ওরা দু’জন
শাহ্ মোঃ আশরাফুল ইসলাম
প্রত্যুষে সূর্যের আলোমাখা মুখে পৃথিবী এখনো রাঙেনি।গোধূলির শেষ প্রহর চলমান।সিনএনজি অটোরিকশা চালনকারীরা বের হতে হয়ত আরো ঘণ্টাখানিক লাগবে! ওরা দু’জনের পদারোহন এখনই শুরু। অবশ্য শুরু হওয়ার জন্য তো শেষ হওয়া প্রয়োজন, তাঁদের হাঁটা কোনোদিন শেষ হয় কিনা তাও কৌতুহলের বিষয়।ঘনঘটা শীতে মাথা রাখার খানিকটা জায়গা পায় কিনা তাই বা কে বলতে পারে? যে শহরে এক দেয়ালের কঙ্ক্রিট আরেক দেয়ালের ইটের উপর হিংসে করে সেখানে এদের জায়গা পাওয়াটা অতীব দুষ্কর। একজন জামাবিহীন ছেড়া প্যান্ট পরিহিত দশ কিংবা বারো বছরের বালক গালে কালো দাগ, মলিন চেহারা নিয়ে এক গলি থেকে অন্য গলি ধরেছে। ওর নাম তনু।অপরজন মিনি, একটা ময়লা ছেড়া জামা-পয়াজামা পরা যেন ক’দিন যাবৎ এই জামা মিনির শরীর ত্যাগের সুযোগ পায়নি তার কোনো ইয়ত্তা নেই।সেও তনুর মতো গলি অন্তরে যাচ্ছে। গতকাল দুপুর থেকে দু’জনই অভুক্ত। খাবার সংগ্রহের চেষ্টার যে ত্রুটি রেখেছে তাও না। কিন্তু কে দেবে এই নর্দমার কীটকে খাবার!এই শহর তো আভিজাত্য আর অহংকারের এক দশতলা বিল্ডিং যা থেকে অভুক্তের হৃদয়ের ক্রন্দন কর্ণে বাজা রীতিমতো পাপ । সেই ক্রন্দনেরও ভোজনহীনতায় ভোগে দশতলায় চিৎকার উড়ানোর শক্তি নেই।দোকানে গেলে তাড়িয়ে দেয়। বাকশক্তিশালী প্রাণীর দ্বারে ডাক দিলে ওপাশ থেকে একটি বাক্যবিনিময় ‘এখন হবে না’ তে তাঁদের কথোপকথনের সমাপ্তি হয়।নিত্যদিনের মতো আজও তাঁরা রাস্তার পাশে একটা চায়ের টংয়ের সামনে দাঁড়াল।ততক্ষনে সূর্য উঠল। সূর্যের তাপের আগ্রাসনও তাঁদের রেহাই দিচ্ছে না! রাস্তাও খানিকটা লোকরণ্য হতে শুরু করল।
তনু: চাচা, একটা পরোটা দিবেন?কাল থেকে কিছু খাইনি।
দোকানি:তোরা তো জোয়ান!কোনো কাজ করিস না।সারাদিন পথে পথে ঘুরা আর মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে নেশা করাই তোদের কাজ।তোদের খাবার দেবো কেন?
মিনি:একটা সিঙ্গারা দিন।
দোকানি:যা ভাগ এখান থেকে!
ওরা বিতারিত হয়ে যাওয়ার পূর্বে এই নশ্বর পৃথিবীর দিকে এক দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিক্ষেপ করে ভাবলো যে মানুষ তো অবিনশ্বর নয়!
সময় আর নিয়তির ঘেরাকলে পিষ্ট হতে হতে পথ চলতে চলতে একটি বাসার দ্বারে এসে দাঁড়ালো। ওরা অতীত অভিজ্ঞতা থেকে বুঝতে পারে যে কী হবে তবুও ভাবে চেষ্টা না করে আফসোস করার থেকে চেষ্টা করে মরাও ভালো।
মিনি:আম্মা, একটু ভাত দিবেন?
নিয়মের খেলাফ না করে কাজের বুয়াই বলে দিলো এখন হবে না!
তনুঃআম্মা,একটা গেঞ্জি দেবেন?
বুয়া:না, নাই।
কিয়ৎক্ষণ স্বচ্ছ নীল আসমানের দিকে তাকিয়ে ভাবলো;
নর্দমার কীটও যখন পাঁচতলায় উঠার সুযোগ পায় তখন তাঁরও আভিজাত্যের রেশ জাগে!
আবার হাঁটা শুরু করল!তাঁদের থেকে কিছু টা দূরে এক লোক ময়লার সাথে ঘরে রাখা উচ্ছিষ্ট ফেলছে।তাঁরা একটু দ্রুত হাঁটার চেষ্টা করল, ভাবলো যদি বলে তবে হয়ত তাঁদেরকে খানিকটা দেবে। কিন্তু অদৃষ্টের পরিহাস তাঁরা যেতে যেতেই লোকটি খাবার ফেলে চলে যাচ্ছে। তাঁরা খাবারের কাছে গেল।এর আগেই দুটো কুকুর এসে এই নর্দমা রাজত্বের রাজা ঘোষণা করে নিজেকে। তাঁরা কাছে যেতেই কুকুরগুলো তাঁদের খাবারের অংশে অধিকার দিল তাঁদেরকেও।
শিক্ষার্থী,শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়,সিলেট