জবি প্রতিনিধিঃ উদ্বোধনের দশ মাস পেরিয়ে গেলেও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) একমাত্র হল ‘বেগম শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছাত্রী হল’-এর নীতিমালা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। দু’জন প্রভোস্ট এখন পর্যন্ত এই হল নিয়ে কাজ করলেও চূড়ান্ত করতে পারেননি কোনো নীতিমালা। এমনকি হল হস্তান্তরের প্রক্রিয়া ও সম্পন্ন করেনি শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর (ইইডি)।
জানা যায়, গতবছর ২০ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান ছাত্রী হলের উদ্বোধন করেন। এর মধ্য দিয়েই অনাবাসিক তকমা ঘুচে বিশ্ববিদ্যালয়টির। তবে হলের নীতিমালা কিংবা ছাত্রীদের সিট বণ্টন কার্যক্রমের কোনো অগ্রগতিও চোখে পড়েনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা যায়, নীতিমালা তৈরির জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গঠন করে দেয়া কমিটির কাজ শেষ। তবে লকডাউনের জন্য নীতিমালা নিয়ে উপাচার্যের সাথে বসা সম্ভব হচ্ছে না। তাছাড়া হলের নির্মাণ কাজও শেষ।
এদিকে এখনও নীতিমালা তৈরি না হওয়া এবং সিট বণ্টনেরও পদক্ষেপ না নেওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর হলে উঠা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মনে তৈরি হয়েছে শঙ্কা।
বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছাত্রী হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. শামীমা বেগম এ বিষয়ে বলেন, “নীতিমালা তৈরির জন্য যে কমিটি করা হয়েছে, কমিটির নীতিমালার কাজ শেষ। কিন্তু আমরা লকডাউনের জন্য উপাচার্যের সাথে বসতে পারিনি। দশ তারিখের পর লকডাউন শেষ হলে আমরা বসবো। আর নীতিমালা অনুমোদন হয় সিন্ডিকেটে, এই লকডাউনের জন্য সিন্ডিকেটও পিছিয়ে গিয়েছে।”
হল প্রভোস্ট আরো বলেন, হলের আসবাবপত্রের জন্যও একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কোন আসবাবপত্র নষ্ট হয়ে থাকলে সেগুলো পরিবর্তন করে দেওয়া হবে।
ছাত্রীহলের কাজের অগ্রগতির ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মোঃ হেলাল উদ্দিন পাটোয়ারী (পিইঞ্জ) বলেন, কন্ট্রাক্টর ও ইইডি হলটি হস্তান্তর করার জন্য লোক পাঠিয়েছিলো। আমরা তখন এভাবে হলটি নিতে চাইনি। আমি তাদের বলি যে, আপনাদের লোক দেন আর আমি ইঞ্জিনিয়ার দেই। আমরা যৌথ টিম মিলে আগে ভিজিট করি যে, সব কাজ ঠিক মতো হয়েছে কি না। তারপর হল পরিদর্শন করে যেসব ত্রুটি রয়েছে সেগুলোর তালিকা করে সংশোধনের জন্য বলা হয়। এরপর তারা কাজ ধরেছে এবং অনেক গুলো কাজ তারা করেছেও। কিন্তু এখনও শত ভাগ হয়নি, কিছু কাজ বাকি আছে। কতটুকু করেছে তা আসলে লকডাউনের কারণে দেখা সম্ভব হয়নি। তবে এমনিতে হলের কাজ শেষ। লিফট চারটিই চালু হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, আসবাবপত্রের ব্যাপারে একটু ঝামেলা হয়েছিলো। কিছু ত্রুটি পরিলক্ষিত হয়েছিলো। তখন আবার যারা আসবাবপত্র সরবারহ করেছে বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফআইডিসি) তাদের চিঠি দেয়া হয়। পরে তাদের আবার লোক এসেছিলো। তারা এটা মেরামত করলে বুঝে নেয়া হবে।
হল হস্তান্তর সহ সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইমদাদুল হক বলেন, হল এখনও হস্তান্তর হয়নি, কেননা অনেক ফার্নিচার তারা ঠিক মতো দেয় নি। আমি একটি বড় কমিটি করে দিয়েছি। প্রভোস্ট, চিফ ইঞ্জিনিয়ার সহ বেশ কয়েকজন শিক্ষকও রয়েছেন কমিটিতে। কমিটি সব বুঝে নিবে, যেনো পরে বলতে না পারে যে এইটা খারাপ, ওইটা খারাপ। এখন একদম যেগুলো নষ্ট, সেগুলো ক্লিয়ার করে বুঝে নিবে। স্টুডেন্ট উঠার আগেই সব বুঝে নিবেন প্রভোস্ট, যেনো দ্বিতীয় বার আর ঝামেলা না হয়।
ছাত্রী তুলার ব্যাপারে উপাচার্য বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় না খুললে তো আর শিক্ষার্থীরা হলে উঠতে পারবে না। বিশ্ববিদ্যালয় খুললে শিক্ষার্থী তুলার প্রশ্ন। আগে আমরা হল বুঝে নেই, বুঝে নেয়ার পর সিট বণ্টন সহ আরো আনুষাঙ্গিক বিষয় গুলো দেখবো।
উল্লেখ্য যে, প্রায় ১০ বছর পর নির্মাণ কাজ শেষে উদ্বোধন হলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে এখনও হলে উঠতে পারছেন না শিক্ষার্থীরা।