মোসফিকা আক্তারঃ গরুর গাড়ির ইতিহাস সুপ্রাচীন। নব্যপ্রস্তর যুগের সময় থেকেই মানুষ এই যানটি ব্যবহার করে আসছে। খ্রিস্টের জন্মের ৩১০০ বছর আগে ব্রেন্জ যুগে ও গরুর গাড়ির অস্তিত্ব ছিল। গরুর গাড়ি হল দুই চাকা বিশিষ্ট গরু বা বলদে টানা একপ্রকার যান বিশেষ।
এই যানে সাধারণত একটি মাত্র অক্ষের সাথে চাকা দুটি যুক্ত থাকে। সামনের দিকে একটি জোয়ালের সাথে দুটি গরু বা বলদ জুতে এই গাড়ি টানা হয়। সাধারণত চালক বসেন গাড়ির সামনের দিকে। তাঁর পিছনে বসেন যাত্রীরা।বিভিন্ন মালপত্র বহন করা হয় তার ও পিছনের দিকে।বিভিন্ন কৃষিজাত দ্রব্য ও ফসল বহনের কাজে। গরুর গাড়ির প্রচলন যথেষ্টই ব্যাপক গ্রাম বাংলায় ঐতিহ্যগতভাবে গরুর গাড়ি কিছুদিন আগে পর্যন্ত ও যাতায়াত ও মালবহনের কাজে প্রভূত পরিমানে ব্যবহৃত হত।
তবে বর্তমানে নানাধরণের মোটচালিত যানের আধিক্যর কারণে অপেক্ষাকৃত ধীর গতির এই ব্যবহার অপেক্ষাকৃত ধীর গতির এই ব্যবহার অনেক কমে এসেছে। গ্রামের পথে গরুর গাড়ি বউ চলেছে শ্বশুর বাড়ি এ কবিতার লাইনটি এক সময় বাস্তব ছিল। কিন্তু এমন দৃশ্য এখন অবাস্তব ব্যাপার।গ্রাম – গঞ্জে এখন এমন গরুর গাড়ির দেখা পাওয়া দুষ্কর। জমি থেকে ধান আনা,জমিতে জৈব সার নিয়ে যাওয়া সহ মালমাল পরিবহনের কাজে এখানো গাড়িগুলো অপরিহার্য।
একটি গুরুত্বপূর্ণ যান। একসময় গরু মহিষের গাড়িই ছিল এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়ার ক্ষেত্রে ভরসা। বরযাত্রী থেকে শুরু করে কনে আনা চলতো এগুলো দিয়ে। জমি থেকে ধান আনা, জমিতে জৈব সার নিয়ে যাওয়া, একন গরু গাড়ি প্রায় দেখা যায় না বলেই চলে। গরু গাড়ি কাঠের চাকা ও বাঁশ দিয়ে তৈরি করা হতো। এক সময় গ্রাম বাংলার নতুন ধান কাটার নবান্নের উৎসবের সময় গরুর গাড়ি প্রতিযোগিতা হত।
গ্রামের মানুষের কাছে নির্মল আনন্দের উপকরণ ছিল এই খেলা। কার গাড়ি আগে যাবে প্রতিযোগিতা হত খোলা মাঠে। এই খেলাটি ও হারিয়ে গেছে আজ কালের আবর্তে।মানুষ এক সময় যা কল্পনা করেনি তাই এখন পাচ্ছে হাতের কাছেই। ইট পাথরের মত মানুষ ও হয়ে পড়েছে যান্ত্রিক, মানুষ তার নিজস্ব ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলছে। তারই ধারাবাহিকতার এক সময়ের ব্যাপক জনপ্রিয় গ্রাম বাংলা ও বাঙ্গালির ঐতিহ্য এবং যোগাযোগ ও মালমাল বহনের প্রধান বাহন গরুর গাড়ি।
গরুর গাড়ির স্হান দখল করে নিয়েছে ভ্যান,বাস,অটোরিকশা, নছিমন,করিমন,ভটভটি ইত্যাদি। কৃষকসহ সর্ব শ্রেনির মানুষ এখন যাতায়াত ও পরিবহনের জন্য এ সকল যান্ত্রিক পরিবহনে উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। এ কারণে শহরের ছেলে মেয়েরা দূরের কথা বর্তমানে গ্রামের অনেক ছেলে মেয়েরা ও গরু গাড়ি শব্দটির সাথে পরিচিতি নয়। বেশিরভাগ রাস্তা ঘাট পাকা হওয়ার কারণে গরুর গাড়ি আর চালানো সম্ভব হয় না। তবে গ্রামের কিছু দূর্গম এলাকায় রাস্তা ঘাট ভালো না থাকায় যাতায়াত বা পন্য পরিবহনের জন্য গরুর গাড়ি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
তবে আগামী দিনে গ্রামাঞ্চালের রাস্তা ঘাটের উন্নয়ন হলে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী এই গরুর গাড়িরগুলে আগামী প্রজন্ম হয়তো আর দেখতে পাবে না। এমন এক সময় আসবে যখন আর কোন গরুর গাড়ি অবশিষ্ট থাকবে না গরুর গাড়ি শুধুই ইতিহাস হয়ে থাকবে। আগেকার দিনে মানুষেরা বিয়ে শাদি থেকে শুরু করে বিভিন্ন অনুষ্ঠান এক স্থান থেকে অন্য স্থান যাতায়াত করতো গরুর গাড়ির মাধ্যমে।
পহেলা বৈশাখ সহ সকল অনুষ্ঠানে পরিবার পরিজন নিয়ে এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রাম মেলা দেখতে যাওয়া গরুর গাড়িতে বসে গাড়িওলার ভাটিয়ালি গান শোন সে যেন এক অন্যরকম অনুভূতি। কিন্তু বর্তমানে গ্রাম বাংলা থেকে হারিয়ে যাওয়ার এই সব অনুভূতি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বর্তমান যুগের ছেলেমেয়েরা। আধুনিকতার প্রবাহে ইতিহাস ঐতিহ্যের অনেক কিছু আমরা হারাচ্ছি। আমাদের জীবন থেকে হারাচ্ছে এ রকম নানা ঐতিহ্যের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম হয়তো গল্প শুনেই জানবে গরু গাড়ি কথা।