঙ্গা। এই কারুকাজগুলো ছিল এই মন্দির গুলো শোভাবর্ধক।

বলিহারের জমিদারি বাড়ি এলাকার ৩৩০ টি দীঘি এবং পুকুর ছিল। এর মধ্যে মালাহার সীতার,বলিহার,অন্তাহারা উল্লেখযোগ্য। প্রাসাদের সামনে একটি ছোট চিড়িয়াখানা ছিল।যেখানে বাঘ,ভাল্লুক, বানর,হরিণ সহ নানা প্রজাতির পশুপাখি ছিল। বলিহারের জমিদার রাজশাহী বিভাগের নওগাঁ জেলার অন্যতম বিখ্যাত জমিদার ছিল।মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের অধীনে নওগাঁর বলিহার এলাকার এক জমিদার জায়গির লাভ করে ছিলেন।

১৮২৩ সালে জমিদার রাজেন্দ্রনাথ এখানে একটি রাজ- রাজেশ্বরী দেবীর মন্দির নির্মাণ করেছিলেন। তৈরি রাজেশ্বরী দেবীর একটি মূর্তি স্হাপন করেছিলেন। মৃর্তটি বলিহাররসহ এই অষ্ণলের প্রসিদ্ধ ছিল বলিহার জমিদার পরিবার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন নৃসিংহ চক্রবতী।

সম্রাট আওরঙ্গজেব কতৃক জায়গির লাভ করে বলিহারের জমিদাররা এ এলাকার নানা স্পাপনা গড়ে তোলেন যায় মধ্যে বলিহার রাজবাড়ী অন্যতম। বলিহার জমিদার বাড়ির অনেক রাজা উচ্চশিক্ষিত ছিলেন।তার মধ্যে কৃষ্ণেন্দ্রনাথ রায় বাহাদুর রাজা বিখ্যাত লেখক ছিলেন তার লেখা উল্লেখযোগ্য গ্রন্হগুলো হলো কৃষ্ণেন্দ্র গৃন্হাবলী প্রথম ও দ্বিতীয় খন্ড। দেশ বিভাগের সময়কালে বলিহারের রাজা ছিলেন বিমেলেন্দ রায় চলে যান ভারতে। এরপর বলিহার রাজবাড়ী ভবনটি দেখভাল করেন রাজ পরিবারের অন্যান্য কর্মচারীরা। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় এবং পরবর্তীতে রাজবাড়ির বিভিন্ন নিদর্শন আসবাবপত্র, জানালা দরজাসহ বিভিন্ন সামগ্রী লুট হয়ে যায়।

পূর্বে রাজবাড়ির একটি ভবন স্হানীয় একটি স্কুলের শেনীকক্ষ হিসেবে ব্যবহৃহ হয়েছিল কিন্তু নতুন স্কুল ভবন নির্মিত হওয়ার রাজ বাড়ি ভবনটি এখন পরিত্যক্ত। প্রাসাদ এর ভিতরে আবস্হিত দেবালয় পৃজা অর্চনার কাজে ব্যবহৃত হয়। এবং প্রাসদের পেছনে বিশাল আকারের ২ টি শিবলিঙ্গ পাশাপাশি রয়েছে।

মোসফিকা আক্তার সাপাহার (নওগাঁ) প্রতিনিধি/দৈনিক দেশান্তর

সংবাদটি শেয়ার করুন


এই বিভাগ থেকে পড়ুন