বিশেষ প্রতিনিধিঃ- ৫ এপ্রিলের মধ্যে শিক্ষকদের পদোন্নতি ও আপগ্রেডেশন না হলে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম স্থগিত রাখার হুশিয়ারি দেয় গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে(বশেমুরবিপ্রবি) শিক্ষক সমিতি। শিক্ষক সমিতি কর্তৃক শিক্ষকদের চাকুরী স্থায়ীকরণ ও খন্ডকালীন শিক্ষকদের বকেয়া পরিশোধ করা সহ সাধারন শিক্ষার্থীদের সার্বক্ষণিক মেডিকেল সেবা প্রদান ও নানাবিধ সমস্যা সমাধানে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বশেমুরবিপ্রবিতে শিক্ষক সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদের ১০/০২/২০২১ তারিখের সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক এক সাধারন সভার আয়োজন করা হয়। উক্ত সভায় প্রায় ১২৮ জন শিক্ষকের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহনে পূর্বনির্ধারিত এজেন্ডাভিত্তিক বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। সভায় উপস্থিত শিক্ষকগন প্রাপ্যতার তারিখ (ডিউ ডেট) থেকে প্রমোশন, শিক্ষা ছুটিতে থাকা শিক্ষকদের চাকুরী স্থায়ীকরণ, পারিতোষিক হার যুগোপযোগীকরণ, খন্ডকালীন শিক্ষকদের বকেয়া বেতন পরিশোধ, বহিঃস্থ বিভাগে পাঠদানের জন্য সম্মানী প্রদান, প্রত্যেক শিক্ষকের জন্য আলাদা বসার ব্যবস্থা, স্বতন্ত্র বাস-সেবা চালুকরণ, শিক্ষার্থীদের জন্য সার্বক্ষণিক মেডিকেল সেবা প্রদান, বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল নির্মানের জন্য পদক্ষেপ গ্রহন, প্লাজারিজম চেক করার জন্য সফটওয়্যার ক্রয় করাসহ বিভিন্ন জার্নাল এবং বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাব পরিচালনার জন্য কমিটি গঠন সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ন বিষয় নিয়ে মতামত ব্যক্ত করেন। বিশেষ করে, সভায় উপস্থিত শিক্ষকগণ প্রাপ্যতার তারিখ(ডিউ ডেট) হতে পদোন্নতি এবং শিক্ষা ছুটির বিপরীতে থাকা শিক্ষকদের চাকুরী স্থায়ীকরণ নিয়ে প্রশাসনের দীর্ঘসূত্রিতা, কালক্ষেপণ এবং উদাসীনতা বিষয়টি উল্লেখ করে হতাশা জ্ঞাপন করেন।
ইতিপূর্বে এ বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে শিক্ষক-সমিতি বিভিন্ন সময় আনুষ্ঠানিকভাবে দাবি উপস্থাপন করেছেন বলে জানা যায়। এমনকি, বিগত ২১/১২/২০২০ তারিখের সর্বশেষ সাধারণ সভা হতে গৃহীত সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রাপ্যতার তারিখ (ডিউ ডেট) হতে আপগ্রেডেশনের জন্য বিগত শিক্ষক সমিতি সাধারণ শিক্ষকদের নিয়ে ২৩-৩১ ডিসেম্বর ২০২০ পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে মানববন্ধন এবং অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। পরবর্তীতে ৩১ ডিসেম্বর ২০২০ পর্যন্ত উপাচার্য মহোদয় আন্দোলনরত শিক্ষকদের সাথে আলোচনায় বসতে চাইলে উপস্থিত শিক্ষকগণ উপাচার্যের সাথে আলোচনায় বসেন। উপাচার্য মহোদয় শিক্ষকদের সকল দাবি মনোযোগ সহকারে শোনেন এবং মৌখিকভাবে আধুনিক সুবিধাসহ প্রাপ্যতার তারিখ (ডিউ ডেট) হতে পদোন্নতি এবং শিক্ষা-ছুটির বিপরীতে থাকা শিক্ষকগণের চাকুরী স্থায়ীকরণের বিষয়টি অতিদ্রুত সমাধানের আশ্বাস দিলে তৎকালীন শিক্ষক সমিতি তাদের কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিতে সম্মত হন। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় এই যে, এই সকল দাবী বাস্তবায়নের বিগত ৩ মাসেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। আরো উল্লেখ্য যে, তৎকালীন শিক্ষক সমিতির দাবির মুখে জানুয়ারি ২০২১ সাল থেকে বিভিন্ন বিভাগের পদোন্নতি বোর্ড শুরু হলেও মার্চ মাসের শেষার্ধে এসেও তা শেষ করতে না পারা, বিচ্ছিন্ন সময় ভাইভা বোর্ড আহ্বান করে অজানা কারণে সেটি পিছিয়ে দেওয়া এবং ২১/১২/২০২০ তারিখে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের পক্ষ হতে গঠিত ৫ সদস্য বিশিষ্ট আপগ্রেডেশন নীতিমালা সংশোধন কমিটির সুপারিশ আমলে না নেওয়া, বিভিন্ন সময়ে বর্তমান শিক্ষক সমিতির সদস্যদের সাথে মাননীয় উপাচার্য মহোদয়ের আলোচনায় প্রাপ্যতার তারিখ হতে আর্থিক সুবিধা সহ প্রমোশন নিয়ে ধোঁয়াশা থাকায় সাধারণ শিক্ষকগণের মধ্যে বর্তমান প্রশাসনের এহেন কর্মকাণ্ড এবং উদ্যোগ চরম হতাশা ও ক্ষোভের সঞ্চার করেছে ।
তারা বলেন, বর্তমান উপাচার্য মহোদয় দায়িত্ব নেওয়ার ৭ মাস পেরিয়ে গেলেও রিজেন্ট বোর্ডের সভা আহ্বানের এখতিয়ার না থাকায় এবং বর্তমান উপাচার্য মহোদয় দায়িত্ব নেওয়ার ৭ মাস পেরিয়ে গেলেও রিজেন্ট বোর্ডের সভা আহ্বান না করায় প্রায় ১৫০ জন শিক্ষক সাড়ে ৩ বছর হতে নূন্যতম ৬ মাস যাবৎ পদোন্নতি আপগ্রেডেশন থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছেন।
এমতাবস্তায়, শিক্ষকদের সাধারণ সভা হতে গৃহীত সিদ্ধান্ত মোতাবেক সিদ্ধান্ত
শিক্ষক ক্লাব পরিচালনার জন্য ড.হাসিবুর রহমানকে আহবায়ক এবং ড.নিশীথ কুমারকে সদস্যসচিব করে এবং ড.মোহাম্মদ কামাল হোসেন, জনাব আবুল বাশার রিপন খালিফা,ড.দীপঙ্কর কুমার, জনাব জাকিয়া সুলতানা মুক্তাসহ ৬ সদস্যের ক্লাব পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয় এবং ৫ এপ্রিল ২০২১ এর মধ্যে শিক্ষকদের পদোন্নতি সংক্রান্ত যৌক্তিক, ন্যায্য এবং মৌলিক দাবি আদায় না হলে ৬ এপ্রিল ২০২১ হতে সকল শিক্ষক একযোগে অনির্দিষ্টকালের জন্য একাডেমিক এবং প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ রাখবেন বলে জানান তারা। তারা বলেন, এ নিয়ে প্রশাসনের পক্ষ হতে গড়িমসি হলে শিক্ষক সমিতি যেকোন ধরনের কঠোর কর্মসূচি পালনে বাধ্য হবেন।
এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড.এ কিউ এম মাহাবুব বলেন;
শিক্ষকরা আল্টিমেটাম দিতেই পারে তাদের পয়েন্টের ভিউতে। আমি তো একজন উপাচার্য, কতগুলো নিয়মের মধ্যে আমাকে কাজ করতে হয়। আমার ক্ষমতা ও সীমাবদ্ধ। আমি চাইলেই সব কিছু করতে পারিনা। ইউজিসি আছে, মন্ত্রণালয় আছে। ইউজিসির নিকট আমি তাদের দাবিগুলো পেশ করব। তারা যথা সময়ে সমাধান দিতে না পারলে আমি কি করতে পারি? তিনি আরো বলেন সব কিছুরই নিয়ম কানুন আছে। শিক্ষা ছুটিতে থাকা শিক্ষকদের চাকুরী স্থায়ীকরন ব্যাপারে তিনি বলেন, প্রত্যেকটা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য তিন মাস, চার মাস বা ৬ মাস পর পর পদ চেয়ে ইউজিসির নিকট আবেদন করে। গত তিন বছরে পদ চেয়ে তারা কেউ আবেদনই করেনি। তিন বছরের কাজ তো আমি তিন মাসে করতে পারব না।
শিক্ষকদের বিভিন্ন দাবি দাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন; আমি আসার আগে একজন ডাক্তার ও ছিলনা। আমি এসে একজন ডাক্তার নিয়োগ দিয়েছি। আমার একাডেমিক বিল্ডিং এর কাজ এখনো শেষ হয়নি।জায়গার তুলনার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি। প্রত্যেকটা জায়গায় সমস্যা।শিক্ষকদের যে দাবিগুলো উঠে এসেছে তা একদিনে পূরন করা সম্ভব না।