fbpx
সংবাদ শিরোনাম
মোস্তাফিজুর রহমান দৈনিক খবরের কণ্ঠের জেলা প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের শহীদ ও আহতদের স্বরণে স্বরণসভা ওয়ালিউল্লাহ ও মুকাদ্দাসের সন্ধানে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণসহ ১১০ দাবি গাংনীতে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা ও পরামর্শ ক্যাম্প অনুষ্ঠিত  আইনজীবী হত্যার বিচারের দাবিতে মাভাবিপ্রবিতে বিক্ষোভ মিছিল বাংলাদেশে ভারতীয় চ্যানেল সম্প্রচার বন্ধ করা হোক মিরসরাইয়ে জাগ্রত প্রতিভার কার্যকরী পরিষদের দায়িত্ব হস্তান্তর ও গ্রহণ  জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কেমিক্যাল ব্যবসায়ীদের প্রতি শিল্প উপদেষ্টার আহ্বান কোন অবস্থায় মিথ্যা মামলা নেয়া যাবে না- স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বিএসসি’র ৬টি জাহাজ ক্রয় প্রকল্পের ঋণ পরিশোধের জন্য ৪৭৫.২৫ কোটি টাকার চেক হস্তান্তর

উত্তরবঙ্গে শিক্ষার অগ্রদূত মাদার বখ্শ’র মৃত্যুবার্ষিকী আজ

                                           
মারুফ হাসান / দৈনিক দেশান্তর
Update : শনিবার, ২০ জানুয়ারি, ২০২৪

উত্তরবঙ্গের শিক্ষার অগ্রদূত মাদার বখ্শ’র ৫৭তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৯০৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি তৎকালিন রাজশাহী জেলার নাটোর মহাকুমার (বর্তমানে জেলা) সিংড়া থানার স্থাপনদিঘি নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। মাদার বখ্শ ছিলেন রাজশাহীর গণমানুষের পরম শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব।

দেশনন্দিত সমাজসেবক ও উত্তরাঞ্চলে শিক্ষা বিস্তারের অন্যতম অগ্রদূত। এই কীর্তিমান মানুষটি ১৯৬৭ সালের ২০ জানুয়ারি পরলোকগমন করেন।

মাদার বখ্শ ১৯২২ সালে সিংড়ার চৌগ্রাম উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয় হতে প্রথম শ্রেণিতে ম্যাট্রিক (এসএসসি) পাস করেন। ১৯২৪ সালে রাজশাহী কলেজ হতে আইএ (এইচএসসি), এবং ১৯২৬ সালে বিএ ডিগ্রি অর্জন করেন।

তিনি কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতে ১৯২৮ সালে ইতিহাসে এমএ এবং কোলকাতা রিপন কলেজ হতে ১৯২৯ সালে বিএল ডিগ্রি পান।

বৃহত্তর রাজশাহীর নওগাঁ পোরসার হাই মাদরাসায় এবং মুর্শিদাবাদের সালার উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতাও করেন তিনি। মাত্র দু’বছরের শিক্ষকতা পেশা ছেড়ে তিনি ১৯৩৪ সালে রাজশাহী জজ কোর্টে আইন পেশায় যোগ দেন। এই পেশায় তিনি প্রভুত জনপ্রিয়তা লাভ করেন। দরিদ্র বিচারপ্রার্থীদেরকে তিনি স্বল্প পয়সায় এবং কখনো বিনা পয়সায় আইনি সহায়তা দিতেন।

‘শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড’ এই ব্রত্যকে সামনে নিয়ে মাদার বখ্শ উত্তরবঙ্গের অবহেলিত-বঞ্চিত পিছিয়ে পড়া মানুষগুলোর মাঝে শিক্ষার আলো জ্বালিয়েছেন। ১৯৫৩ সালের ফেব্রুয়ারি ৬ ভূবন মোহন পার্কে আরও একটি জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে মাদার বখ্শ সরকারকে হুশিয়ার করে বলেছিলেন, ‘যদি রাজশাহীতে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা না হয়, তবে উত্তরবঙ্গকে একটি স্বতন্ত্র প্রদেশ দাবি করতে আমরা বাধ্য হব।’

মাদার বখ্শ’র এই বক্তব্যে সাড়া পড়ে দেশের সুধী মহলে৷ টনক নড়ে সরকারেরও৷ অবশেষে ১৯৫৩ সালের ৩১ মার্চ প্রাদেশিক আইনসভায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা আইন পাশ হয়। তাঁর একান্ত প্রচেষ্টা আর অধিকার আদায়ে দৃঢ়তার কারণে ওই বছরের ৬ জুলাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় যাত্রা শুরু করে। কেবল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় নয় তিনি রাজশাহীতে বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও গড়ে তোলেন।

রাজশাহী কোর্ট একাডেমি (১৯৫৪ সালে সোবহানিয়া হাই স্কুল নামে প্রতিষ্ঠিত হয়) তিনিই প্রতিষ্ঠা করেন। লক্ষ্মীপুর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় মাদার বখশ এর প্রচেষ্টাতেই প্রতিষ্ঠা লাভ করে ১৯৬০ সালে। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর রাজশাহী মুসলিম হাইস্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়। ওই স্কুল প্রতিষ্ঠায় তাঁর অগ্রণী ভূমিকা ছিল। ১৯৬৭ সালে প্রতিষ্ঠিত রাজশাহী হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজও স্থাপিত হয় তার অবদানে।

শিক্ষানুরাগী মাদার বখশ রাজশাহীতে একটি মেডিক্যাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার প্রস্তাব করেছিলেন। তারই ফলশ্রুতিতে ১৯৪৯ সালে সর্বপ্রথম চিকিৎসা সেবাদানের নিমিত্তে একটি প্রাইভেট মেডিকেল স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয় রাজশাহীতে। এই মেডিকেল স্কুলটি সরকার ১৯৫৫ সালে গ্রহণ করে। এরপর ১৯৫৮ সালে মেডিকেল স্কুলটি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে রূপান্তরিত হয়।

শিক্ষাবিস্তারের পাশাপাশি তিনি সমাজসেবায়ও অনন্য অবদান রেখে গেছেন। মাদার বখশ ১৯৫০ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ১৯৫৪ সালের ২২ জুন পর্যন্ত রাজশাহী পৌরসভার নির্বাচিত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর আমলেই তৎকালীন রাজশাহী পৌর এলাকায় ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয়। তিনি তাঁর সুষম উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে জনগণের বিপুল ভালোবাসা অর্জন করেন। তিনিই রাজশাহী নিউ মার্কেটের রুপকার।

১৯৫১ সালে সর্বপ্রথম রাজশাহী শহরে রিকশা চালু করেন এবং তিনিই প্রথম সুইপারদের রেশন প্রদানসহ বাসস্থানের ব্যবস্থা করেন। শাহ মখদুম ইন্সটিটিউট, মুসলিম গোরস্থান কমিটি, রিফ্যুজিদের বাসস্থান ব্যবস্থা, পদ্মার বাঁধ নির্মাণ ইত্যাদি উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে মাদার বখশ’র অবদান জড়িয়ে আছে।

১৯৪৬ সালে তিনি আত্রাই, বাগমারা ও মান্দা থানা নির্বাচনী এলাকা থেকে বঙ্গীয় আইন সভার সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পরেও ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত তিনি তদানীন্তন পূর্ববঙ্গ আইন সভার সদস্য ছিলেন। ওই সময়ে সরকার উত্তরাঞ্চলের মানুষের প্রতি চরম বৈষম্য ও বিমাতাসুলভ আচরণ করতে থাকে। এরই প্রতিবাদে মাদার বখ্শ প্রতিবাদী ভূমিকা পালন করেন।

সততা, নিষ্ঠা, প্রতিভা আর মেধা দিয়ে তৎকালীন সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দূরবস্থা দূরীকরণের লক্ষ্য নিয়ে তিনি মুসলিম লীগে যোগ দেন। অন্যায়-অবিচারের প্রতি সর্বদা সোচ্চার এই মহামানব বিশিষ্ট রাজনীতিক সমাজসেবক হাজী লাল মোহাম্মদ সরদার এবং আইনবিদ খান বাহাদুর এমাদউদ্দিনের মৃত্যুর পর তাদের শূন্যস্থান পূরণ করতে সক্ষম হন। নিজের যোগ্যতা ও দক্ষতা বলে তিনি মুসলিম লীগের একজন অন্যতম নীতিনির্ধারক হন।

নিরলস শ্রম, সাধনা ও অধ্যাবসায়ের মাধ্যমে তিনি জাতীয় জীবনে এক গুরুত্বপূর্ণ অসামান্য অবদান রেখে গেছেন। ভাষা আন্দোলনের সময়েও মাদার বখ্শ’র ব্যাপক ভূমিকা ছিল।

তিনি তৎকালীন ক্ষমতাসীন সরকারের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছিলেন, ‘যদি বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেওয়া না হয়, তবে আমি আইন পরিষদের সদস্যপদ থেকে পদত্যাগ করব।’

ভাষা আন্দোলনে ঢাকায় রফিক, সালাম, জব্বার নিহতের পর মাদার বখ্শ এক সমাবেশে বলেছিলেন, ‘খুনি নূরুল আমিন সরকারের আইন পরিষদের একজন সদস্য হিসেবে আপনাদের সামনে দাঁড়াতে লজ্জায় আমার মাথা কাটা যাচ্ছে।’

তখন মুসলিম লীগের প্রভাবশালী নেতা হয়েও মুসলিম লীগ সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের সুরে কথা বলা এবং ঘাতক নূরুল আমিনের প্রতি ঘৃণা প্রদর্শন করে সাহসিকতা ও সততা দেখিয়েছিলেন। আর এই কারণে মাত্র কয়েক দিন পর রাজশাহীর সংগ্রামী ছাত্রনেতাদের সঙ্গে তিনিও কারারুদ্ধ হন।

মহৎ ও জনহিতৈষী প্রাণের অধিকারী মাদার বখ্শ চির জাগরুক হয়ে থাকবেন রাজশাহী অঞ্চলের মানুষের কাছে।

শিক্ষা বিস্তার ও জনকল্যাণের জনক হিসেবে পরিচিত মাদার বখ্শ এই অঞ্চলের মানুষকে আলোকিত করে গেছেন তাঁর আজীবন সাধনা আর ত্যাগের মাধ্যমে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিজ্ঞাপন

Raw Food BD Mustard Oil

আপনার মতামত লিখুন :

Comments are closed.

More News Of This Category
Raw Food BD Mustard Oil