কিন্তু কালের বিবর্তনে সভ্যতার নতুন দিগন্তে তালপাতার পাখা আজ বিলুপ্তির পথে। তালপাতা পাখার কদর সবচেয়ে বেশি দেখা যেত বিশ শতকের আগে।গ্রামের হাটবাজারে, নবর্বষের মেলায় প্রতিটি দোকানে তখন থরে থরে সাজানো থাকতো তালপাতার পাখা। অনেকেই তখন হাত পাখা কিনে মেলা থেকে হাটতে হাটতে বাড়ি ফিরত। তখানো এতোটা আধুনিকতার ছোয়া লাগেনি গ্রামগঞ্জে।ইলেকট্রিসিটির আগমন হয়নি সর্বত্র।
বাড়িতে মেহমান আসলে আজকের মতো সুইচ টিপে এয়ারকন্ডিশন ছেড়ে দেওয়ার ও সুযোগ ছিলনা।গ্রামগঞ্জে তখন তালপাতার পাখাই ছিল শীর্ষে। একসময় তালপাতার পাখা বেচে সংসার চলত।কিন্তু এখন পাখার ব্যবহার কমে যাওয়ার বাধ্য হয়েছেন পেশা বদলাতে।তালপাতার পাখার বিক্রির দিনগুলো কথা স্বরণ করা গ্রাম মানুষ বলেন,আমার বাপ ছিল গরীব, ছোট থেকে আমি বাপের সাথে তালপাতা দিয়ে বিছুন(পাখা) বানাইতাম।
তার পর গঞ্জের হাঁটে নিয়া মেলায় নিয়া বেচতাম । অনেক মানুষ কিনত তহল এই বিছন। বিছুলের বাতাস ঠান্ডা লাগে , মজাও লাগে। বেঁচা হইত অনেক। আস্তে আস্তে আমগো সংসারটা খাড়াইয়া( অভাব -অনাটনে ভরে ওঠে) যায়।কারেন্ট আইবার পর আর বিছুন বেঁচতে পারি না আগের মতন পরে এই কাম ছাইড়া দেই। এখন অন্য কাম করি।
ইলেট্রনিকের যুগে এসে তাপপাতা পাখা বিলুপ্তির পথে হলেও তালপাতার যুগের কথা স্বরণ রাখবে আরো কয়েক প্রজন্ম বাংলার গ্রাম-গঞ্জের মানুষের কাছে চিরচেনা তালপাতার পাখা এখন ব্যবহার তুলনামূলক কম।প্রযুক্তির হাত ধরে বাজারে এখন ইলেকট্রনিক পাখা,এসি,এয়ার কুলারের দাপট।
আর এদের সঙ্গে অসম প্রতিযোগিতার ক্রমশই পিছিয়ে পড়ছে বদলার ঐতিহ্য তালপাতার হাতপাখা। হাত পাখা ছাড়াও আরেক ধরনের পাখা ছিল।এই পাখা কাপড়ের তৈরী। মাথায় উপর সিলিংয়ে ঝুলানো থাকত মোটা কাপড়। এর সঙ্গে যুক্ত থাকত দড়ি।দূরে বসে একজন দড়ি ধরে টানত।দড়ির টানে লালসালু যুক্ত মোটা কাপড় এদিক ওদিক নড়াচড়া করতো।
এতে সারা ঘরময় বাতাস খেলে যেত।এক সময় অফিস আদালতে মাথায় উপর সিলিংয়ে ঝুলানো এ ধরনের পাখা টেনে বাতাস করার রেওয়াজ ছিল।তখন এ কাজের জন্য সরকারি কর্মচারী ও নিযুক্ত ছিল। ঐতিহ্য হাজার বছরের / আধুনিকতা সাথে পাল্লা দিয়ে পেরে উঠতে না পারলেও মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছে প পাখা। যা বৈদ্যুতিক পাখা কিংবা এয়ারকন্ডিশনে যুগের আগেকার অনেকের ভালোবাসা ও আস্হার নাম।