fbpx
সংবাদ শিরোনাম
মেহেরপুরে সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রী ও পুলিশ সুপারসহ ১৯ জনের নামে হত‍্যা মামলা মিরসরাইয়ে পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যকরী কমিটির শপথ গ্রহণ ঐতিহ্যবাহী নদী ও বিল দখল রোধে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে- পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান কর্মকর্তাদের আইন মেনে পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করার আহবান নবনিযুক্ত স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার ছাত্র-শিক্ষক,কর্মকর্তা ও কর্মচারী রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছে ববি কর্তৃপক্ষ  মেহেরপুরের গাংনীতে বিএনপির বিজয় সমাবেশ কোটা আন্দোলনকারীদের ৯ দফার পাশাপাশি; ববির প্রেক্ষাপটে চারদফা দাবি শিক্ষার্থীদের যশোরে কোটা আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার অভিযোগ স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে ইন্টারনেটের অভাবনীয় শক্তি কাজে লাগাতে হবে: জুনাইদ আহমেদ পলক কোটার বিষয়ে আদালতকে পাশ কাটিয়ে কিছুই করবে না সরকার: আইনমন্ত্রী

সাদাকাতুল ফিতর সম্পর্কিত বিধান বা মাসআলা

                                           
এইচ এম জহিরুল ইসলাম মারুফ
প্রকাশ : বৃহস্পতিবার, ১৩ মে, ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ 

সাদাকাতুল ফিতর কি?

কেনো?কখন আদায় করতে হবে?কার উপর আদায় করতে হবে??কতটুকু আদায় করতে হবে??

‘সাদাকাহ্’ মানে দান-খয়রাত এবং ‘আল-ফিতর’ মানে রোজা ভেঙে পানাহারের বৈধতা। অর্থাৎ রমজান শেষে পানাহারের বৈধতার সুযোগ প্রাপ্তিতে কিছু দান করা এবং ‘ঈদুল ফিতর’ মানে রমজানের শেষে পানাহারের বৈধতা দানের আনন্দে খুশি। (সূত্র: কাওয়াঈদু ফিকহ্ ইসলামী)

সাদাকাতুল ফিতর মানে নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিকের উপর ঈদুল ফিতরের দিন সুবহে সাদেকের সময় থেকে যে ‘দান’ ওয়াজিব হয়। অন্যভাবে বলা যায়, ঈদুল ফিতরের দিন সুবহে সাদেকের সময় যার নিকট জাকাত ওয়াজিব হওয়া পরিমাণ অর্থ-সম্পদ থাকে শুধু তার উপরই সাদকাতুল ফিতর ওয়াজিব।

মূলত মাহে রমজানের রোজা পালনের মাধ্যমে আল্লাহ্ তায়ালার বান্দার প্রতি যে অফুরন্ত নিয়ামত দান করেছেন, তার শোকর হিসেবে এবং রোজা পালনের ত্রুটি বিচ্যুতির ক্ষতিপূরণ বিবেচনায় সাদাকাতুল ফিতর ওয়াজিব করা হয়েছে।

ফিতরা কেনো নির্ধারণ করা হলো??

ইসলাম মানবতাবাদী ধর্ম।সম্প্রীতি ও সহমর্মিতার শিক্ষা প্রদান করে। ধনী-গরিব সকলে যেন ঈদ উৎসবে সমানভাবে আনন্দ উপভোগ করতে পারে সেজন্য এই সাদাকাতুল ফিতরা নির্ধারণ করা হয়েছে।

ফিতরা মূলত রোজার জাকাত। জাকাত যেমন মালকে পবিত্র করে, ঠিক তেমনি ফিতরাও রোজাকে পবিত্র করে।

এ প্রসঙ্গে ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্নিত, রাসূল (সা.)বলেন, সদকায়ে ফিতর নির্ধারণ করেছেন রোজাকে অনর্থক কথা ও অশ্লীল ব্যবহার হতে পবিত্র করার এবং গরিবের মুখে অন্ন দেওয়ার জন্য। (সূত্র : মেশকাত শরীফ ও আবু দাউদ)

অন্য সাহাবী থেকে বর্নিত, সিজদায়ে সাহু যেমন নামাজের ক্ষতিপূরণ, তেমনি সাদাকাতুল ফিতর রোজার ক্ষতিপূরণ।

ফিতরা কার উপর ওয়াজিব

নিসাব পরিমাণ তথা সম্পদশালী ব্যক্তির নিজের পক্ষ থেকে, নাবালক সন্তানদের পক্ষ থেকে সাদাকাতুল ফিতর ওয়াজিব হয়। পরিবারস্থ স্ত্রী, কন্যা ও রোজগার বিহীন সাবালক সন্তানের পক্ষ থেকে সাদাকাতুল ফিতর প্রদান করা উত্তম। তবে ওয়াজিব নয়। (সূত্র: হিদায়া, আলমগীরী-১খন্ড)

ফিতরার পরিমাণ

সদাকায়ে ফিতর সম্পর্কিত হাদীসগুলো পর্যালোচনা করলে এ বিষয়ে মোট পাঁচ প্রকার খাদ্যের বর্ণনা পাওয়া যায়: যব, খেজুর, পনির, কিসমিস ও গম। এ পাঁচ প্রকারের মধ্যে যব, খেজুর, পনির ও কিসমিস দ্বারা সদকা ফিতর আদায় করতে চাইলে প্রত্যেকের জন্য এক সা’( ৩কেজী ৩০০গ্রাম) দিতে হবে। আর গম দ্বারা আদায় করতে চাইলে আধা ‘সা’(১কেজী ৬৫০গ্রাম) দিতে হবে। এটা হল ওজনের দিক দিয়ে তফাত। আর মূল্যের দিক থেকে তো পার্থক্য রয়েছেই। যেমন-

(ক) আজওয়া (উন্নতমানের) খেজুরের মূল্য প্রতি কেজি ১০০০/- টাকা হলে একজনের সদকায়ে ফিতর দাঁড়ায় ৩২৫৬/- তিন হাজার দুই শত ছাপ্পান্ন টাকা।

(খ) মধ্যম ধরনের খেজুর যার মূল্য প্রতি কেজি ৩০০/- টাকা হলে একজনের সদকায়ে ফিতর দাঁড়ায় ৯৭৭/- নয়শত সাতাত্তর টাকা।

(গ) কিসমিস প্রতি কেজি ২৩০/- টাকা করে হলে একজনের সদকায়ে ফিতর দাঁড়ায় ৭৪৮/- (সাত শত আটচল্লিশ) টাকা।

ঘ) পনির প্রতি কেজি ৫০০/- টাকা করে ধরা হলে একজনের সদকায়ে ফিতর দাঁড়ায় ১৬২৮/- (এক হাজার ছয় শত আটাশ) টাকা।

ঙ) গম প্রতি কেজি ৩৫/- টাকা হিসাবে ধরা হলে একজনের সদকায়ে ফিতর দাঁড়ায় ৫৭ টাকা।

হাদীসে এ ৫টি দ্রব্যের যেকোনোটি দ্বারা অথবা তার মূল্য দিয়ে ফিতরা আদায়ের সুযোগ দেওয়া হয়েছে যেন মুসলমানগণ নিজ নিজ সামর্থ্য ও সুবিধা অনুযায়ী এর যেকোনো ১টি দ্বারা তা আদায় করতে পারে। এখন লক্ষণীয় বিষয় হল, আজকাল সামর্থ থাকার পরও গম(আটা)দিয়ে আদায় করে। যা আমাদের মাযহাবে কোনভাবেই উচিৎ নয়।

সকল শ্রেণীর লোক যদি সবচেয়ে নিম্ন মূল্য-মানের দ্রব্য দিয়েই নিয়মিত সদকা ফিতর আদায় করে তবে হাদীসে বর্ণিত অন্য চারটি দ্রব্যের হিসেবে ফিতরা আদায়ের উপর আমল করবে কে? আসলে এক্ষেত্রে হওয়া উচিত ছিল এমন যে, যে ব্যক্তি উন্নতমানের আজওয়া খেজুরের হিসাবে সদকা ফিতর আদায় করার সামর্থ্য রাখে সে তা দিয়েই আদায় করবে। যার সাধ্য পনিরের হিসাবে দেওয়ার সে তাই দিবে। এর চেয়ে কম আয়ের লোকেরা খেজুর বা কিসমিসের হিসাব গ্রহণ করতে পারে। আর যার জন্য এগুলোর হিসাবে দেওয়া কঠিন সে আদায় করবে গম দ্বারা। এটিই্ উত্তম নিয়ম। এ নিয়মই ছিল নবী, সাহাবা-তাবেঈন ও তাবে তাবেঈনের স্বর্ণযুগে। এ পর্যন্ত কোথাও দুর্বল সূত্রে একটি প্রমাণ মেলেনি যে, স্বর্ণযুগের কোনো সময়ে সব শ্রেণীর সম্পদশালী সর্বনিম্ন মূল্যের দ্রব্য দ্বারা সদকা ফিতর আদায় করেছেন। বরং উচ্চ মূল্যের জিনিস দিয়ে আদায় করতেন।

ইমাম আবু হানীফা রাহ.-এর নিকটেও অধিক মূল্যের দ্রব্যের দ্বারা ফিতরা আদায় করা ভালো। অর্থাৎ যা দ্বারা আদায় করলে গরীবের বেশি উপকার হয় সেটাই উত্তম ফিতরা

(সূত্র: শামায়েল)

জাকাতের অনুরূপ সাদাকাতুল ফিতরের ক্ষেত্রে পুরো বছর নিসাবের মালিক থাকা আবশ্যক নয়। কেবল ঈদুল ফিতরের দিন সুবহে সাদেকের পূর্বে মুহূর্তে নিসাব পরিমাণ মাল থাকা বিবেচ্য।

পরিশেষে, মহান আল্লাহর তায়ালার কাছে এই কামনা করি,আল্লাহ তায়ালা সকলকে নেক আমল হিসেবে সাদাকাতুল ফিতর আদায় করার তাওফিক দান করুক। আমিন।

লেখক-এইচ এম জহিরুল ইসলাম মারুফ।

শিক্ষার্থী-জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম দিলুরোড মাদরাসা,৩৯/এ দিলুরোড,নিউ ইস্কাটন,রমনা ঢাকা-১০০০

সংবাদটি শেয়ার করুন


এই বিভাগ থেকে পড়ুন