বাসক একটি ভারত উপমহাদেশীয় ভেষজ উদ্ভিদ। এ উদ্ভিদটির বৈজ্ঞানিক নামঃ Justicla adnatodal, ভারত উপমহাদেশের প্রায় সর্বত্র এটি জন্মে।হিন্দিতে এক বলা হয় আডুসা বানসা অথবা ভাসিকা তবে সংস্কৃত নামের ভিত্তিতে এটির ব্যবসায়িক নাম বাসক আর্দ্র সমতলভূমিতে এটি বেশি জন্মে।লোকলয়ের কাছেই জন্মে বেশি।হালকা হলুদে রংয়ের ডালপালাযুক্ত ১থেকে ২ মিটার উঁচু গাছ, ঋতুভেদে সর্ব্বদাই প্রায় সবুজ থাকে।বল্লমাকারের পাতা বেশ বড়।ফুল ঘন, ছোট সপাইকের ওপর ফোটে।
স্পাইকের বৃন্ত পাতার চেয়ে ছোট। স্পাইকের ওপর পাতার আকারে উপপত্র থাকে যার গায়ে ঘন এবং মোটা শিরা থাকে।ফুলের দল কোরেল্লা বা পত্রলাবর্ত সাদা বর্ণ। তার ওপর বেগুনি দাগ থাকে। ফল সুপারি আকৃতি, বীজে ভর্তি।তাজা অথবা শুকনো পাতা ওষুধের কাজে লাগে। বাসকের পাতায় ভার্সিনিন নামের ক্ষারীয় পদার্থ এবং তেল থাকে। শ্বাসনালীর লালাপ্রন্থিকে সক্রিয় করে বলে বাসক শ্লেষ্নাশক হিসেবে প্রসিদ্ধ।বাসক পাতার নির্যাস, রস বা সিরাপ শ্লেষ্নাতরল করে নির্গমে সুবিধা করে দেয় বলে সর্দি, কাশি এবং শ্বাশনালীর প্রদাহমূলক ব্যাধিতে বিশেষ উপকারি।তবে অধিক মাত্রায় খেলে বমি হয়,অন্তত বমির ভাব না নাসিয়া হয় অস্বিস্তি হয়।
পানির জীবাণু মুক্ত করতে হাত পা ফুলে পা ফুলে গেলে চামড়ার রং উজ্জ্বল করতে এ গাছের উপকারিতা অনেক। বাসকের পাতা সবুজ খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং পাতা থেকে হলদে রং পাওয়া যায়। বাসক পাতায় এমন কিছু ক্ষারীয় পদার্থ আছে যার পোকামাকড় ধরে না বলে ফল প্যাকিং এবং সংক্ষণ করার কাজে ব্যবহৃত হয়। পাতায় কিছু দুর্গন্ধ আছে বলে পশুরা মুখ দেয় না। সেই কারণে চাষ আবাদের জন্য জমি উদ্ধারের কাছে বাসকের পাতা উপকারি।
বাসক উপকারিতাঃ
# অম্লপিত্ত রোগঃ এ রোগে দীর্ঘদিন ভুগতে থাকলে আসে অম্লশূর, হৃদরোগ ব্লাডপ্রেসার এমনকি ক্যান্সার পযর্ন্ত।এই অম্লপিত্তকে বন্ধ করতে হলে ৭ থেকে ৮ গ্রাম বাসক ছাল ৪ কাপ আন্দাজ জলে সিদ্ধ করে ১ কাপ থাকতে নামিয়ে ছেকে নিয়ে সেই জলটা দুই তিন বারে প্রতিদিন খেলে বিশেষ উপকার হয়।
#ক্রিমিতেঃ বয়সানুপাতে মাত্রা মতো উপরিউক্ত পদ্ধতিতে বাসক ছালের ক্বাথ করে খাওয়ালে ক্রিমি ও মরে যায়।
# রক্তক্ষ্মতিতেঃ রক্তপিত্তজলিত যে কোনো জায়গা থেকে রক্তস্রাবে বাসক ছাল ও পাতা(১০ থেকে ১১ গ্রাম) একসঙ্গে সিদ্ধ করে সেই ক্বাথের সঙ্গে চিনি বা মিছরির সিরাপ মিশিয়ে খাওয়ালে ও রক্তসাব বন্ধ হয়।
# শ্বাসরোগঃ নতুন বা পুরাতন যাই হোক না,উপরিউক্ত পদ্ধতিতে ক্বাথ প্রস্তুত করে সিরাপের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে শ্বাসের উপদ্রবের ও উপশম হয়। অনেক ক্ষেত্রে শ্বাস রোগের সঙ্গে শরীরে একজিমা ও থাকে, কারণ ঔপসর্গিক রক্তদৃষ্টির দ্বারা এ দুটি রোগ এককালেই দেখা দেয় এটার দ্বারা সে দু’ ক্ষেত্রের প্রভাব ও কমে যায়।
# হাঁপের টানেঃ বাসকের শুকনা পাতার চুরুট বানিয়ে বিড়ি করে অথবা কলকেতে সেজে ধোঁয়া টানলে ও বেশ উপশম হয়।
# শরীরের দুর্গন্ধ দূর করতেঃ যাদের গায়ের স্হান বিশেষের ঘামে দুর্গন্ধ, সে ক্ষেত্রে বাসক পাতার রস লাগালে ওটা হয় না।
# গায়ের রং ফর্সা করতেঃ কে না চায় ফর্সা হতে এই বাসক পাতার বসে দুই- এক টিপ শঙ্খ ভাষ্ন মিশিয়ে গোসলের দুই – তিন ঘন্টা পৃর্বে গায়ে লাগাতে হয় এর দ্বারা শ্যমবর্ণ ও উজ্জল শ্যমবর্ণ হয়।
# অর্শ্বের বলির যন্ত্রণাঃ থেঁতো বাসক পাতা অল্প গরম করে পুটুলি বেধে মলদ্বারে সেক দিলে যন্ত্রণা ও ফোলা দুইরেরই উপশম।
# বসন্তের সংক্রমনেঃ পাড়াজুড়ে বসন্ত, এর হাত থেকে বাঁচতে গেলে বাসক পাতা সিদ্ধ জল খাওয়ার জলের সঙ্গে মিশিয়ে প্রত্যহ খেতে হয় তাহলে আর সংক্রমিত হওয়ার ভয় থাকে না।আয়র্বেদমতে এর দ্রব্যশক্তিটি রোগ হওয়ার কারনটাকে ও প্রতিহন করে।
# জীবণু নাশকঃ এক কলসী জলে ৩ থেকে ৪ টি বাসক কুচি করে কেটে ৩ থেকে ৪ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখলে সেই জল জীবাণু যুক্ত হয়। শুধু তাই বা কেন,পুকুরের পোকা মাকড় মারতে ও সেকালে বাসক পাতা জলে ফেলা হতো।
# টিউমার হয়েছে কি না বুঝতেঃ চরক সংহিতার যুগে বাসক পাতার রস খাইয়ে নির্ণয় করা হতো।