মোঃ আঞ্জুমান হোসেনঃ গরিব ঘরে জন্মালেও স্বপ্ন ছিল আকাশচুম্বী। ইচ্ছা ছিল সার্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জনের। কিন্তু মেধাবী এ ছাত্রীর সব স্বপ্নই চুরমার করে দিল নানা-নানি। মাত্র ১৫ বছর বয়সে ৩৬ বছরের এক যুবকের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয়। বাসর ঘরে গিয়ে কিশোরী বধূ জানলেন স্বামী এর আগেও তিনটি বিয়ে করেছেন। আর এ নিয়ে অভিমানে বেছে নেন আত্মহত্যার পথ। মেহেদি রাঙা হাত নিয়েই জীবনের ইতি টানেন নববধূ।
সোমবার বিকেলে উপজেলার কাজিপুর গ্রাম থেকে মিতার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তার স্বামীর নাম রফিকুল ইসলাম। তিনি একই গ্রামের বাসিন্দা। রোববার বিকেলে পরিবারের চাপে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে বাধ্য হন মিতা।
স্থানীয়রা জানায়, মিতার স্বামী রফিকুল প্রথমে ভারতীয় এক মেয়েকে বিয়ে করেন। এরপর তাদের বিচ্ছেদ হয়। বছর দুয়েক আগে তিনি আরো দুটি বিয়ে করেন। কিন্তু এক সপ্তাহ না যেতেই তারাও চলে যান। এটি ছিল তার চতুর্থ বিয়ে। কোনো স্ত্রীকে ভাত-কাপড় না দেওয়ায় এমনটি হয়েছে বলে দাবি স্থানীয়দের।
মিতার স্বজনরা জানান, মিতার বাবা মহিদুলের বাড়ি কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার ধর্মদহ গ্রামে। বাবার সঙ্গে মা ববিতা খাতুনের ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর কাজিপুর হালশানাপাড়ায় নানা ইন্নাল হকের কাছে চলে আসেন মিতা ও তার মা। সেখানে থেকেই মিতা লেখাপড়া করতেন আর মা ববিতা খাতুন ঢাকায় গার্মেন্টসে কাজ করেন।
মিতার নানি মর্জিনা খাতুন বলেন, ‘আমি কোলে-পিঠে করে মানুষ করেছি। অভাবের সংসার আমার। তাই বিদেশি ছেলের সঙ্গে সুখে থাকবে বলে নাতনিকে বিয়ে দেই। কিন্তু নাতনি আমাদের ছেড়ে চলে গেল।
জানা গেছে, বাল্যবিয়ের ভয়ে বাড়ি ছেড়ে সাহেবনগর গ্রামে এক আত্মীয়ের বাড়িতে চলে যান মিতা। তবু রক্ষা পাননি তিনি। নানাবাড়ির লোকজন ধরে এনে জোর করে রফিকুলের সঙ্গে বিয়ে দেন। আর এ ক্ষোভ থেকেই আত্মহত্যা করেন।
কাজিপুর মধ্যপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাবীবা দিপা বলেন, মিতা অত্যন্ত মেধাবী ছিল। কোনো ছেলের সঙ্গে কখনো কথা বলতে দেখিনি। তার এ সুন্দর জীবনটা নিয়ে খেলা করা হয়েছে। সত্যিই খুব দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে।
গাংনী থানার ওসি বজলুর রহমান জানান, লাশ উদ্ধার করে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। তবে এটি হত্যা নাকি আত্মহত্যা তা এখনই বলা যাচ্ছে না। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর আসল কারণ জানা যাবে। এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে।