নওগাঁ জেলা প্রতিনিধিঃ সারাদেশের ন্যায় নওগাঁ জেলার ধামইরহাটেও কঠোর লকডাউনের কারণে ডেইরী ফার্মের মালিকরা দুধ নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে। লকডাউনের মিষ্টি ও দইয়ের দোকান বন্ধ থাকায় প্রচুর পরিমাণে দুধ উৎপাদন হলেও ক্রেতা ও দাম না থাকায় অনেক খামারী লোকসানের মধ্যে পড়েছে। খামারের গরুর খাদ্য ও খামারের দৈনন্দিন খরচ যোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছেন। তাদেরকে বাঁচাতে বিকল্প উপায়ে তাদের দুধ ক্রয়ের ব্যবস্থা করতে সরকারের কাছে জোর দাবী জানিয়েছেন খামারীরা। এছাড়া সরকারি প্রণোদনার দাবী জানিয়েছেন।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে,এ উপজেলার প্রায় ১১ হাজার ৩শতটি ডেইরী খামার রয়েছে। এর মধ্যে ৭০-৭৫টি খামারে শুধু উৎপাদন হয়। দুধ উৎপাদনের জন্য ৩০-৩৫টি খামার রয়েছে এ কাটাগরির। এসব খামারে উন্নতমানের দুধের গাভী রয়েছে। এসব গাভী ক্রয় করতে খামারীদের প্রচুর পরিমাণে অর্থ বিনিয়োগ করতে হয়েছে। বিভিন্ন সংস্থা থেকে তারা ঋণ গ্রহণ করে খামার তৈরি করেছেন। অনেক খামারী গাভী থেকে সবেমাত্র দুধ পেতে শুরু করেছেন। চলমান লকডাউনের আগে মোটামুটি বাজারের দুধের চাুহিদা ছিল।
কিন্তু লকডাউন শুরু থেকে বাজারের মিষ্টিসহ বিভিন্ন হোটেল রেস্তোঁরার দোকান বন্ধ হওয়ায় দুধের চাহিদা শতভাগ কমে গেছে। এছাড়া বিবাহসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান বন্ধ থাকায় দুধের চাহিদা তলানিতে ঠেকেছে। রমজান মাসে প্রতি লিটার ৬০টাকা দরে দুধ বিক্রি হলেও এখন ৪০ টাকায় কেউ নিতে চায় না। এব্যাপারে ধামইরহাট উপজেলা ডেইরী ফার্ম এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও উত্তর চকযদু বিসমিল্লাহ ডেইরী ফার্মের স্বত্বাধিকারী মিনহাজুল হক সরকার শিবলী বলেন,তার খামারে ৬টি বিদেশী গাভী প্রতিদিন প্রায় ৪০ লিটার দুধ দেয়। লকডাউনের কারণে দই,মিষ্টি ও হোটেল রেস্তোরা দোকান বন্ধ থাকায় কেউ আর দুধ কিনতে আসে না। বর্তমান প্রতিদিন দুধগুলো ফ্রিজে সংরক্ষণ করা হচ্ছে।
এতে তিনি আর্থিকভাবে চরম সংকটে পড়েছেন। পৌরসভার অন্তর্গত হাটনগর গ্রামের সাঈদ ডেইরী ফার্মের সত্বাধিকারী মো.আবু সাঈদ বলেন,তার খামারে বর্তমানে ৮টি গাভী প্রতিদিন ৮৫ লিটার দুধ দেয়। লকডাউনের আগে খামার থেকে ব্যবসায়ী ও খুচরা বিক্রেতাগণ দুধ ক্রয় করতো। এখন বাড়ী বাড়ী গিয়ে দুধ পৌঁছে দেয়ার পরও প্রতি লিটার দুধের মূল্য পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৪০ টাকা। অথচ গাভীর খাদ্য ও শ্রমিকের মজুরী আগের মতো পরিশোধ করতে হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে খামার নিয়ে তিনি চরম সংকটে পড়বেন। বাধ্য হয়ে তিনি অধিক পরিমাণে দুধ বাচ্চুরকে খাওয়াচ্ছেন।
উপজেলার আঙ্গরত মায়াকানন বায়ো এগ্রো ডেইরী ফার্মের স্বত্বাধিকারী রিনা আক্তার বলেন,তার খামারে ৪টি গাভী থেকে প্রতিদিন প্রায় ১৬ লিটার পাওয়া যায়। বর্তমানে এক লিটার দুধও কেউ নিতে আসেনা। সমস্ত দুধ ফ্রিজে রাখা হচ্ছে। কিন্তু ফ্রিজের জায়গাও শেষ পর্যায়ে। অথচ গো খাদ্য ও শ্রমিকের মজুরী আগের থেকে বরঞ্চ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ অবস্থা চললে খামার দেউলিয়ার পরিণত হবে। সরকারি প্রণোদনা না পেলে খামার বন্ধ করা ছাড়া কোন উপায় থাকবে না। এতে অনেক শ্রমিক বেকার হয়ে পড়বে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদক কর্মকর্তা ডা.এমরান আলী প্রমানিক বলেন, এ উপজেলার ছোট বড় প্রায় ১১ হাজার ৩শতটি ডেইরী খামার রয়েছে। বর্তমানে লকডাউনের কারণে খামারের দুধ বিক্রি করতে পারছে না খামারীরা। নিঃসন্দেহে এতে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। নিজ নিজ উদ্যোগে এ সময় দুধ সংরক্ষণ করতে হবে। তবে সরকারি সিদ্ধান্ত মোতাবেক দুধ কাঁচামাল হিসেবে পরিবহনে কোন সমস্যা নেই। দই,মিষ্টি এবং অন্যান্য সুশ্বাদু খাবার তৈরি করতে দুধ প্রধান উপাদান। কিন্তু সবকিছু বন্ধ থাকায় এ সংকট তৈরি হয়েছে। গত বছর করোনাকালে এ উপজেলায় প্রায় এক হাজার ছাপান্ন জন খামারীকে প্রণোদনা দেয়া হয়েছিল। সরকার চাইলে আবারও তাদেরকে প্রণোদনা দেয়া হবে।