বেত একপ্রকার সপুষ্পক উদ্ভিদ। এটি বাংলাদেশ, ভুটান, কম্বোডিয়া, লাওস, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ভারত, জাভা ও সুমাত্রা অঞ্চলের উদ্ভিদ।বেতগাছের বৈজ্ঞানিক নাম Calamus tenuis, যা Arecaceae পরিবারভুক্ত। লতাপাতা৷ আর সবুজ শ্যামলে ভরপুর ছিল গ্রামবাংলার পথঘাট প্রান্তর আর লোকালয়।বিভিন্ন ঋতুতে নানান রংঙে সাজানো গ্রামবাংলার প্রকৃতি।
আগে গ্রামবাংলায় অনেক দেশী গাছ গাছালী পাওয়া যেত। এখন অনেক গাছ গাছালী বিলুপ্তির পথে। এরকম একটি বিলুপ্ত প্রায় প্রজাতি হচ্ছে বেত গাছ। আগের মত গ্রাম- গঞ্জে বেত গাছ তেমনটা দেখা যায় না। বেত গাছ সাধারণত গ্রাম -গঞ্জে রাস্তার পাশে, বসতভিটার পিছনে, পতিত জমিতে ও বন- জঙ্গলে কিছুটা আর্দ্র জায়গায় জন্মে। খুব অল্প দিনের মধ্যেই বেত গাছ ঘন ঝড়ে পরিণত হয়।চির সবুজ এই উদ্ভিদটি পুনবয়স্ক অবস্থায় ৪৫ থেকে ৫৫ ফুট এবং কখনো কখনো তার চেয়ে বেশি লম্বা হয়ে থাকে।
বেত গাছে ফুল ধরার আগে গাছ থেকে এক ধরনের মিষ্টি ঘ্রাণ আসে। তখন পিঁপড়া, মৌমাছি, ভিমরুল, এই রস খেতে বেত ভিড় জমায়।বেত গাছের ফলকে বেতফল,বেত্তুন, বেথুন,বেথুল,বেত গুটি, বেত্তইন ইত্যাদি নামে ডাকা হয় অঞ্চলে ভেদে। এই উদ্ভিদ ক্রান্তীযু ও উপক্রান্তীয় অঞ্চলে ভেজও জংলা নিচু ভূমিতে ভাল জন্মে বেত গাছ চিকন ও লম্বাটে হয়ে থাকে। বেত গাছ কাঁটাযুক্ত ও শক্ত হয়ে থাকে। বন-জঙ্গলে কাঁটা ও ঝোঁপ আকারে জন্মে। এক গাছের সাথে অন্য গাছ প্রায় সংযুক্ত অবস্থায় থাকে। একটি গাছ ধরে টান দিলে প্রায় গাছ নড়ে ওঠে। চৈত্র মাসে আঙ্গুরের মত থোকায় থোকায় ধরে।
বাংলাদেশের একটি বিলুপ্ত প্রায় ফল।২-৩ দশক আগে ও আমাদের দেশের গ্রাম গঞ্জের বনজঙ্গলে ও নিচু ডোবার ধরে বেত গাছ দেখা যেত।বেত৷ ফল গোলাকার বা একটু লম্বাটে গোলাকার আঁশে ঢাকা ছোট ও কষযুক্ত টক- মিষ্টি ফল। বীজ অত্যন্ত শক্ত হয়ে থাকে। কাঁচা ফল সবুজ বর্ণের পাকলে সবুজাত ঘিয়ে আথবা সাদা রংএর হয়ে থাকে। এর প্রতিটি থোকায় থোকায় ২০০ টি পর্যন্ত ফল হয়।ফল পাকে মার্চ- এপ্রিল মাসে।ইহা অপ্রচলিত ফল হলেও অনেকের কাছে খুবই প্রিয়।এটি বর্তমানে আবাসন সংকটের কারণে বিলুপ্তি হচ্ছে। আগের মত বেতুন বা বেত ফল আর চোখে পড়ে না। বাংলাদেশে প্রায় এক বিপন্ন উদ্ভিদ ও ফল।বেত গাছ এখন দুর্লভ বস্তুতে পরিণত হয়েছে। শুকনো বেত দিয়ে বিভিন্ন হস্তশিল্প জাতীয় জিনিসপত্র তৈরি করা হয়।
বেত দিয়ে তৈরি হস্তশিল্পগুলে হলো,চেয়ার, টেবিল, মোড়া,ডালা, কুলা,চাঙ্গড়ি,চুষি, হাতপাখা, চাইলোন,টোকা,গোলা,ডোলা, টোপা, চাঁচ,ধামা,বই রাখার তাক,সোফা,দোলনা ও ফুলদানিসহ নানা কাজে এর কদর রয়েছে। বেত গাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের আসবাবপত্র তৈরি করা হয় এগুলো দৃষ্টিনন্দন,টেকসই, মূলবান, নান্দনিক এবং প্রাকৃতিক বেত একটি মূল্যবান টেকসই ও সকল শ্রেনীর দ্রাব্য। জীব বৈচিত্র্য রক্ষাথে এটি অধিক পরিমানে রোপণ ও রক্ষণাবেক্ষণে যন্তবান হওয়া বাংলাদেশে মাটির গুনে এখানে হাজারো তরুলতার সমাহার। নদীবাহিত পালি বৃষ্টিপাত আমাদের দেশকে দিয়েছে এক উর্বর ভূমি। দেশে রয়েছে ৫ বছরের বেশি প্রজাতির বন্যা গাছপালা।
আমাদের দেশের কবিরাজ আদিবাসীরা ও গ্রামবাংলার লোকজন এখনো নানা ঔষধ এবং ফলের জন্য দেশীয় গাছ পালার ওপরই নির্ভরশীল।সকল কবিই দেশের প্রকৃতি ও গাছ পালার জায়গা করছেন।বেতফল ছোটবেলায় এক অতি কাঙ্ক্ষিত ফল।বেত ফল পরিপক্ব হলেই বেত ঝাড়ে হানা দিত গ্রামের দূরন্ত ছেলে ও মেয়েরা দল।কাঁটার আঘাত সহ্য করে বেত ফল নিয়ে আসতো।ফলের বাইরের খোসা ফেলে যখন রসালো অংশটা হাতে আসতো।তখন কিশোর ও কিশোরীরা সবার সাথে মহা আনন্দো ভাগাভাগি করে খেত।গ্রামবাংলায় বেতের কচি পাতা তরকারি হিসাবে খাওয়া হয়।বেত ফল লবণ ও মরিচ দিয়ে ভর্তা করে খেতে ও খুব মজার। বর্তমান প্রজান্মের ছেলে ও মেয়েদের অনেকেই বেত সম্পর্কে জানেন না এবং বেত চিনেন না