লাউ বা কদু (বৈজ্ঞানিক নাম: Lagenaria siceraria) শীতকালীন সবজিগুলোর মধ্যে অন্যতম। লাউ এক প্রকার লতানো উদ্ভিদ যা এর ফলের জন্যে চাষ করা হয়, যা কিনা কাঁচা অবস্থায় সবজি হিসেবে খাওয়া হয়, আর পরিপক্ব অবস্থায় শুকিয়ে এটি বোতল, পাত্র বা নল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এ কারণেই লাউ এর ইংরেজি নাম হয়েছে Bottle gourd। কচি লাউয়ের রং হালকা সবুজ, ভেতরে সাদা রঙের শাঁস। লাউ পৃথিবীর অন্যতম পুরনো চাষ হওয়া সবজি, এর জন্ম আফ্রিকায়। লাউ একটি ধ্বনি পরিবর্তিত শব্দ, যার মূল শব্দ ‘অলাবু’। লাউকে কোন কোন স্থানে আঞ্চলিক ভাষায় কদু বলা হয়। কচি লাউয়ের রং হালকা সবুজ, ভেতরে সাদা রঙের শাঁস।
এটি সবজি হিসেবে খাওয়া হয়। শুধু লাউ নয়, লাউয়ের বাকল, লতা, এমনকি পাতাও খাওয়া যায়।বাংলার বিখ্যাত লালন সংগীত “সাধের লাউ, বানাইলো মোরে বৈরাগী” লাউ নিয়ে একটি বিখ্যাত গান।[চারা তৈরির পদ্ধতি : ছোট ছোট পলিথিন ব্যাগে ১ ভাগ পচা গোবর, ১ ভাগ দোঁআশ মাটি ভালোভাবে মিশিয়ে তাতে হালকা ইউরিয়া মিশ্রিত পানি দিয়ে পাঁচদিন রেখে দিতে হবে। এরপর প্রতি পলিথিনে একটি করে বীজ বপন করতে হবে। বীজ বপনের আগে ১২ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে।
চাষ প্রণালি: একটি হাফ ড্রামে তিনটি ছিদ্র করতে হবে ১ দশমিক ৫ ইঞ্চি করে। তারপর ছিদ্রের ওপর ইটের সুরকি বসাতে হবে। ২ ভাগ বেলে দো-অাঁশ মাটির সঙ্গে ১ ভাগ গোবর, শূন্য দশমিক ৫ কেজি সরিষার খৈল, ৫ কেজি কচুরিপানা পচা, ৫০ গ্রাম টিএসপি, ২৫ গ্রাম ইউরিয়া একসঙ্গে মিশিয়ে সাতদিন রাখতে হবে। তারপর চারা রোপণ করতে হবে। লাউ গাছ যাতে ঠিকমতো বাইতে পারে সে জন্য একটি মাচার ব্যবস্থা করতে হবে।
যদি কেউ লাউ ছাদের মেঝেতে শুইয়ে দিতে চায় তাহলে নারকেলের ছোবড়া বিছিয়ে তার ওপর শুইয়ে দিতে পারেন। লাউ পানিপ্রিয় গাছ। মাছ-মাংস ধোয়া পানি মাঝে মধ্যে দিলে উপকার পাওয়া যায়। এ ছাড়াও প্রতিদিন সকাল-বিকালে পানি দিতে হবে। কারণ ছাদের গাছে পানি একটু বেশি প্রয়োজন হয়। প্রতিটি হাফ ড্রামে একটি করে চারা রোপণ করা যাবে। লাউয়ের ভালো জাতগুলোর মধ্যে : হাইব্রিড_ মার্টিনা, ডায়না, বর্ষা ও তাফসি। উফশীর মধ্যে_ গ্রিন ডায়মন্ড, বারি লাউ ও ক্ষেত লাউ। এগুলো ছাড়াও বাড়ির ছাদে শিম, পেঁপে, টমেটো, ঢেঁড়শ, পুঁই শাক চাষ করা সম্ভব।
লাউ উপকারিতাঃ
লাউয়ে প্রচুর জল থাকে, যা দেহের জলের পরিমাণ ঠিক রাখতে সাহায্য করে। ডায়রিয়া জনিত জলশূন্যতা দূর করতে সাহায্য করে।
লাউ খেলে ত্বকের আর্দ্রতা ঠিক থাকে।
প্রস্রাবের সংক্রমণজনিত সমস্যা দূর হয়। কিডনির কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। উচ্চ রক্তচাপবিশিষ্ট রোগীদের জন্য এটি আদর্শ সবজি।
এই সবজি দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। ইনসমনিয়া বা নিদ্রাহীনতা দূর করে পরিপূর্ণ ঘুমের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
লাউয়ে রয়েছে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস, যা দেহের ঘামজনিত লবণের ঘাটতি দূর করে। দাঁত ও হাড়কে মজবুত করে। ক্যালরির পরিমাণ কম থাকায় ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যও লাউ যথেষ্ট উপকারী। ডায়েটিং কালেও লাউ ভালো ফল দেয়।
চুলের গোড়া শক্ত করে এবং চুল পেকে যাওয়ার হার কমায়। কোষ্ঠকাঠিন্য, অর্শ, পেট ফাঁপা প্রতিরোধে লাউয়ের রয়েছে সহায়ক গুণাবলি।