কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধিঃ
কুষ্টিয়া শহরের এখন এক আতঙ্কের নাম কিছু দিন ধরেই একের পর এক শহরে নিজেদের দলের মতাদর্শ প্রতিষ্ঠা ও দাপট দেখাতে মরিয়া হয়ে উঠছে তারা। তারা নানা অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে।
রাজধানীর মত আবারও কুষ্টিয়াতেও মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে গুড বয়েজ (জিবি) কিশোর গ্যাং। নিজেদের অবস্থান জানান দিতে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সহিংস হয়ে উঠছে তারা।
বিভিন্ন সময় নানা অপরাধে যুক্ত থাকার কারণে কুষ্টিয়াতে এর আগেও বেশ কয়েকজন কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যকে আটক করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তারপরও কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না বিভিন্ন নামীয় কিশোর গ্যাংদের। তাছাড়া এইসব কিশোর গ্যাংদের যে বা যারা মদদ দিয়ে যাচ্ছেন তাদেরকেও কোনোভাবেই আইনের আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি জানান, সরকার দলীয় রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকার কারণে কিশোর গ্যাংয়ের মূল হোতারা সবসময় ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জুয়েল, আপন, সাজিদ, ইয়াসিন, সালমান, রাজিব, সাজিদ – কুষ্টিয়া সাদ্দাম বাজারের আশে-পাশে অজ্ঞাত আরো ৭/৮ জন মিলে প্রায় ৪০/৫০ জনের “গুড বয়েজ” নামে একটি কিশোর গ্যাং পরিচালনা করে আসছে।
জিবি কিশোর গ্যাং কর্তৃক হামলার শিকার সম্রাট ইতিমধ্যে কুষ্টিয়া মডেল থানায় একটি অভিযোগপত্র দায়ের করেছেন। অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেছেন, উপরে উল্লেখিত গুড বয়েজ এর সদস্যরা বিভিন্ন অপকর্ম করায় আমি বিগত ২মাস পূর্বে গ্যাং থেকে বের হয়ে আসি। এরপর থেকেই গ্যাং সদস্যরা আমাকে পুনরায় গ্যাং এ যুক্ত হতে চাপ প্রয়োগ করে। আমি তাদের গ্যাং এ যুক্ত হতে না চাইলে তারা আমাকে বিভিন্ন হুমকি ধামকি দেন। এরই জের ধরে গত বৃহস্পতিবার (২৫শে মার্চ) আনুমানিক বিকাল ৫:৪৫ ঘটিকার সময় কুষ্টিয়া ডিসি কোর্ট হইতে হাসপাতাল মোড়ে যাওয়ার সময় পথের মাঝে কলকাকলী স্কুল সংলগ্ন স্থানে জুয়েল পেছন থেকে অতর্কিতভাবে আমার গেঞ্জি টেনে ধরে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তখন আমার সাথে থাকা বন্ধুরা জুয়েলকে বাধা দিলে ক্ষিপ্ত হয়ে চড় থাপ্পর, কিল ঘুষি মেরে মাটিতে ফেলে দেয় এবং জুয়েল তার সহযোগীদেরকে ডেকে আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। অতঃপর আমাদের জোর চিৎকারে তারা খুন জখম এর হুমকি দেয় এবং ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।
কুষ্টিয়ার বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় নিজেদের গ্যাং এর নাম বা সাংকেতিক চিহ্ন লিখে অস্তিত্ব জানান দেয় এরা। শুধু দেয়াল লিখন নয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও সক্রিয় এরা।
মূলত স্কুল-কলেজের কিছু শিক্ষার্থী আড্ডা দিতে দিতে গড়ে উঠে এ ধরনের গ্যাং। পাড়া-মহল্লায় দল বেঁধে ঘুরে বেড়ানো, স্কুল-কলেজের সামনে আড্ডা দেয়া, মোটরসাইকেল নিয়ে মহড়া, মেয়েদের উত্ত্যক্ত করা, দল বেঁধে মাদক সেবন, এক স্টাইলে চুল কাটাসহ বিভিন্ন অপকর্মের সাথে জড়িত হচ্ছে এই সব ধরনের গ্যাংগুলো। এমনকি তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে খুনোখুনিতে জড়িয়ে পড়ছে তারা। কিশোরদের এমন আচরণে উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা।
অনুসন্ধান বলছে, রাজনৈতিক কিছু নেতা নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য কিশোর গ্যাং গড়ে তুলছে এবং মদদ দিচ্ছে এসব কিশোরদের। নামে-বেনামে গড়ে ওঠা এইসব কিশোর গ্যাং। এদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক যোগান দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে । সামাজিক অবক্ষয় ও সুশাসন না থাকায় কিশোররা বেপরোয়া হয়ে উঠছে বলে মনে করেন সমাজের বিশেষজ্ঞরা। দেশের তরুণ সমাজ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করতে রাষ্ট্র ও অভিভাবকদের আরো দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহ্বান জনসাধারণের।