শিক্ষা মৌলিক অধিকারগুলির মধ্যে একটি। অন্যান্য দ্রুত উন্নয়নশীল দেশগুলির সাথে একই গতি বজায় রাখতে মেয়েদের শিক্ষার দিকে মনোযোগ দেয়া দরকার। বাংলাদেশের গ্রাম এলাকায় মেয়েদের শিক্ষার ব্যাপারে কিছু উদাসীনতা পরিউলক্ষিত হয়। কারণ অভিভাবকরা মনে করে মেয়েরা কেবল শুধু সংসার পরিচালনা করবে। এই যুগে এসব ভাবনা উদ্বেগজনক তাই আমাদের দেশের মেয়েদের শিক্ষিত মানুষ হিসাবে গড়ে তোলা জরুরী।
মেহেরপুর জেলায় জাতীয় বেসরকারী সংস্থা এসকেএস ফাউন্ডেশন ওয়াটার এইড বাংলাদেশের সহযোগগিতায় ওয়াশ ইন ইসস্টিটিউশন নামে একটি প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করছে। বিশেষত স্কুল স্যানিটেশনে এ প্রকল্পটি অন্তর্ভুক্ত ওয়াস সুবিধাগুলি শিক্ষক, বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি, অভিভাবক শিক্ষক এসোসিয়েশন এবং হ্যান্ড ওয়াশিং এর শিক্ষার্থী মাসিক হাইজিন ম্যানেজমেন্ট এর মত স্টেকহোল্ডারদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে সহায়তা প্রদান করছে। তাছাড়া প্রকল্পভুক্ত প্রতিটি বিদ্যালয়ে ওয়াশ ফান্ড জোগাড় করে পরিচালনা এবং রক্ষণাবেক্ষণ সিস্টেম স্থাপন করেছে।
প্রকল্পটি অদ্যাবধি ১২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং মাদরাসাকে সহযোগিতা করছে যেখোনে ৪৯২২ জন ছাত্র ওয়াশ সুবিধাগুলি পেয়েছে এবং প্রায় ৩২১২ জন ছাত্রী তাদের বিদ্যালয়ে মাসিক স্বাস্থ্যকর ব্যবস্থাপনার প্রবেশাধিকার পেয়েছে। বলাবাহুল্য এ প্রকল্প শুরুর আগে শতকরা শূন্যভাগ ছিল মাসিক স্বাস্থ্যকর ব্যবস্থা, ৪৫ ভাগ হ্যান্ড ওয়াশিং সুবিধা এবং ৫৫ ভাগ ছিল নিরাপদ পানীয় জলের ব্যবস্থা। ওয়াটার এইডের এই প্রকল্পে উপজেলা শিক্ষা বিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসনের পরামর্শে নির্বাচিত কিছু বিদ্যালয়ে ওয়াশ সুবিধা দেয়া হয়েছে। উন্নত সুবিধাগুলিতে বালক ও মেয়েদের লিঙ্গ বিবেচনা করে মাসিক স্বাস্থ্য সুবিধা দেয়া হয়েছে। সাথে একটা র্যাম্প সহ একটি পথ, চলমান জলের সাথে হ্যান্ড ওয়াশিং সুবিধাসমূহ, নিরাপদ পানীয় জলের জন্য নলকূপ স্থাপন বা পুণঃনির্মাণ করে পানীয় জলের মান নিশ্চিত করার জন্য আনুপাত ভিত্তিক টয়লেট কক্ষ সুবিধা রয়েছে।
তাছাড়া অভিভাবক শিক্ষক প্রশিক্ষণও দেয়ার ব্যবস্থা করেছে। হ্যান্ড ওয়াশিং এবং ঋতুস্রাবের স্বাস্থ্য ব্যবস্থপনার বিষয়ে শ্রেণীকক্ষ সেশনের মাধ্যমে ওরিয়েন্টেশন মেয়ে শিক্ষার্থীদের দেয়া হয়েছে। স্কুলে যাতে সুবিধাগুলি চলমান থাকে সেজন্য প্রতিটি বিদ্যালয়কে গড়ে ৬০ হাজার টাকা এফডিআর করে দেয়া হয়েছে। এফডিআরের প্রাপ্ত মুনাফা থেকে ওয়াশ ব্লক পরিচালনা করা হবে।
”আমি আমার পিরিয়ডের কারণে স্কুলে প্রতিমাসে ৪ দিন অনুপস্থিত থাকতাম। অপ্রতুল স্কুল সুবিধার কারণে এবং আমারও বিদ্যালয়ের সময়ে সময়কাল পরিচালনর করার জন্য পরিষ্কার কোন ম্যাসেজ নেই। এটা আমার অপূর্ব সুযোগ যে আমরা মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা সহ এই জাতীয় পরিষ্কার স্বাস্থ্যকর টয়লেট সুবিধাগুলি ব্যবহার করতে পারি” কথাগুলি বলছিলেন গাংনী উপজেলার সাহারবাটি এবাদতখানা স্কুলের নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী রেহানা খাতুন। গাংনীর জেটিএস গার্লস স্কুলের শিক্ষিকা সেলিনা খাতুন বলছিলেন এখন একদিন মেয়েদের ও শিক্ষকদের মাসিকের স্বাস্থ্য নিয়ে প্রকাশ্য আলোচনা হয়। জেলা শিক্ষা অফিসার মাহফুজুল হোসেন বলেন জেলা শিক্ষা বিভাগ এই প্রকল্পের মাধ্যমে অন্তর্ভুক্ত স্কুল ওয়াশ সুবিধা গুলি পেয়ে খুশি এবং আমরা অন্যান্য উন্নয়ন তহবিল ব্যবহার করে জেলা জুড়ে পুরো মডেলটির প্রতিলিপি দেয়ার চেষ্টা করবো যাতে আমরা সারা জেলাটি কভার করতে পারি ও মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা যায়।