নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি:
নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার ভালাইন গ্রাম এখন পাখা গ্রাম হিসেবে পরিচিত। পাখা তৈরি করে শতাধিক দারিদ্র পরিবারের সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরেছে। স্বল্প সুদে ঋণ এবং সরকারি সুযোগ সুবিধা পেলে আরও এগিয়ে যাবেন বলে মনে করছেন পাখা তৈরির সাথে যুক্তরা।
নওগাঁর জেলার মহাদেবপুর সদর উপজেলার উত্তরগ্রাম ইউনিয়নের ভালাইন গ্রাম। প্রায় ৩০ বছর থেকে এই গ্রামে তাল পাখা বানানোর কাজ চলছে। গ্রামীণ নারীরা তালপাখা তৈরিকে এখন পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। সময়ের পরিক্রমায় গ্রামটি এখন ‘পাখা গ্রাম’ হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছে। তালপাখা তৈরি করে অনেকের সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরেছে । পুরুষরা তালপাতা নিয়ে এনে শুকানোর পর পরিষ্কার করে দেয়। এরপর গৃহবধূরা পাখাকে সুই-সুতা দিয়ে সেলাই ও সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ করে। একজন নারী প্রতিদিন ৮০-১০০ পিচ পর্যন্ত পাখা তৈরি করতে পারে। ১০০টি তালপাখায় সুই-সুতা দিয়ে সেলাই ও সৌন্দর্য বর্ধনের কাজের বিনিময়ে ৭০টাকা করে প্রদান করা হয়। বর্তমানে এ গ্রামের ৭৫টি পরিবারের শতাধিক নারী তালপাখা তৈরির সাথে যুক্ত। তবে কাজের তুলনায় মজুরি খুবই কম বলে জানান এসব গ্রামীণ নারী কারিগররা। প্রতি বছর প্রায় ৫ লাখ তালপাখা এ গ্রাম থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ হয়ে থাকে।
বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ, আশ্বিন, কার্তিক ও চৈত্রসহ কয়েকটি মাসে প্রচণ্ড তাপদাহ এবং ভ্যাপসা গরম পড়ে। এসময় তালপাতা দিয়ে তৈরি হাত পাখার চাহিদা বেড়ে যায়। পুরুষরা পাখা তৈরির উপকরণ তাল পাতা বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করেন। এরপর রোদে শুকিয়ে পানিতে ভেজানোর পর তালপাতা পরিস্কার করে পাখার রুপ দেয়া হয়। এরপরের কাজ করেন গৃহবধুরা। পড়াশুনার পাশাপাশি শিক্ষার্থীরাও পাখা তৈরি করে বাবা-মাকে সহযোগিতা করে থাকে। এসব পাখা চলে যায় রাজশাহী, ঢাকা, চট্রগাম, বরিশাল, সিলেট, রংপুরসহ কয়েকটি জেলায়। তবে পাখা তৈরিতে যে পরিশ্রম ও খরচ হয় সে তুলনায় দাম কম বলে জানান স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।
তারা জানান, ‘প্রতিটি তাল পাতা, বাঁশের কাঠি, সুতা,মোম, কারিগর খরচসহ প্রতি পিচ পাখায় খরচ পড়ে ৮টাকা। এসব পাখা পাইকারী ব্যবসায়ীরা ১০-১২টাকা পিচ হিসেবে কিনে নেয়। বিভিন্ন এনজিও থেকে উচ্চ সুদে ঋণ নিতে গিয়ে লাভের একটি অংশ চলে যায় সেখানে। স্বল্প সুদে ঋণ ও সরকারি সহযোগিতার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (নওগাঁ) এর উপ-ব্যবস্থাপক মো. মেহেদী হাসান বলেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখার পাশাপাশি নিজেদের জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন করে চলেছেন পাখা তৈরির কারিগর ও ব্যবসায়ীরা। ক্ষুদ্র ও কুঠির শিল্পর সাথে যারা যুক্ত তাদের বিভিন্নভাবে সহায়তা করা হয়ে থাকে। পাখা তৈরির কারিগর ও ব্যবসায়ীরা যাতে আরও ব্যাহত পরিসরে তাদের কাজ চালিয়ে যেতে পারে সে বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করার আশ্বাস প্রদান করেন জেলায় দায়িত্বরত বিসিকের এই কর্মকর্তা।