দেখতে দেখতে দেশের স্বাধীনতা পাড়ি দিয়েছে ৫০টি বছর। একটু একটু করে পথ চলতে চলতে আজ বাংলাদেশ জায়গা করে নিয়েছে উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হিসেবে। এই পঞ্চাশ বছরের যাত্রায় সফলতা যেমন আছে,ব্যর্থতাও আছে বিস্তরই। তবে সবকিছু ছাপিয়ে আজকের এই দিনটিকে ঘিরে রয়েছে দুঃখ ও আনন্দের মিশ্র এক অনুভূতি। অসংখ্য মানুষের তাজা প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী আজ। ১৯৭১ সালের এই দিনে প্রথম প্রহরের আগেই স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তারই কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পুরোদ্যমে এগিয়ে চলছে দেশ। এবারের স্বাধীনতা দিবসটি একটু বেশিই স্মরণীয় হয়ে থাকবে একটি বিশেষ কারণে। একই সাথে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মবার্ষিকী। তাই, এবারের স্বাধীনতা দিবস নিয়ে বাড়তি আগ্রহ কাজ করছে সবার মনে।
বর্তমানে, বিশ্ব বাংলাদেশকে একটি সক্ষম রাষ্ট্র হিসেবেই দেখছে। খুব দ্রুত স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উঠে আসার পাশাপাশি প্রবৃদ্ধিতে পিছনে ফেলেছে ভারত,পাকিস্তানের মতো রাষ্ট্রকে। বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ অভিহিত হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার ‘তেজি ষাঁড়’ হিসেবে। অথচ এই বাংলাদেশকেই একসময় ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ নামে অভিহিত হতে হয়েছিলো। অনেক কটাক্ষ, অপমান, বাঁধা, অপপ্রচারকে দূরে সরিয়ে আজকে বাংলাদেশ একটি সক্ষম রাষ্ট্রের কাতারে নিজেকে নিয়ে যেতে সমর্থ হয়েছে।
বদলেছে অর্থনীতি, বেড়েছে মানুষের আয়। এমনটাই জানা যাচ্ছে বিবিএস ও বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে।
বর্তমানে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ২০৬৪ ডলার। জিডিপির পরিমাণ প্রায় ২৭ লাখ ৯৫ হাজার কোটি টাকা। দারিদ্র্যের হার ২০.৫ শতাংশ।
১৯৭৩-৭৪ অর্থবছরে মাথাপিছু আয় ছিলো ১২৯ ডলার। জিডিপির পরিমাণ ছিলো প্রায় ৭ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকার মতো। দারিদ্র্যের হার ৭০ শতাংশ।
অর্থাৎ, ৫০ বছরে মাথাপিছু আয় বেড়েছে প্রায় ১৬ গুণ। জিডিপির পরিমাণ বেড়েছে ৩৬৯ গুণ(২০১৯-২০ অর্থবছর অনুযায়ী)। দারিদ্রতার হার কমেছে শতকরা ৫০ ভাগ।
করোনাকালীন সময়েও দেশের অর্থনীতিতে নামে নি বড় ধরনের কোন ধ্বস। এ যেন শক্তিশালী অর্থনৈতিক ব্যবস্থারই একটি পরিচায়ক।
বাংলাদেশের এ অগ্রগতি সন্তোষজনক। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নত দেশে পরিণত হতে যে মাপকাঠিগুলো পূর্ণ করতে হতো তার সবকটিই পূর্ণ করেছে ২০১৮ সালে। স্বপ্নের পদ্মা সেতু তৈরি হয়েছে,মেট্রোরেলের কাজও অনেকদূর এগিয়ে গেছে,মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে তৈরি হয়েছে, দেশের প্রতিটি সেক্টরে ডিজিটালাইজেশনের ছোয়াঁ লেগেছে। মোটকথা, দেশ এখন এগিয়ে চলছে পূরোদ্যমে।
শিক্ষাক্ষেত্রেও দেশ এগিয়ে গেছে। এই সাফল্য এখন অনেকটাই দৃশ্যমান। বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে, প্রাথমিকে ছাত্রীদের শিক্ষার হার প্রায় ৫১ শতাংশ যা মাধ্যমিকে ৫৪ শতাংশ। একই ধারা অব্যাহত রয়েছে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। প্রতি বছরই বাড়ছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। যদিও ঝরে পড়ার হার কমলেও এখনও তা উদ্বেগজনক।
শিক্ষার ক্ষেত্রে বাংলাদেশে খুব জরুরী ছিলো একটি কার্যকর শিক্ষানীতি। ২০১০ সালে একটি পূর্ণাঙ্গ শিক্ষানীতি প্রস্তাবিত হয়ে পাস হলেও বাস্তবায়ন একটু মন্থর গতিতেই এগিয়ে চলছে। শিক্ষানীতির মূল দুটি উদ্দেশ্য, শিক্ষাক্ষেত্রে বিদ্যমান ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে থাকা বৈষম্যের হ্রাস এবং সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করা। সরকার প্রাণপনে চেষ্টা করছে এ লক্ষ্যে কাজ করার।
একসময় প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা ছিলো শুধু শৌখিন লোক বা উচ্চবিত্ত পরিবারের শিশুদের জন্য। তবে, বর্তমানে এমনটি আর থাকছে না। এখন প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা মূলধারায় অন্তর্ভূক্ত হয়ে গেছে। দেশে পাঁচ থেকে ছ বছর বয়সী শিশুদের জন্য এক বছর মেয়াদি প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালু করা হয়েছে।
তবে পুঁথিগত বিদ্যা বাদেও বর্তমানে কারিগরি শিক্ষার প্রয়োজন অত্যন্ত ব্যাপকহারে উপলব্ধি হচ্ছে। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষাকে প্রাধান্য না দিলে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা অনেক কঠিন হবে। আমাদের দেশে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার প্রতি অনাগ্রহ লক্ষ্য করা যায়। যদিও আশা করা হচ্ছে, সামনে এসব ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।
স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনে বাঁধা হিসেবে নিয়ামক হিসেবে করোনা কাজ করছে। সুবর্ণ জয়ন্তীকে ঘিরে অনেক উদ্দীপনা, জল্পনা কল্পনা কাজ করলেও তা পুরো আড়ম্বরে পালন করা সম্ভব হচ্ছে না করোনার কারণেই। গত বছরের পুরো ছ টি মাস লকডাউন কাটানোর পর ফের নতুন করে এ বছর আবার হানা দিয়েছে করোনা। তারপরও এ দেশের মানুষ আশাবাদী। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। প্রবৃদ্ধি ধরে রাখুক। যেতে হবে অনেকদূর পথ।
সাঈদ ইবরাহীম রিফাত, শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।