‘বেদনা স্বাদ’ গল্পগ্রন্থটি তরুণ লেখিকা হামিদা আব্বাসীর ১২টি চমৎকার এবং ব্যতিক্রমী গল্পের সমন্বয়ে রচিত।
প্রচ্ছদটিতে দেখা যাচ্ছে একজন ব্যক্তি যার একপাশে হতাশার হাতছানি অপরপাশে দুঃখের গ্লানি মুছে সুখের হাতছানির বিবরণ।
গ্রন্থটিতে লেখিকা সমাজের নানান দিক যেমন হতাশাগ্রস্ত, জীবনের প্রতি অতিষ্ঠ হয়ে যাওয়া মানুষদের নতুন করে বাঁচা, নতুন করে ভাবা, নিজের জীবনকে সাফল্যের শিখরে আরোহন করার প্রেরণা জাগিয়ে তুলেছেন। আমাদের সমাজে সকল শ্রেণির মানুষ অর্থাৎ ধনী, মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত বা তরুণ, প্রবীণ সকলেই বিভিন্নভাবে বিষাদগ্রস্ত থাকেন। কেউ প্রেম, কেউ আবার পরিবারের আর্থিক অস্বচ্ছলতা, কেউ বা নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে অতিমাত্রায় ভেবে নিজের জীবনকে মূল্যহীন ভাবা শুরু করে।
গ্রন্থটির একেকটি গল্পে লেখিকা এমন কিছু চরিত্রের চিত্রায়ণ করেছেন যারা একসময় জীবনকে হতাশার অতল সাগরে ডুবিয়ে দিচ্ছিলো কিন্তু পরবর্তীতে তাদেরই দৃঢ় মনোবল ও পরিশ্রমের ফলে তারা জীবনকে পূনরায় উপভোগ করতে শুরু করে এবং অন্যদেরকেও জীবনের সৌন্দর্য বুঝাতে চেষ্টা করে। যা থেকে সমাজের দরিদ্র, প্রতারণার শিকার হয়ে হাতাশায় থাকা মানুষরা অনুপ্রেরণা পাবে।
এই গ্রন্থের একটি গল্পে লেখিকা বঙ্গবন্ধুর অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে আমরা যে স্বাধীনতা পেয়েছি তা চিত্রায়ণ করেছেন।
গ্রন্থের অন্যতম একটি আকর্ষণীয় গল্পটিতে তিনি এক দম্পতির ঝগড়া-বিবাদ থেকে বেড়িয়ে সুন্দরভাবে সংসারধর্ম পালনের চিত্রায়ন করেছেন।
অপর একটি গল্পে বর্তমান সমাজের একটি স্বাভাবিক অসভ্যতা তথা ইভটিজিংয়ের কবলে পরে নিজের জীবন, নিরাপত্তা ও পড়াশুনা নিয়ে শঙ্কিত হওয়া এক মেয়েকে মায়ের বন্ধুত্বসুলভ আচরণের মাধ্যমে মেয়েকে দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দিয়ে সুখের আবরণে আনার চিত্র ফুটে উঠেছে।
অপর গল্পে আত্মরক্ষার্থে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা অপরাধবোধ কাটাতে চাকরি ছেড়ে বিভীষিকাময় জীবন থেকে বাঁচতে সফল উদ্যোক্তার চিত্র এঁকেছেন।
অন্য একটিতে প্রেমিকার উপেক্ষায় অসহ্য হয়ে যাওয়া বকুল সব হতাশাকে ছাপিয়ে, অদম্য ইচ্ছেশক্তি নিয়ে পথ চলে হয়েছেন জীবনে সফল। পেয়েছেন চাকরি ও গুণবতী, রূপবতী সঙ্গিণী।
গল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি গল্প যাতে একটি ভেঙে পরা পরিবারের ঘুরে দাঁড়ানোর ইতিহাস চিত্রায়ণ হয়েছে। যেখানে একদিকে সর্বস্ব দিয়ে এক স্ত্রী তার স্বামীর চিকিৎসা করিয়েছে অতঃপর স্বামীর সুস্থতায় আবার তাদের পরিবার স্বচ্ছল হতে শুরু করে।
অপর এক গল্পে শিক্ষিত হয়েও চাকুরীর উপর ভরসা না করে দুই বন্ধু উদ্যোক্তা হয় যাতে তাদের পরিবারও তারা সুখে জীবন-যাপন করে।
এভাবেই বইটিতে লেখিকা সমাজের সকলস্তরের মানুষের কথা তুলে এনেছেন এবং অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন জীবন চলার পথে।
গ্রন্থটির অন্যতম আকর্ষণীয় ও ব্যতিক্রম দিক হলো গল্পকার বইটির পরিশিষ্ট অংশে সুখ ও বেদনার সংজ্ঞা নির্ণয় করতে গিয়ে বেশ কয়েকজনের মতামত সমন্বয় করেছেন।
গ্রন্থ: বেদনার স্বাদ
ধরন: গল্পগ্রন্থ
প্রকাশনী: জুঁই প্রকাশ
প্রচ্ছদ: মাহবুব আলম
শিক্ষার্থী, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়,সিলেট|