পাট ও বস্ত্র এবং জাহাজ নির্মাণ শিল্পে বিশ্বব্যাংককে বিনিয়োগের আহবান জানিয়েছেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন।
পাট ও পাটজাত পণ্যকে অত্যন্ত পরিবেশবান্ধব উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, পাট বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সোনালি আশঁ পাট একটা সময় ছিল বাংলাদেশের বৈদেশিক মূদ্রা অর্জনের প্রধান খাত। বিশ্বব্যাপী প্লাস্টিক ও পলিথিনের ব্যবহার বৃদ্ধির ফলে এ ধারায় কিছুটা ছেদ পড়লেও সম্প্রতি জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশ্বব্যাপী পরিবেশ বিপর্যয় রোধে পাট ও পাটজাত পণ্যের ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে।
পলিথিন ও প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে পরিবেশ বান্ধব সোনালী ব্যাগ ও জুট জিও টেক্সটাইল বহুমুখী পাটপণ্য ইত্যাদি উদ্ভাবনের ফলে দেশে-বিদেশে পাটের ব্যাপক চাহিদার সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে উৎপাদিত পাটের ৭০ ভাগ বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সম্ভাবনাময় একটি খাত উল্লেখ করে তিনি বিশ্বব্যাংককে বাংলাদেশের পাট ও পাটজাত শিল্পে বিনিয়োগ করার আহবান জানান। তিনি আজ বুধবার সকালে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধি দলের সাথে বৈঠককালে এ আহ্বান জানান।
উপদেষ্টা বলেন, আমাদের ২৫টি সরকারি পাটকল ও ২৫টি বস্ত্রকল উৎপাদন কার্যক্রম কয়েকবছর পূর্বেই বন্ধ হয়েছে। বর্তমানে মিলগুলোতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সহায়তায় বেসরকারী ব্যবস্থাপনায় পরিচালনার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আমাদের শিল্প কারখানাগুলো কৌশলগতভাবে যোগাযোগের জন্য অত্যন্ত সুবিধাজনক স্থানে অবস্থিত। সে কারণে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীরা অত্যন্ত সহজে এখানে বিনিয়োগ করতে পারে। এছাড়াও বাংলাদেশের বস্ত্র ও পোশাক শিল্প ক্রমশ উন্নতি করছে। বিশ্ব বিখ্যাত মসলিন কাপড়ের কথা তিনি উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশের মসলিন কাপড় একসময় জগৎ বিখ্যাত ছিলো। সরকার মসলিনের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার জন্য ইতোমধ্যে একটি প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত করেছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে মসলিন কাপড় তৈরীর সুতা তৈরীর প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে। শীঘ্রই বাণিজ্যিক উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে।
এ সময় উপদেষ্টা দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে বহুমুখী পাট পণ্য ও বস্ত্র পণ্য উৎপাদনের আরো বেশি বিনিয়োগ ও গবেষণার উপর গুরুত্বারোপ করেন। বৈঠকে নৌ পরিবহন উপদেষ্টা জানান, জাহাজ নির্মাণ বাংলাদেশের একটি সম্ভাবনাময় এবং ক্রমবিকাশমান শিল্প। স্থানীয়ভাবে তৈরি জাহাজ রপ্তানি করার মাধ্যমেই মুলতঃ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জাহাজ নির্মাণ একটি প্রধান প্রতিশ্রুতিশীল শিল্পে পরিণত হয়েছে।
বাংলাদেশ ও ভুটানে নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদৌলায়ে সেক অন্তবর্তী কালীন সরকারকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের বৃহত্তম উন্নয়ন সহযোগী। বিশ্বব্যাংক দীর্ঘ সময় ধরে বাংলাদেশের জনগণের জন্য কাজ করছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে বিশ্বব্যাংক অঙ্গীকারাবদ্ধ। দুটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণ করায় আবদৌলায়ে সেক উপদেষ্টাকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানান। তিনি জানান, পাট, বস্ত্র, শিপিংসহ সকল সেক্টরেই নতুন নতুন প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক আগামীতে বাংলাদেশের সাথে একযোগে কাজ করতে আগ্রহী।
বৈঠকে বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতায় পরিচালিত বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হয় এবং উপদেষ্টা মহোদয় চলমান প্রকল্প সমূহকে যথাসময়ে সমাপ্ত করার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা প্রদান করেন।
বাংলাদেশ ও ভুটানে নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদৌলায়ে সেক এর নেতৃত্বে বৈঠকে বিশ্বব্যাংকের ছয় সদস্যের প্রতিনিধি দল অংশগ্রহণ করে। এ সময়ে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ আব্দুর রউফ, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব সঞ্জয় কুমার বণিকসহ মন্ত্রণালয় ও দপ্তর সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।