খোলা চিঠি,
১৮ই মার্চ থেকে দেশের সকল শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা। কিন্তু শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান ব্যতিত সবকিছুই চলমান ছিলো। ভাবলাম, শিক্ষামন্ত্রী আমাদের কথা চিন্তা করেন।
মাঝখানে একমাসের দীর্ঘ লকডাউনের পর সবকিছুই খুলে দেওয়া হলো কিন্তু শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ(কারন শিক্ষার্থীরা বাসা থেকে বের হবেনা, সরকারের সকল সিদ্ধান্ত মান্য করবে)
দীর্ঘ ৫মাস বন্ধের পর সেপ্টেম্বর মাসে আবারও শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ। কিন্তু সবকিছুই আগের মতো স্বাভাবিক। মানুষ স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপন করছে, দেশে করোনা আছে বলে তখন কেউ মনেই করতোনা। একমাত্র শিক্ষার্থীরাই ঘরের কোনে গুটি মেরে বসে থাকতো, তারাই লকডাউন পালন করতো।
ঘোষণা করা হলো নভেম্বর মাসে সকল শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার সম্ভাবনা আছে। যাক, খুশি হলাম। কারন সেশন জট।
পত্রিকাতে দেখলাম, নভেম্বরেও খুলছেনা দেশের শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান। কারন তখন শীতকাল।করোনার দ্বিতীয় পদক্ষেপ। শিক্ষার্থীদেরকে সুরক্ষা দিতে হবে। কিন্তু এদিকে জলপথ, স্থলপথ সবকিছুই স্বাভাবিক। সাথে সিবিচ, সিনেমা হল, পার্ক সবকিছুই আগের মতো চলছে। ড্রাইভার’রা স্বাভাবিকের চেয়েও বেশি ভাড়া নিচ্ছে। প্রতিবাদ করলে, ভাই এতদিন গাড়ি বন্ধ ছিলো, কি করবো বলেন…..
যাক, মেনে নিলাম।
সীমিত পরিসরে খুলতে পারে দেশের সকল শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান, প্রথমে স্কুল কলেজ খুলে দিবে, তারপর বিশ্ববিদ্যালয় ডট ডট ডট। কারন শিক্ষার্থীরা অনিরাপদ।
ফেব্রুয়ারীতে খুলতে পারে শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান। আরেক পত্রিকা, “করোনা দ্বিতীয় পদক্ষেপ, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান খুলে না দেওয়ার ইঙ্গিত”।
সবকিছুই মানলাম। জীবন থেকে না’হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষ’টা হারালাম। second timer হয়ে আবারও সেশন জট। একবছরেও প্রথম সেমিস্টার incomplete। পড়াশোনা নিয়েও টেনশন। হঠাৎ পরীক্ষা নেবার ঘোষণা।
প্রতিমাসের ঘোষণায় শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে, কারণ শিক্ষার্থীরা অনিরাপদ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, ইউজিসি আপনারা যদি শিক্ষার্থীদের কথাই এতই চিন্তা করেন, তাহলে বাকি সবকিছু চলমান কেন?
যে ছেলেটা টিউশন করে সংসার চালায়, আজ শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান বন্ধের কারনে সে কি টাকার অভাবে কাজে বের হবেনা?
সে কি আপনাদের সিদ্ধান্তে বসে থাকবে?
যে মেয়েটা পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চায়, করোনার প্রভাবে শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় পরিবারের চাপে সে মেয়েটা কি নিজের স্বপ্নকে বিয়ে পিড়ীতে বসাবে না?
টিউশন করে যে মেয়েটা সংসার চালাতো, সে মেয়েটা কি টাকার অভাবে আবারও নতুন টিউশনের খুঁজে রাস্তায় বের হবেনা?
শিক্ষার্থীদের কথা যদি এতই ভাবেন, তাহলে বন্ধ করে দিন দেশের সকল অফিস -আদালত, মেইল ফ্যাক্টরী, ইপিজেড, সিনেমা হল, জাতীয়-আন্তর্জাতিক খেলাধুলা, সিবিচ সহ চলমান সবকিছু। তাহলেই বুঝবো, আসলেই আপনারা আমাদের কথা চিন্তা করেন।
মুখের সামনে খাবার এনে মুখে কস্টিপ লাগিয়ে দিয়েছেন। শিক্ষার্থীরা কি বাসা থেকে বের হচ্ছেনা? ওরা কি যানবাহনে ঘুরাফেরা করছেনা? ওদের পরিবারের কোন সদস্য কি রাস্তাঘাটে, হসপিটালে, মার্কেটে কাজ করে সেসব শিক্ষার্থীদের সাথে মিশছে না? খাবারের অভাবে তারা কি রাস্তায় বের হচ্ছেনা? সংসারের হাল ধরতে তারা কি কর্ম করছেনা?
তাহলে কেন শুধু শুধু শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে?
হৃদয় সরকার, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ প্রথম বর্ষ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।