এস আহমেদ ফাহিম/নোবিপ্রবি প্রতিনিধি: নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের(নোবিপ্রবি) একদল গবেষক মাছ থেকে তৈরী করেছেন উচ্চ পুষ্টিগুণ সম্পন্ন মাছের পাউডার। খাদ্য নিরাপত্তার সকল মানদন্ড বজায় রেখে এই পাউডারটি নোবিপ্রবির ফিশারিজ এন্ড মেরিন সায়েন্স বিভাগের ল্যাবে তৈরী করা হয়েছে।
পরবর্তিতে পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে বহুল ব্যবহৃত তরকারী যেমন- ডাল, আলু, কচু শাক, লাল শাক, বেগুন, সীম, লাউ, চাল কুমড়া, ফুল কপি, মুলা, কচুরমুখী, সীমের বিচি ও ভর্তা হিসেবে ফিশ পাউডার রান্না জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
আজ শুক্রবার (১৯ ফেব্রুয়ারী) লক্ষীপুরের চরআলেকজান্ডারে দিন ব্যাপি মাঠ দিবস ও প্রযুক্তি প্রদর্শনী সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে সুবিধাভোগী ৪০ টি পরিবারের সদস্যরা ও স্থানীয়রা অংশগ্রহন করেন।
নোবিপ্রবি বিজ্ঞান অনুষদের ডীন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হানিফের সভাপতিত্বে উক্ত সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন নোবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ দিদার-উল-আলম, প্রধান আলোচক ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল এর পরিচালক ড. মোঃ মনিরুল ইসলাম, বিশেষ অতিথি ছিলেন নোবিপ্রবি কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ফারুক উদ্দিন।
আরো উপস্থিত ছিলেন ফার্মেসি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সেলিম হোসেন, ফিসারিজ এন্ড মেরিন সায়েন্স বিভাগের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ড. মফিজুর রহমান,মাসুমা আক্তার, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা, নোয়াখালী ও জনাব মেজবাহ উদ্দিন, মেয়র, রামগতি পৌরসভা,নোবিপ্রবির বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যানবৃন্দ, সাংবাদিকবৃন্দ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধি বৃন্দ।
নোবিপ্রবি উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ দিদার-উল-আলম বলেন, নবীন বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষনার সাফল্য অত্যন্ত প্রশংসনীয়। তিনি উক্ত গবেষণা কার্যক্রমকে আরো বেগবান ও জনগনের কাছে পৌছে দেয়ার উপর গুরুত্বারোপ করেন। এছাড়া তিনি ফিস পাউডারের স্বাদের পাশাপাশি এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় কতটুকু ভুমিকা রাখবে সেটি নিয়েও গবেষণা করার আহবান জানান।
প্রধান আলোচক ড. মনিরুল ইসলাম বলেন, ফিশ পাউডার ব্যবহারের যে জনপ্রিয়তা আজকে আমরা লক্ষ্য করলাম তা আমাকে আশাবাদী করে তুলেছে। আগামী দিনে প্রজম্মের পুষ্টি চাহিদা রোধ ও উন্নত জাতি গঠনে মাছের তৈরী পুষ্টি পাউডার অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে বিশ্বাস করি। তিনি সবাইকে বলেন ৪০ বছর পর্যন্ত গরু খাবেন তারপর গরু যা খায় তা খাবেন এবং সাথে ফিস পাউডার খাবেন।
বক্তারা মাছের পাউডারের স্বতঃস্ফুর্ত ব্যবহারের ভুয়সী প্রশংসা করেন। সুবিধাভোগীদের এক জন কিশোরী সোনিয়া আক্তার বলেন, আগে মাছের মাথা ও লেজ কে খাবে তা নিয়ে মনকষাকষি হতো কিন্তু পাউডারের খাবার অন্য খাবার থেকে সুস্বাদু ও সকলে সমান ভাগ পায়। আরেকজন কিশোরীর মা রিনা বেগম বলেন, মাছের পুষ্টি পাউডার দিয়া রান্না খাবার আমাদের নতুন নতুন আইটেম যুক্ত করার সুযোগ করে দিয়েছে।
গবেষক দলের সদস্য ড. শহীদ সরোয়ার ও শুভ ভৌমিক বলেন, ফিশ পাউডার নিরাপদ পুষ্টি গুনে অন্যান্য মাছের থেকে অনেক উন্নত। বিশ্বাস করি এটি কিশোরী এবং অন্যান্য সুবিধা বঞ্চিতদের সংকট সময়ে উপকারে আসবে।প্রকল্পের গবেষণা সহযোগী আবদুল আজিজ ও সাইদুজ্জামান সাব্বির জানান, আমরা অংশগ্রহনকারী পরিবারের সমূহের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা লক্ষ্য করেছি যা সত্যিই আশা ব্যঞ্জক।
প্রধান গবেষক ড. আবদুল্লাহ-আল মামুন ফিশ পাউডার স্থায়িত্বশীল ব্যবহারের আশাবাদী এবং সংশ্লিষ্ট শিল্প উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহন প্রত্যাশা করেন। অনুষ্ঠানে ৪০ টি পরিবারের নারী ও কিশোরীরা ফিশ পাউডার দিয়া তৈরী বিভিন্ন ধরনের খাবার ও খাবার তৈরী প্রযুক্তি প্রদর্শন করেন।
বাংলাদেশের তিনটি অঞ্চলে লক্ষীপুরের চর আলেকজান্ডার, নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি ও খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় ১২০ টি পরিবারের প্রায় ৬ শতাধিক সদস্যদের মধ্যে সাপ্তাহিক জনপ্রতি ৪০ গ্রাম হারে গত ১৬ সপ্তাহ ধরে এই পাউডার বিতরণ করা হয়। নারীর ক্ষমতায়নের অংশ হিসেবে অংশগ্রহনকারীর গৃহের মহিলারা বিশেষ প্রনোদনা পেয়েছেন। গবেষণার প্রয়োজনে ২৪০ পরিবারের কিশোরী মেয়েদের রক্তের নমুনায় আয়রণ, জিংক, ভিটামিন-এ, ক্যালসিয়ামের উপস্থিতি নির্নয় করা হয়েছে এবং ১৮ সপ্তাহ পর আগামী মার্চে পুনঃনমুনায়ন করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট গবেষকরা জানিয়েছেন।